বাংলাদেশে চলমান বন্যা-দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আলেম সম্প্রদায়, সাধারণ জনগণ, গরিব-ধনী নির্বিশেষে সর্বাত্মক সহযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। জনৈক শিশু ওমরাহ হজ পালনের জন্য মাটির ব্যাংকে জমানো টাকাগুলো ত্রাণের জন্য উৎসর্গ করেছে। আরেক ছাত্রী তার কানের দুল খুলে ত্রাণের জন্য প্রদান করেছে। তাদের এই নিষ্ঠা ও কষ্টের দান সঠিক প্রাপকের হাতে যেন পৌঁছে, মহান প্রভুর কাছে তাদের পাওনা যেন কোনো কারণে বিনষ্ট না হয়, তা আমাদের কামনা। কোনো কোনো স্থানে মানুষের তিলে তিলে জমানো ত্রাণ নষ্ট হচ্ছে অথবা অপচয় হচ্ছে এমন বিভিন্ন খবর প্রকাশ পাচ্ছে। আমার ধারণা মতে, সব ধরনের ভালো কাজে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা থাকতেই পারে। তবে এবার সরকারি ত্রাণ তহবিলে দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ হয়েছে। সেনাবাহিনী এবং ওলামায়ে কেরাম অনেক সতর্কতা, বিচক্ষণতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছেন। সেনাবাহিনীর কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতিটা যথেষ্ট সহজ ও নিরাপদ। ইতিপূর্বে ত্রাণ বিতরণকালে আমরা অনেক ক্ষেত্রে বিব্রত হয়েছি। এবার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে আমরা যথাযথ লক্ষ্যে পৌঁছার সুযোগ পেয়েছি। আমার সহকর্মীরা স্বস্তি পেয়েছে। আমার বন্ধুমহলও এমন অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। বিচ্ছিন্ন খবরে দেখলাম, ত্রাণের জন্য ৫০ হাজার টাকা ওঠানোর পর একজন আসা-যাওয়ায় ব্যয় করলেন ৩০ হাজার টাকা। আবার কেউ কেউ এই সুযোগে হেলিকপ্টার নিয়ে ভ্রমণ করছেন। এসব অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, তা আজ সব মহলে কৌতূহলের বিষয় হয়েছে। ইসলামে সব ধরনের অপচয় নিষিদ্ধ। আমরা হয়তো খুবই নগণ্য মনে করে কিছু অপচয় করি, কিন্তু ইসলাম তা-ও সমর্থন করে না। প্রবহমান নদীতে অজু করা অবস্থায় সামান্য পানি অপচয় করা থেকে মহানবী (সা.) নিষেধ করেছেন। (আহমদ, সহিহ) মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের পবিত্র কোরআনে অসংখ্য স্থানে অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘হে বনি আদম! প্রত্যেক নামাজের সময় তোমরা সুন্দর সাজসজ্জা পরিধান কর, আর আহার কর ও পান কর, অপচয় করিও না, নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আল আরাফ-৩১)
বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতিতে অনেক ত্রাণ নষ্ট হওয়ার বিষয়টি কিছু খবরে উঠে আসছে। আসলে দান-অনুদান নষ্ট হওয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। যথাযথ প্রাপককে না দেওয়া, অপচয় করা এবং দান করার প্রতিদান না পাওয়ার মতো অপকর্মে লিপ্ত হওয়া, এসবই দান নষ্ট করার সমতুল্য। ইসলামের দৃষ্টিতে দান, অনুদান ও যাবতীয় ইবাদতে নৈতিকতা ও প্রদর্শন করা খুবই নিন্দনীয় এবং নষ্ট করার নামান্তর। এ ছাড়া ইসলামী শরিয়তে নিরুপায় অবস্থা বা বিকল্পহীন পদ্ধতি ব্যতীত ছবি-ভিডিও নিষিদ্ধ। অতএব সতর্কতার অভাবে মহামূল্যবান দান, অনুদান নষ্ট করা সমীচীন হবে না। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত সে ব্যক্তির মতো নষ্ট কর না, যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ^াস রাখে না। অতএব এই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো যার ওপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর ওপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ওই বস্তুর কোনো সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ, কাফের সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সুরা আল বাকারা-২৬৪)
♦ লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা