মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : সামিনা চৌধুরী

বাবার গান সবসময়ই গাইতে পছন্দ করি

বাবার গান সবসময়ই গাইতে পছন্দ করি

সামিনা চৌধুরী। তাঁর পরিচয়ের জন্য নামটাই যথেষ্ট। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে গান করছেন। উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। গানের সব মাধ্যমেই কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন এই সুকণ্ঠী গায়িকা। তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন?

মোটামুটি ভালো আছি।

 

টিভি পর্দায় ‘সেরাকণ্ঠ সিজন ৭...

হ্যাঁ, আমি বিচারক হিসেবে ছিলাম। আরও ছিলেন রুনা লায়লা ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। আমি বিচারক হিসেবে কিছুটা কঠিন, এটা সবাই জানে। যখন  বিচারকের আসনে বসি তখন কাউকে চিনি না। আসলে বিচারের কাজটা খুবই কঠিন। এসব ক্ষেত্রে নিউট্রাল থাকাটাই জরুরি।

 

নতুন কোনো গান এসেছে?

‘ছোঁয়া কি যায়’ শিরোনামের নতুন একটি গান অবমুক্ত হয়েছে। এর ভিডিওচিত্রও নির্মাণ করেছি। গানচিত্রটি আমার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশ করেছি। গানটিতে মানুষের জীবনের এক অপ্রিয় বাস্তবতাকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

সামনে আর কোন গানগুলো আসবে?

নতুন নতুন অনেক গানই করেছি। কিছু গান প্রস্তুত আছে। চেষ্টা করছি প্রতি মাসে অন্তত একটি করে গান করার।

 

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গে কয়টি কাজ?

কেউ বিশ্বাস করবে না যে, আমি তাঁর কোনো গানই করিনি! তাঁর সঙ্গে একটাও গান নেই। অবশ্য এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁদের সঙ্গে কাজ হয়নি। আমার এত বছরের সংগীত জীবনে আমি মাত্র একটি গান করেছি শ্রদ্ধেয় আলম খানের সুরে।

 

বাবার গান নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

বাবার গান সবসময়ই গাইতে পছন্দ করি। সবাই বাবার গান শুনে, গাইতে বলে। স্টেজেও তাঁর গান করি।

 

ক্লাস এইটে পড়ার সময়ই চলচ্চিত্রে গান করেন। এত কম বয়সে সুযোগ পাওয়ার কারণ কি শিল্পী মাহমুদুন্নবীর কন্যা বলে?

তা মোটেও নয়, বরং আমি যখন গাইতে শুরু করি তখন কেউ জানতই না যে, আমার বাবা মাহমুদুন্নবী। যখন সবাই জানতে আরম্ভ করল তখন আমি সামিনা নবী থেকে সামিনা চৌধুরী হয়ে গেছি।

 

কেন এই নাম পরিবর্তন?

এক ধরনের অভিমান থেকেই এই নাম পরিবর্তন।

 

সংগীতের ক্ষেত্রে ওপারের শিল্পীরা কতটা প্রফেশনাল?

প্রফেশনাল বিষয়টি একেক দেশের শিল্পীর ক্ষেত্রে একেক রকম। ওপারের শিল্পীরা একটু প্রফেশনাল বেশি। তবে এ দেশের শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, মিউজিক ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করে আমি বেশি আরাম পাই। তাঁরাও সংগীত ভালো বোঝেন। আগে একটা গান হলে সবাই সেটি নিয়ে বসতাম, গাইতাম। এটা বাংলাদেশেই সম্ভব। বাংলাদেশের সবার সঙ্গে কাজ করাটা আনন্দের। শুধু নচিকেতাই নয়; আমি ওপারের জয় সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। আরেকজন আছেন আশুতোষ। অনেক সুন্দর মিউজিক ডিরেকশন দেন তিনি। এরপর রুপোজ্জল মজুমদারের কথা বলতেই হবে। দুই বোন মিলে বাবার ‘ওগো মোর মধুমিতা’ গানটি নতুন করে গেয়েছি। সে কিন্তু নন্দিত সুরকার প্রবীর মজুমদারের ছেলে। তবুও বাংলাদেশকেই প্রেফার করি।

 

কার গান ভালো লাগে?

প্রিয় শিল্পী হলেন আশা ভোঁশলে ও লতা মঙ্গেশকর।

 

‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’ গানটি কখন গাইলেন?

তখন ১৯৮৫ সাল। আমার আরও কিছু গান যেমন- ‘আমার গরুর গাড়িতে’, ‘আমায় দেখনা’, ‘বেইমান বাঁশি’, ‘এই জাদুটা যদি সত্যি হয়ে যেত’, এগুলোর সঙ্গে ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’ বেশ হিট হয়।

 

সংগীতের যে কোনো একটি ধারায় আটকে থাকা উচিত?

না! আমি কখনো তা ভাবি না। ফিল্ম মিউজিক এবং আধুনিক ধারা দুটোই আমার প্রিয়। আমি কখনো শুধু শাস্ত্রীয় ধারার মধ্যে আটকে থাকতে চাইনি। যেহেতু আমি চারপাশের সবকিছুকে জানতে চাই, সেহেতু কোনো একটি বিশেষ রীতির মধ্যে নিজেকে বন্দি রাখতে চাই না।

 

গান গাওয়া ছাড়া আপনাকে অভিনয়েও দেখা গেছে...

অভিনয় আমাকে অন্যরকমভাবে টানত। সে রকম সুযোগও পেয়েছিলাম। তবে আমার আম্মু পছন্দ করেন না। জানি না সামনে আর করা হবে কি না! এখন গানকেই প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করছি। গান আর অভিনয় দুটোকে আর একসঙ্গে নিতে পারা একটু জটিল।

 

পুরনো গান আর এখনকার গান কোনটা ভালো?

শ্রোতারা যা বলবে সেটিই আসল। এখন অনেক ভালো ভালো গান হচ্ছে। আগের দিনের গানে যেসব কারুকাজ ছিল, এখনকার গানে সেগুলো খুব কম ব্যবহার হয়।

 

দীর্ঘদিন আপনাকে সংগীত জগতের বাইরে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি একটু খোলাসা করবেন কি?

পলিটিক্সের শিকার হয়েছিলাম। ১০-১৫ বছর গান গাইতে দেয়নি কোনো এক শিল্পী। আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল সব জায়গা থেকে। তার নাম বলতে চাই না, সবাই তাহলে জেনে যাবে। আর নাম বললে সে লজ্জা পাবে। অন্য আরেকটি কারণ ছিল ভারতের গানের সুর নকল করে গাওয়ার বিরুদ্ধে। আমি তখন পত্রিকায় বলেছিলাম এটা উচিত নয়। তখন অনেকেরই গায়ে এটা লেগেছিল। এরপর বিভিন্ন পলিটিক্স শুরু হয়ে যায়। দীর্ঘ বছর গান গাইতে দেয়নি তারা। লবিং না করার কারণেই পিছিয়ে ছিলাম- এখন তা বুঝতে পারি। সেটি তখন করতে পারলে এক ধরনের ক্যারিয়ার তৈরি হতো ঠিকই, তবে মানসিক শান্তি আসত না। তবে আমি মানসিকভাবে শান্তি পাই এখনো যে, লবিং ছাড়াও এতদূর আসতে পেরেছি। জীবনের শেষে এসে মনে শান্তি নিয়ে বলতে পারি, পলিটিক্স কখনো করিনি। শুধু গান দিয়ে কিছু মানুষের মনে এখনো রয়েছি ভালোবাসায়।

সর্বশেষ খবর