বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শেষ হয়ে গেল এলআরবি...

আলী আফতাব

শেষ হয়ে গেল এলআরবি...

আইয়ুব বাচ্চু চলে যাওয়ার পর থেকে এলআরবির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন ব্যান্ডের বাকি সদস্য এবং আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তরা। এলআরবি নামে আর এই ব্যান্ডের কার্যক্রম পরিচালনা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। তবে এলআরবির ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, এলআরবি আবার মঞ্চে আসবে। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর কয়েকজন শিল্পীকে দিয়ে মঞ্চ মাতানোর চেষ্টা করা হয়। ৫ এপ্রিল এলআরবি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জানা যায়, বালামকে নিয়ে এলআরবি নতুনভাবে যাত্রা শুরু করছে, তিনিই এখন থেকে এই ব্যান্ডের নতুন ভোকাল। এই ঘোষণার পর এলআরবি-ভক্ত ও শ্রোতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। শামীম আহমেদ তখন বলেন, ‘ব্যান্ডটিকে আমরা চালু রাখতে চেয়েছি। বসের (আইয়ুব বাচ্চু) ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। তার সব কিছুই আমাদের সঙ্গে আছে। তিনি আছেন, থাকবেন আমাদের মাঝে।’ গত সোমবার দুপুরে জানা যায়, আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের আপত্তিতে এলআরবি নাম নিয়ে এগোতে চান না অন্য সদস্যরা। এই প্রসঙ্গে ব্যান্ডের গিটারিস্ট আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানালেন, এলআরবি নয়, এখন থেকে ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’ নামে মঞ্চে আসবেন তারা। ব্যবহার করা হবে না ‘এলআরবি’ নামটি। কারণটা তিনি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘এলআরবি ব্যান্ডের প্রাণপুরুষ আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে তার স্মৃতিকে অম্লান রাখতে আমরা কাজ করে যেতে চাই। তাই এতে বালামকে যুক্ত করা। কিন্তু প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের সদস্যরা এলআরবি নামটি ব্যবহার না করার জন্য আমাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। বসের পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা নামটি আর ব্যবহার করব না। এখন থেকে আমরা ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’ নামে গান পরিবেশন করব।’

এদিকে পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এলআরবি যে নতুনভাবে গঠন করা হয়েছে, এসবের নাকি কিছুই জানেন না তারা। এমনকি গত কয়েক মাসে এলআরবি নামে বিভিন্নজনকে দিয়ে স্টেজ পারফরম্যান্স করেছে, এ বিষয়টিও ছিল তাদের অজানা। এলআরবি নাম নিয়ে ব্যান্ড এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পরিবার থেকেও আগেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। নাম পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলি প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে-মেয়ে ও তার কিছু কাছের মানুষদের সঙ্গে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।

 

নাম পরিবর্তন হোক আমি চাই না

- তপন চৌধুরী

আমি সোজা কথা বলতে চাই, এই নাম পরিবর্তন চাই না। এলআরবি আইয়ুব বাচ্চুর একটি বড় সৃষ্টি। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয় কিন্তু কিছু সৃষ্টি পরিবর্তন হওয়ার নয়, আর এটি হচ্ছে এলআরবির নাম। আমি চাই আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার ও এলআরবির সদস্যরা একসঙ্গে বসে একটি সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন।

 

 

 

শিল্পীর সৃষ্টি হচ্ছে তার আসল পরিচয়

- কুমার বিশ্বজিৎ

 

এই বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আমি বলব, একটি শিল্পীর সৃষ্টিই হচ্ছে তার আসল পরিচিতি। আর আইয়্বু বাচ্চু আমাদের গানের ভুবনে যা দিয়ে গেছেন তা ভোলার মতো নয়। সেখান নাম পরিবর্তনটা আমার কাছে বিশেষ কিছু বলে মনে হচ্ছে না। কারণ একজন দর্শক বা শ্রোতা স্টেজের সামনে বসে ব্যান্ডের নাম শুনবে না তাদের গান শুনবে।

 

 

 

 

বাবা বলেছিলেন ‘আমি ছাড়া এলআরবি চলবে না। আমার এই সম্পদের অধিকার শুধু তোমরা দুজন

ফাইরুজ সাফরা

আইয়ুব বাচ্চু তার অবর্তমানে এলআরবি ব্যান্ডের কী হবে, তা আমাদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার ফেসবুকটা দেখি। বাবার সঙ্গে ইনবক্সে বলা কথাবার্তা দেখে একটু শান্তি খোঁজার চেষ্টা করি। একদিন দেখি, বাবার ফেসবুক প্রোফাইল নেই। এরপর আমার ভাইকে কানাডায় ফোন করি। তাকে বললাম, তুমি বাবার ফেসবুক প্রোফাইল চেক কর। ও চমকে যায়। আব্বুরও চেক করে। এর মধ্যে ফেসবুক লাইভে জানতে পারি, এলআরবি ব্যান্ডে নতুন সদস্য নেওয়া হয়েছে! নতুনভাবে এলআরবি গঠন করা হয়েছে। খুব অবাক হয়েছি। বাবা সব সময় বলতেন, ‘আমাকে ছাড়া এলআরবি চলবে না। আমার এই সম্পদের অধিকার শুধু তোমার আর তোমার ভাইয়ের।’ বাবা একটা কথা সব সময় পরিষ্কার করে বলতেন, ‘আমি তোমাদের খুব গরিব বাবা। আমার অনেক সীমিত জিনিস। আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ আমার ছেলে ও মেয়ে। জীবনে অনেক শ্রম দিয়ে তোমাদের লেখাপড়া করিয়েছি।’ বাবার এই কথা আমি সব সময় মনে রেখেছি। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘আমি না থাকলে, আমার কোনো জিনিসকে কখনো উল্টাপাল্টা হতে দিবা না।’

 

এলআরবিতে বাবার জায়গায় অন্য কাউকে আমি ভাবতেও পারি না

আহনাফ তাজোয়ার

আমার বাবার সৃষ্টি আমার কিংবা আমার বোনের নয়। তিনি বাংলাদেশের সম্পদ। সবাই তাকে চেনে তার গান ও মিউজিক দিয়ে। আমি আর আমার পরিবার চেয়েছিলাম এলআরবি সদস্যরা চাইলে অন্য একটি ব্যান্ডে পারফর্ম করতে পারেন, যেন বাবার কাজগুলো টিকে থাকে। বাবার মৃত্যুর পরই আমার কাছে এই ব্যান্ডের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তার সৃষ্টির মৃত্যু হয়নি। বাবা একই ব্যান্ডটি শুরু করেছিলেন আর তার কোনো রিপ্লেসমেন্ট নেই। সংগীতশিল্পী হিসেবে তো বটেই তিনি মানুষ হিসেবেও শ’য়ে একজন। তাই তার জায়গায় অন্য কাউকে আমি ভাবতেও পারি না। আমরা শুধু এটাই চেয়েছিলাম কিন্তু ব্যান্ড নিয়ে অনুরোধগুলো ছিল অন্য রকম। আমার মা, বোনকে এখন মৃত্যুর হুমকি দিচ্ছে। প্রায় হাজারখানেক মন্তব্য দেখেছি, তারা বলছে আমার বাবা আমার সম্পত্তি নয়, তিনি দেশের সম্পদ। সত্যিই তো তাই। কিন্তু দিন শেষে তিনি আমার বাবা, এটা চাইলেও আপনারা এড়িয়ে যেতে পারেন না। তিনি আমার আত্মা, আমার রক্ত। তাই আমি এলআরবির অন্য সদস্যদের (বালাম বা দ্য লিগেসি নামে তারা পরিচয় দিচ্ছেন) বলছিলাম তারা যেন এলআরবি নামেই গান করেন। আমি প্রত্যাশা করি, মনে প্রাণে চাই তারা যেন সফল হন, এলআরবির গান বাঁচিয়ে রাখেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর