বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ - মামুনুর রশীদ

জীবনকে ফিরে দেখার সুযোগ হয়েছে

জীবনকে ফিরে দেখার সুযোগ হয়েছে

বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং জড়িত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। ২৯ ফেব্রুয়ারি এই নাট্যজন ৭২ বসন্তে পা রাখছেন। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আরণ্যক নাট্যদল আয়োজন করেছে জন্মোৎসবের। বিশেষ এই দিন ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

৭২ বসন্তে পা দিচ্ছেন। কেমন ছিল এই দীর্ঘ পথচলা?

আসলে আমরা যে সেক্টরে কাজ করি, সেটি কিন্তু কুসুমাস্তীর্ণ নয়। নানা রকম চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। পথচলায় থাকে ব্যর্থতা, হতাশা, আনন্দ. সাফল্য, বিষাদসহ নানা দিক। সবার মতো কিন্তু আমাদের জীবন নয়। জীবন কঠিনতম; অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করতে হয়। সব সময় ভাবতে হয়, এমন কাজে দর্শক মুগ্ধ বা হতাশ হবে কি! যেন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পথচলা। ৭২টি বসন্ত পার করেছি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে।

দীর্ঘ জীবনে অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। কিছু অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা যায় কি?

জন্মের পর থেকেই ভাষা আন্দোলন দেখেছি। সেসময় আমার বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। এরপর দেখেছি আইয়ুবের শাসন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র বিভীষিকা, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় আর ৭৫’র নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় ছিলাম দীর্ঘ ১০ বছর। জীবনে যে কত ধরনের উত্থান-পতন দেখেছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

আপনার বিশেষ দিনটিকে ঘিরে ‘আরণ্যক’ জন্মোৎসবের আয়োজন করেছে। বিষয়টি কেমন লাগছে?

অবশ্যই ভালো লাগছে। জীবনকে ফিরে দেখার একটি সুযোগ হয়েছে। এই বয়সে, এই সময়ে নিজের লেখা-নির্দেশনায় নতুন ১টি নাটকও নামছে; যেটা আনন্দের। 

নাটকটির নাম কি? আর উৎসব কতদিন ধরে চলবে?

নাম ‘কহে ফেসবুক’। উৎসব চলবে আজ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত। এই নাটকটি ২৯ তারিখে প্রদর্শিত হবে।

এটিতে আপনি অভিনয় করছেন?

না, আরণ্যক নাট্যদলের সব তরুণই এই নাটকে অভিনয় করছেন। যারা ১০-১২ বছর ধরে বা নতুন এসেছেন দলে, তারাই এই নাটকে যুক্ত হয়েছেন। দেখি এবার, তারা কেমন করেন! নতুনদের নিয়ে কাজ করার আনন্দ আছে। অভিনয় করার চেয়ে নির্দেশনায় আনন্দ প্রচুর। আর আগে তো অনেক নাটকেই অভিনয় করেছি। ‘রাঢ়াঙ’-এ ছোট্ট একটি চরিত্রেও কাজ করেছি। ‘জয়জয়ন্তী’ দিয়েই কিন্তু আজকের আজাদ আবুল কালাম, ফজলুর রহমান বাবু, আ খ ম হাসান এসেছেন। ভালো ভালো কাজ করছেন তারা।

আপনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতেন...

সেটা ১৯৬৭ সালের কথা। টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতাম। যার বিষয়বস্তু ছিল মূলত পারিবারিক। সেসময় কিছু কমেডি নাটকও লিখেছি। তবে তখন তেমন করে নাট্যভাবনা শুরু হয়নি।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও তো যুক্ত ছিলেন...

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিই এবং জড়িত হই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। সেসময় কলকাতায় নাটক দেখেছি, যা আমার নাট্যজীবন বিকাশের পথে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এই অনুপ্রেরণা থেকেই ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আরণ্যক নাট্যদল গঠন করি।

মঞ্চনাটকে স্বাধীনতার চেতনা কতটুকু উপস্থাপিত হচ্ছে?

অনেকই তো হচ্ছে। অন্যান্য মাধ্যমে যতটা না হচ্ছে, আমি তো মনে করি স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে শুরু করে সবকিছুই থিয়েটারে উপস্থাপিত হচ্ছে আরও অনেক বেশি গভীরভাবে।

বাণিজ্যিক কারণে কি মঞ্চনাটক কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে?

হুমম... পিছিয়ে তো পড়ছেই। আমরা সরকারকে বিভিন্ন সময় বলেছি মঞ্চনাটক কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট বেতন বরাদ্দ করার জন্য, সেটা তো তারা করছেন না।

মঞ্চনাটকের সংকটগুলো কী?

আমাদের হল নেই, আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নেই।

দেশে টেলিভিশন চ্যানেল অনেক। এ কারণে টেলিভিশন নাটকে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে?

হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই পড়ছে। মঞ্চ এবং টেলিভিশন দুই নাটকেই এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

নাটকে সিনিয়র শিল্পীদের মূল্যায়ন কি হচ্ছে বলে মনে করেন?

মূল্যায়ন হচ্ছে কই? হচ্ছে না। সিনিয়র অভিনয়শিল্পীরা সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন। নাটকে বাবা থাকলে মা নেই, আবার মা থাকলে বাবা নেই! তাই এসব নাটক দর্শকদের মধ্যে কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে পারছে না। চরিত্র কাটছাঁট করা হচ্ছে। সিনিয়র শিল্পীদের সম্মানী, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে।

মঞ্চ কেন দর্শকহীন? পথনাটক কি ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন?

নতুন মঞ্চনাটক চাই; তার চেয়ে বেশি বেশি চাই মঞ্চ। আর একদিনে একাধিক প্রদর্শনী দরকার। ৮০ বা ৯০ দশকে পথনাটকে যে মুখরতা ছিল তা এখন স্তিমিত। কোনোরকম ইস্যু ছাড়া পথনাটক হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর