জুলুম একটি মারাত্মক অপরাধ ও কবিরা গুনাহ। যার পরিণাম জাহান্নাম। সারা পৃথিবীর সবখানে আজ জুলুমের ভয়ংকর প্রতিযোগিতা চলছে। চলছে মানবাধিকার লঙ্ঘন। যারা অন্যের ওপর অন্যায়-অবিচার করে তাদের পতন অনিবার্য। ইতিহাস তাই বলে এবং পবিত্র কোরআনে জুলুমকারীদের আল্লাহ কীভাবে ধ্বংস করেছেন তা বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কখনো মনে কর না যে জালিমরা যা করছে সে বিষয়ে মহান আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন, সেদিন সব চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। ভীতবিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছোটাছুটি করবে, আতঙ্কে তাদের নিজেদের দিকেও ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে ভয়ানক উদাস।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত ৪২, ৪৩)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর যারা জুলুম করে তারা অচিরেই জানতে পারবে তাদের ফিরে যাওয়ার জায়গা কোনটি যেখানে তারা ফিরে যাবে’ (সুরা আশ শোয়ারা, আয়াত ২২৭)। জুলুমের শাস্তি মানুষ দুনিয়াতেই পেয়ে যায়। রসুল (সা.) বলেন, মহান আল্লাহতায়ালা জালিম ও আত্মীয়তার ছিন্নকারীদের দুনিয়াতেই শাস্তি দেন, আখিরাতের শাস্তি তো রয়েছেই।’ (আবু দাউদ)। হাদিসে কুদুসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, আমি আমার নিজের জন্য জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের ওপর জুলুম কর না।’ (মুসলিম শরিফ)। জালিমদের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি জালিমদের জন্য এক আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার পরিধি তাদের পুরোপুরিই পরিবেষ্টন করে রাখবে। যখন তারা পানির জন্য ফরিয়াদ করতে থাকবে, তখন এমন এক গলিত ধাতুর মতো পানীয় তাদের দেওয়া হবে, যা তাদের সমগ্র মুখমন্ডল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে। কি ভীষণ সে পানীয়। আর কি নিকৃষ্ট হবে তাদের আশ্রয়ের স্থলটি।’ (সুরা আল কাহাফ, আয়াত ২৯)। জুলুম পরিবারেও হতে পারে। আমাদের সমাজে অনেক স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি নানাভাবে জুলুম করে থাকে। যেমন স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয় না। অবহেলা করে এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করে থাকেন। যা গর্হিত অপরাধ ও জুলুমের নামান্তর। আমাদের সমাজে এখন বড় জুলুম হচ্ছে সিন্ডিকেট করে খাদ্যসামগ্রীর মূল্য বাড়ানো। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই কাজ করে নিজেরা হয়তো ফায়দা লুটছে কিন্তু তারা যে জনগণের ওপর কি পরিমাণ জুলুম করছে তা বলাই বাহুল্য। এ ছাড়াও সমাজে কত মানুষ যে কত রকমে জুলুমের শিকার হচ্ছে তা অগণিত। কেউ মৃত্যুভয়ে জুলুমের প্রতিবাদ করারও সাহস রাখে না। বিশেষ করে কোনো শাসক যখন তার জনগণের ওপর জুলুমের নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়ে কিংবা দমনপীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায় তাদের জন্য রয়েছে পরকালে কঠিন আজাব আর শাস্তি। তারা কেয়ামতের ময়দানে কঠিন বিচারের সম্মুখীন হবেন। কেননা আল্লাহর সৃষ্টির ওপর জুলুম করার অধিকার কারও নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড় ন্যায় বিচারক। তিনি জুলুম পছন্দ করেন না। রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। বলা হয়ে থাকে আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘কেউ যদি কারও ওপর জুলুম করে এক বিঘত জমিন অন্যায়ভাবে দখল করে, কেয়ামতের ময়দানে সাত তবক জমি তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, ৩১৯৮)। ফেরাউনের মতো দাম্ভিক ও অহংকারী শাসককে আল্লাহ ডুবিয়ে মেরেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘সে এবং তার বাহিনীর লোকেরা অন্যায়ভাবেই আল্লাহর জমিনে অহংকার করল, ওরা ধরে নিয়েছিল, যে ওদের কখনো আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। অতঃপর আমি তাকে এবং তার গোটা বাহিনীকে পাকড়াও করলাম এরপর তাদের আমি সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। অতএব হে নবী, তুমি দেখ জালেমদের কী ভয়াবহ পরিণাম হয়।’ (সুরা আল কাসাস, আয়াত ৩৯, ৪০)
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার