শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

লালন আমার ধ্যানে ও জ্ঞানে

লালন আমার ধ্যানে ও জ্ঞানে

২০০৫ সালের ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে লালনের গান গেয়ে সবার মন জয় করানো শিল্পী লালনকন্যা বিউটি। তার পুরো নাম নাসরিন আক্তার বিউটি। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন লালন গান ও বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- রাফিয়া আহমেদ , ছবি : মো. মুশাররফ হোসেইন অভি

 

বর্তমানে ব্যস্ততা কি নিয়ে?

বর্তমানে সংসার আর স্টেজ শো এবং কিছু টিভি শো নিয়ে ব্যস্ত আছি। আর তাছাড়া সামনে লালনের ১০টা গান নিয়ে একটা অ্যালবাম তৈরি করব, তার কিছু কাজ চলছে।

 

নজরুলসংগীত দিয়ে শুরু হলেও লালনসংগীতের প্রতি আগ্রহটা কীভাবে এলো?

আসলে লালনের গান আমি শিখতাম অন্যসব গানের পাশাপাশি। কিন্তু যে কারণে লালনের প্রতি আমার এত আগ্রহ জাগল তা হলো লালন গানের শিল্পী ফরিদা পারভিন ম্যামের গান শুনতাম। তার গান শুনেই লালনের গানের প্রতি আমার ভালোলাগাটা সৃষ্টি হয়। আর তাছাড়া লালন সাঁইয়ের খুব কাছাকাছি আমার জন্ম। তো সেদিক থেকে যেটা হয়, একটা টান কাজ করত সব সময়। এরপর যখন ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় এলাম, তখন আমি লালনের গান গেয়েছিলাম প্রথম অডিশনে। আমার গান শুনে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল স্যার কেঁদেছিলেন এবং সেদিনই বুলবুল স্যার আমাকে ওই মঞ্চে লালনকন্যা উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘লালনের গানের বাইরে তুমি অন্য কোনো গান গাইবে না।’

 

লালনসংগীত গাওয়ার কারণেই কি আপনার  মৌলিক গান গাওয়া হচ্ছে না?

না, তা কখনোই না। আমার এ পর্যন্ত পাঁচটি মৌলিক গানের সোলো অ্যালবাম এসেছে। প্রত্যেকটা অ্যালবামে আমি লালন সাঁইয়ের গান রেখেছি। এবং আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার মৌলিক গানগুলোর মধ্যেও লালনের গান রাখতে। তাছাড়া আমাদের দেশের সংস্কৃতিটা হচ্ছে একদম ফোক ধারার সংস্কৃতি। দেশ ও মানুষ যতই আধুনিক হোক, তারা কিন্তু এখনো লালন বা ফোক গানের ভক্ত। 

 

বর্তমানে মৌলিক গানের অবস্থান কেমন?

আসলে বর্তমানে মৌলিক গান নিয়ে কজনইবা ভাবছে বলুন! এখন তো মৌলিক গানের সংখ্যা প্রায় কমেই গেছে। মৌলিক গানের চেয়ে মানুষ এ সময় ইউটিউবের দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে।

 

যেহেতু ইউটিউব প্রসঙ্গ এলো , তাই জানতে চাই আপনার মিউজিক ভিডিও নেই কেন?

