শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অভিনয় শেখার জন্য মঞ্চ কতটা জরুরি

অভিনয় শেখার জন্য মঞ্চ কতটা জরুরি

অভিনয়শিল্পী তৈরির জন্য মঞ্চ একটি বড় ক্ষেত্র। একসময়ের দর্শকনন্দিত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় শেখার মূল ভিত্তিই ছিল মঞ্চ। তবে এ সময়ের অভিনয়শিল্পীদের মঞ্চের প্রতি আগ্রহ নেই বললেই চলে। ফলে গ্লামারসর্বস্ব এসব তারকার পর্দায় অভিনয়টা ঠিকমতো আর করা হয়ে ওঠে না। অভিনয় শেখার জন্য মঞ্চের গুরুত্ব নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

আসাদুজ্জামান নূর

আমাদের সময় নাটক ছিল ভিন্ন স্বাদের। শুটিং শেষ করেছি সুন্দরভাবে। বিটিভিতে সন্ধ্যার পর সবাই মিলে মহড়া করেছি; সঙ্গে জম্পেশ আড্ডা তো চলতই। এখন তো সবাই যান্ত্রিক হয়ে গেছে। নাটকে নেই কোনো অ্যাকশন রি-অ্যাকশন! ভালো অভিনয় শিল্পীর অভাব যেমন আছে, তেমনি রয়েছে নাট্যকারের। এই অভাবটা একই সঙ্গে মঞ্চে এবং টিভিতে। মঞ্চের গাঁথুনি ভালো হলে শিল্পীর অভিনয় ভালো হতে বাধ্য। অভিনয়টা শিখে ভিজ্যুয়ালে আসা উচিত। না হলে একজন শিল্পীর শুধু সবই করা হবে,  কিন্তু অভিনয়টাই করা হয়ে উঠবে না। মঞ্চের ভিত্তি খুবই জরুরি।

 

আবুল হায়াত

তরুণরা বেশ ভালো করছে। তবে তাদের আরও উন্নতির জায়গা আছে। অনেকে চমক দেখিয়েই হারিয়ে যায়। মিডিয়ায় টিকে থাকতে চাইলে অভিনয় শিখে আসাটা জরুরি। শেখার অনেক জায়গা আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অ্যাক্টিং স্কুল আছে। এক মাস মেয়াদি কোর্স করলেও কিছুটা জানা যায়। মৌলিক ধারণা অন্তত পাওয়া যায়। ভালো ভালো মঞ্চ দল আছে আমাদের। আগে ছেলেমেয়েরা মঞ্চে দীর্ঘদিন কাজ করে তারপর টিভিতে আসত। আর এখন টিভিতে কাজ করবে বলেই অনেকে মঞ্চে আসে।  কিছু দিন কাজ করেই টিভিতে চলে যায়। অভিনয় শেখার জন্য মঞ্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।

 

রামেন্দু মজুমদার

অভিনয়ের প্রতিভা থাকতে হবে। মঞ্চ বা থিয়েটার না করেও কিন্তু অনেকে মিডিয়ায় ভালো করছে। যে মাধ্যমে কাজ করবে সেই বিষয়ে তার ভালো ধারণা থাকতে হবে। টিভি-চলচ্চিত্রে অনেকেই ভালো অভিনয় করছে। তাদের অনেকেই থিয়েটার থেকে আসেনি। শোবিজে থিয়েটার না করা প্রায় ৯৯% ছেলেমেয়েই ভালো কাজ করছে। তাদের তেমন কোনো থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। আর থাকার দরকারও নেই। যেই মাধ্যমে সে কাজ করছে সেই মাধ্যমেই তার যোগ্যতা থাকাটা জরুরি। তাকে তার নিজের বিষয়ে ভালোভাবে জানাটা জরুরি যে, তাকে দিয়ে কী কী কাজ হতে পারে। অভিনয় করতে হলে থিয়েটার মঞ্চ জানাটা খুব বেশি  জরুরি নয়।

 

মামুনুর রশীদ

আমি বলব, আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীদের জন্য খুবই জরুরি থিয়েটার শিখে আসা। থিয়েটার যারা করে, তারা ডিসিপ্লিন জানে। কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বছর থিয়েটার করে, ডিসিপ্লিন শিখে নানা রকম স্টাগল করে তবেই একজন অভিনয়ে নিজের জায়গা করে নিতে পারে। যারা থিয়েটারের বাইরে থেকে অভিনয়ে আসে তারা তো ডিসিপ্লিন জানে না, জীবন সংগ্রাম কি তাও

জানে না। জীবন সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। তারাই মিডিয়ায় নানারকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।  ডিসিপ্লিন শেখার জন্য হলেও বাধ্যতামূলকভাবে থিয়েটার শেখাটা জরুরি বলে মনে করি।

 

লাকী ইনাম

এটা খুবই জরুরি নয় যে, থিয়েটার করতেই হবে। তবে অভিনয় করতে হলে তাকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসাটা দরকার। এখনকার চলচ্চিত্র ও নাটকের মান কমে গেছে শুধু এই না জেনে, না শিখে কাজ করার কারণে। মিডিয়ায় ক্যামেরা জানতে হবে, সংলাপ ডেলিভারি জানতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কস্টিউম, মেকআপসহ আনুষঙ্গিক বিষয়েও ভালো ধারণা থাকতে হবে। কী লেভেলে ডায়ালগ দিতে হবে, বাচনভঙ্গি কেমন হতে হবে, নাটকের ডিজাইনের সঙ্গে মানিয়ে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে- এসব জানাটা দরকার। এখন তো নাটক ও চলচ্চিত্রে শুদ্ধ উচ্চারণের ব্যবহার দেখি না।  সংলাপে দেখা যাচ্ছে বিভ্রাট, অভিনয় হচ্ছে গৎবাঁধা।

 

আতাউর রহমান

থিয়েটার হচ্ছে অভিনয়ের সূতিকাগার। টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রে যে কেউ সরাসরি কাজ করতে পারে কিন্তু থিয়েটার তো শিখতে হয়। থিয়েটার থেকে অনেক বড় বড় অভিনেতা-অভিনেত্রী বেরিয়েছেন। থিয়েটার বা মঞ্চকে দিয়ে একটি জাতিকে চেনা যায়। আমি বলছি না যে, থিয়েটার না শিখে কেউ অন্য মাধ্যমে কাজ করতে পারছে না বা পারবে না। পারছে, তবে তারা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন তো চেহারা সুন্দর হলেই দাঁড়িয়ে যেতে পারছে ক্যামেরার সামনে। তবে, দেশে অভিনয়ের ভালো প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। যদিও স্বল্প সময়ে অনেকেই কিছু টাকা কামাই করতে পারছে ঠিকই;  কিন্তু বেশি দিন টিকে থাকতে পারছে না।

 

আজাদ আবুল কালাম

প্রত্যেক মঞ্চকর্মীকে ধরেই নিতে হবে, তারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে এখানে এসেছে। সে এখান থেকে শুধু আনন্দটাই পাবে। সে যদি শুধু আনন্দ নিয়ে সেটিসফাইড থাকে, তাহলেই সে থিয়েটার করতে পারবে। অন্যথায় তার এটা স্থান নয়। এটা হচ্ছে একটা মিশন। মানসিক ও শারীরিকভাবে এখানে কাজ করার সাধনা থাকতে হবে। আর মঞ্চ থেকে শিখে আসা তরুণ অভিনয় শিল্পীরাই কিন্তু ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় ভালো করছে; খুবই ভালো করছে। মঞ্চে ছেলেমেয়েদের কিন্তু মিডিয়ার ভালো ভালো প্রতিটি সেক্টরে ইনভলভ হওয়া উচিত। টিভি বা সিনেমায় যাওয়া উচিত। তাদেরই তো মূলত কাজ করা দরকার মিডিয়ার সব স্থানে।

 

 

মোশাররফ করিম

শিল্পীকে অবশ্যই কোনো না কোনো জায়গা থেকে গ্রুমিং করে অভিনয় করতে হবে। মঞ্চ তার জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা। এখানে অভিনয়ের কারিকুলামগুলো সঠিকভাবে চর্চা করা হয়। অভিনয় শেখার জন্য আমার মনে হয় মঞ্চ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে যারা অভিনয় করতে এসেছেন, তারা সবাই নিজের অবস্থান তৈরি করে কাজ করেছেন। অবশ্য গ্রুমিং করলেই যে ভালো অভিনয় করবে, এমন কোনো কথা নেই। আমি মনে করি, অভিনয়টা রক্তেও থাকতে হয়।

 

চঞ্চল চৌধুরী

আমি যেহেতু থিয়েটারকর্মী সেহেতু থিয়েটার থেকে শিখেই অভিনয়ে এসেছি। থিয়েটার করলে অভিনয় শেখা যায়। থিয়েটার হলো অভিনয়ের প্রিপারেশন আর পারফর্মের জায়গা। এখানে সব বিষয়ে প্র্যাকটিস করে তবেই ঠিক জায়গায় নিজেকে প্রদর্শন করতে হয়। আমরা ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে রিহার্সেল করে তবেই মঞ্চস্থ করি একটি নাটক। এখানে অনেক কিছুই শেখানো হয়। অন্যদিকে টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রে সেই সুযোগটা নেই। অভিনয় জানার জন্য, শেখার জন্য থিয়েটার জানাটা খুবই প্রয়োজন। যারা না জেনে অভিনয়ে আসছে, তারা তো বেশি দিন টিকে থাকতে পারছে না। তাদের স্থানও এই মিডিয়ায় কোনো সেক্টরেই স্থায়ী হচ্ছে না।

 

আবদুন নূর সজল

মঞ্চ থেকে শিখে এসে কাজ করতে পারলে ভালো। যদিও আমাদের কিন্তু অভিনয় শেখার ভালো কোনো স্কুল নেই। তবে আমাদের রয়েছে দুর্দান্ত সব থিয়েটার দল। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযোজনা নিয়ে নতুন নতুন থিয়েটারকর্মী মঞ্চে আসছেন। তারা নিজেদের এক্সপেরিমেন্ট করছেন নব নব চরিত্রে। শিখছেন এবং সেটা ডেলিভারি দিচ্ছেন। এরই মধ্যে নিজেরা তৈরি হচ্ছেন অভিনয়ের জন্য। তাই মনে করি, মঞ্চ থেকে শিখে এসে অভিনয়ে আসা দরকার। যদিও আমি মঞ্চ থেকে আসিনি। না এলেও আমি মঞ্চনাটকের অনেক বড় ভক্ত। এক সময় বন্ধুরা মিলে নাগরিক নাট্যাঙ্গনের অনেক নাটক দেখতাম। এখনো সময় পেলে দেখি।

সর্বশেষ খবর