শোবিজ তারকারা রঙিন পর্দায় নতুন পরিচয়ে নিজেকে যুক্ত করছেন হরহামেশাই। নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি তারা গল্পও ভাবছেন, অর্থাৎ গল্পকার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করছেন। আবার নিজেদের লেখা সেই গল্পে অভিনয়ও করছেন। এমন কিছু গল্পকার তারকা নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল
হাল আমলে বাংলা নাটকের প্লট গড়ে উঠছে গল্প বা কিছু ভিন্ন চরিত্রের ওপর নির্ভর করে। সেই হিসেবে প্রচুর গল্পের প্রয়োজন। অভিনয় করতে করতে তারকাদের মাথায় ভিন্ন কনসেপ্ট ও সময়োপযোগী গল্প এসে ভিড় করে। তারা সেগুলো অনেক সময় শেয়ার করেন নির্মাতা-প্রযোজকদের কাছে। আর এসব লুফে নেন নির্মাতারা। এমনিতে তারকা অভিনয়শিল্পী, তার ওপর আবার তাদের আলাদা ভাবনার গল্প-দর্শকদের জন্য ভিন্নমাত্রা যোগ করে। যে কোনো নাটকের লোকেশন, সংলাপ, লুক, ভিন্ন চরিত্রের পাশাপাশি দরকার ভালো সময়োপযোগী গল্প। সেটা মাঝেমধ্যে আসে তারকাদের কাছ থেকে। তারকাদের গল্প দর্শকদের মাঝে বেশি আলোচনার জন্ম দেয়। শোবিজের অন্যতম অভিনেতা মোশাররফ করিম থিয়েটারের মানুষ। তিনি দলে থাকা অবস্থায় নিয়মিত গান, কবিতা ও গল্প লিখতেন। তিনি ভালো গানও করেন। অভিনয়কে নিজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধার পর তিনি নির্মাতাকে নিজের ভাবনা, নাটকের গল্প শেয়ার করতেন। তাঁর গল্পে নির্মিত হয়েছে অনেক নাটক। এ সময়ের শীর্ষ ও মেধাবী অভিনেত্রী মেহজাবীন গল্পকার হিসেবে নিজেকে চিনিয়েছেন আগেই। তাঁর গল্পে নির্মিত ‘আলো’ নাটকটি এর মধ্যে অন্যতম। নির্মাতা মাহমুদুর রহমান হিমি। মেহজাবীনের আরেকটি সুন্দর গল্প ভাবনায় নারী দিবসকে কেন্দ্র করে ‘থার্ড আই’ নির্মাণ করেছিলেন শ্রাবণী ফেরদৌস। যদিও নাট্যকার মেহজাবীনের প্রথম নাটক ছিল ‘স্বপ্ন দেখি আবারও’। অবশ্য তিনি গল্পকার হয়েছেন নিজের একটা শখ মেটানোর অনুভব থেকে। কাজের মেয়ের চরিত্র করা তাঁর খুব শখ। নিজের পছন্দের চরিত্র করার আগ্রহ থেকে নাটকের গল্প লেখা শুরু তাঁর। ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’ নামের আরেকটি নাটকও তিনি লিখেছেন। যেহেতু মেহজাবীনকে নাটকের কাজে নানা মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, দেখতে হয় নানারকম দৃশ্য, তাই চার পাশের দেখা থেকেই গল্প মাথায় আসে তাঁর। সাম্প্রতিক সময়ে বোন মালাইকা চৌধুরীর জন্য ‘প্রাণসখিয়া’র গল্প লিখেছেন তিনি। নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ। নাটকের গল্প লেখার তালিকায় রয়েছেন অভিনেতা আফরান নিশো। একটু ব্যতিক্রমী কাজের ভাবনা থেকে তিনি গল্পগুলো শেয়ার করেন। তাঁর লেখা গল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এই প্রতীক্ষায়, মেরুণ, মেমোরিজ, মুঠোফোন, শিফট, মরীচিকা, সেই তো এলে, ভিউ, রাজকুমার আসবে বলে, কুয়াশাসহ আরও অনেক। নিশোর গল্পে প্রথম নাটক ছিল ‘এই প্রতীক্ষায়’। ‘গল্প সবার মাথায় আসে না। এটি একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া’-যা আফরান নিশো মনে করেন। একজন অভিনেতারও অনেক সত্তা থাকে। কেউ সেগুলো প্রকাশ করেন, কেউ করেন না। নিশো নিজের লেখকসত্তাকে কাজে লাগিয়েছেন। সর্বশেষ নিশোর গল্পে ‘কাজলরেখা’ নাটক নির্মাণ করেন মিজানুর রহমান, চিত্রনাট্য তৈরি করেন পান্থ শাহরিয়ার। ১৯৯৭ সালে থিয়েটারের কর্মশালা করতে গিয়ে নাটকের গল্প, চিত্রনাট্য লেখার আগ্রহ জন্মে আরেক তারকা অভিনেতা রওনক হাসানের। তিনি অনেক আগে থেকে নাটকের গল্প ও চিত্রনাট্য লেখার কাজ করে চলেছেন। তাই বলা যায়, লেখালেখির দিক থেকে শিল্পীদের মধ্যে তিনি অনেক এগিয়ে। ২০০৪ সালে লেখেন প্রথম চিত্রনাট্য ‘বয়স যখন একুশ’। এ পর্যন্ত শতাধিক নাটকের গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। তার লেখা ‘বিবাহ হবে’ দর্শকদের মাঝে সাড়াও ফেলেছিল তুমুল। তার লেখা অন্যসব কাজের মধ্যে রয়েছে- আমার বউ সব জানে, ভোরের প্রসূতি, ধুলো উড়া দিন, ধুলো মেঘের জোছনা ভ্রমণ, চৌকিদার, একুশের পর, কথা ছিল অন্যরকম প্রভৃতি। জনপ্রিয় অভিনেতা অপূর্বর লেখা প্রথম নাটকের নাম ‘ভালোবাসার শুরু’। এরপর ২০০৭ সালে শখ করে ‘স্বপ্নের নীল পরী’ নামের একটি নাটকের গল্প লেখেন তিনি। নির্মাতা ছিলেন চয়নিকা চৌধুরী। এরপর অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি লেখেন আনটোল্ড লাভস্টোরি, এক টুকরো নীল, হঠাৎ এলো বৃষ্টি, ফার্স্ট লাভ, ড্রিম গার্ল, রাজকুমারসহ আরও বেশ কিছু নাটকের গল্প। তবে গল্প লেখার কাজটি হুট করেই শুরু হয়নি তার। চিত্রনাট্য পড়তে পড়তে অনেক গল্প ভাবনা মাথায় এলে সেটাকে তিনি শেয়ার করতেন। পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি তার সেই ভাবনাকে চিত্রনাট্যে রূপ দিতেন। সাম্প্রতিক সময়ে অপূর্বর গল্পে নির্মিত হয় ‘মিস্টার অ্যান্ড মিস চাপাবাজ’, যেটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এরপর রুবেল হাসানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে লেখেন ‘আগডুম বাগডুম’। গল্প লেখা তালিকায় রয়েছেন আরেক অভিনেত্রী সাফা কবির। ‘দি লাস্ট ব্রেকআপ’ ও ‘বিয়ে করা বারণ’ নামে সাফা কবিরের লেখা দুটি নাটক দেখানো হয়েছিল এর আগে। তবে পেশাদার নয়, নিতান্ত শখের বশেই নাটকের গল্প লিখেছেন সাফা। বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান। তার গল্পে নির্মিত হয়েছে ঈদের বিশেষ নাটক ‘হাউ-কাউ’। ফারহানের এমন অদ্ভুত রহস্যময় প্রেমের গল্পে নির্মিত এ নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি করেন মনিরুল ইসলাম রুবেল ও এ কে পরাগ। নির্মাণ করেছেন পরাগ নিজেই। এসব অভিনয়শিল্পী ছাড়াও খায়রুল বাসার, আরশ খান, ইয়াশ রোহান, জোভান, তটিনী বা কেয়া পায়েলদের গল্প ভাবনাতেই এখন নির্মিত হচ্ছে বিশেষ নাটকগুলো।