আসলে আমার মিউজিক ভিডিও না হওয়ার কারণ আমি যেহেতু একটা ধারা নিয়ে আছি, সেখানে কিছু পরিকল্পনা আছে। তাছাড়া একটা ভালো মানের মিউজিক ভিডিও বানাতে যে উচ্চ পর্যায়ের খরচটা হয় তা করবার মতো সাধ্য আমার এখনো হয়নি। আপনি নিশ্চয় জানেন, এখনকার মিউজিক ভিডিওগুলো হয়ে গেছে যে যত টাকা ব্যয় করতে পারবে তার মিউজিক ভিডিও বের হবে। তবে এক্ষেত্রে গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না যে, এই ভিডিওটার ভিউয়ারস অনেক বেশি হবে, দর্শকের অনেক ভালো লাগবে। এবং এটাও গ্যারান্টি দিতে পারবেন না যে, এই ভিডিওটা দিয়ে তার ব্যবসা সফল হবে। একসময় কোম্পানিগুলো শিল্পীদের কাছে যেত একটা অডিও বা ভিডিও গানের জন্য।  আর এখন কোম্পানিগুলোর কাছে শিল্পীরা যাচ্ছেন একটা মিউজিক ভিডিওর জন্য। তাও যদি টাকার অঙ্ক বড় হয়, তবেই মিউজিক ভিডিও বানাতে সক্ষম হয়। এতে শিল্পীদের মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে! তাই আমি চাচ্ছি না আট-দশ লাখ টাকা খরচ করে মিউজিক ভিডিও বানাই।

 

অনেকে লালনের গান গাইছেন ফিউশন হিসেবে, এ প্রসঙ্গে...

শুধু লালনের গান নয়, হাছনরাজা, শাহ আবদুল করিম, রাধারমন- যে মহাজনের গানই হোক না কেন তা যদি ফিউশন বা রিমিক্স করতে চায় করুক কিন্তু গানটা যদি গানের জায়গায় রেখে তার সুর, তাল, কথা ঠিক রেখে, মানে এক কথায় গানের মান ঠিক রেখে যদি গাওয়া হয় তাহলে গানের প্রতি মর্যাদাটাও রক্ষা হয় এবং দর্শকও গানগুলো শুনবে।

 

স্টেজে কোন গানগুলোর জন্য বেশি অনুরোধ আসে?

যেহেতু আমি লালনগীতি গেয়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছি আর তারাও আমাকে লালনকন্যা বলে থাকে, সেহেতু বুঝতেই পারছেন লালনের গান গাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর আমিও আমার দর্শকদের লালনের গান শুনিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি মঞ্চে উঠা মানেই ফোক গানের অনুরোধ।

 

আপনাকে লালনকন্যা বলা হয়, এই অনুভূতিটি কেমন?

এই অনুভূতিটি যতটা ভালো লাগার তার চেয়েও বেশি ভয় কাজ করে। প্রতিবারই মনে হয় আমি কি লালনকন্যা নামটির মর্যাদা রক্ষা করতে পারছি! অথবা আমার লালন গানের মাধ্যমে এই নামের মান ধরে রাখতে পারব কিনা। দর্শকদের ভালোবাসা আর বড় শিল্পীদের দোয়া, যাদের কারণে আমি লালনকন্যা উপাধি পেয়েছি তাদের ভালোবাসা মিশে আছে এই নামের সঙ্গে।

 

সামনে নতুন গান নিয়ে আসছেন কী?

মাঝখানে মোটামোটি একটা বিরতি দিয়েছি। স্টেজ শোগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম আর আমার ছেলে রায়াতও ছোট, তাই পেরে উঠছিলাম না। এখন আবার শুরু করছি। সামনেই শুধু লালনের দশটি গান নিয়ে একটা অ্যালবাম বের করব। এ নিয়ে কাজ শুরু করছি শিগগিরই।

 

১৭ অক্টোবর লালনের মৃত্যুবার্ষিকী। সেক্ষেত্রে কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

তার মৃত্যুবার্ষিকী ও জন্মবার্ষিকী দুই সময়ই আমি লালন মেলায় উপস্থিত থাকি। যেহেতু আমার বাচ্চাটা এখনো ছোট, সেহেতু এবার যাওয়া হচ্ছে না, এ জন্য মনটা খারাপ থাকবে। তবে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে ১৬ তারিখ রাতে বাংলাভিশনে লাইভ করব। এছাড়াও বিভিন্ন চ্যানেলে লালন সাঁইয়ের গান করব। এভাবে আমি লালন সাঁইকে স্মরণ করব।

সর্বশেষ খবর