দেশীয় চলচ্চিত্রে একনায়কতন্ত্র নতুন কিছু নয়, যুগ যুগ ধরে এ অবস্থা চলছে। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পে চলছে শাকিব খান-কেন্দ্রিক এই একনায়কতান্ত্রিক রাজত্ব। বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। নির্মিত হয় ১৯৫৬ সালে। তারপর থেকে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে এর আগেও কি এ দেশের চলচ্চিত্র একনায়কতন্ত্রের কবলে পড়েছিল? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, রাজ্জাক যখন ১৯৬৬ সালে ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওয়াস্তাগড় লেন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই জগতে পা রাখলেন তখন আনোয়ার হোসেনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কিন্তু তাতে রাজ্জাকের কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ রাজ্জাকই সেই অভিনেতা, যিনি নিজ দক্ষতায় বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম ব্রঙ্কো বিলি কিংবা উত্তম কুমারের মতো অভিনেতা হয়ে ওঠেন। শুরু হলো রাজ্জাকের রাজত্ব। ষাটের দশকেই বেহুলা, আনোয়ারা, আবির্ভাব, নীল আকাশের নীচে’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে রাজ্জাক মেগা হিট ‘নায়ক’ বনে যান। একইভাবে তিনি পার করেন সত্তরের দশকও। তখন পর্যন্ত আনোয়ার হোসেনও জনপ্রিয়। কিন্তু আনোয়ার হোসেন ভালো অভিনেতা হলেও রাজ্জাকের সঙ্গে তার মোটাদাগে একটাই পার্থক্য- উত্তম কুমারের মতো জনপ্রিয়তা নিয়ে নায়ক হতে পারেননি তিনি। কারণ আনোয়ার হোসেন নবাব সিরাজদ্দৌলা, পরশমণি, শহীদ তিতুমীর, জীবন থেকে নেয়া, স্মৃতিটুকু থাক, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, সূর্যগ্রহণ, পালংক প্রভৃতি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একজন ভালো অভিনেতা হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন, নায়ক হিসেবে নয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজ্জাকের জনপ্রিয়তা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একের পর এক- জীবন থেকে নেয়া, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন ইত্যাদি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক হিসেবে এককভাবে জনপ্রিয় থেকে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন। এরপর ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্র রাজ্জাককে আলাদাভাবে জনপ্রিয় করে তোলে। কারণ সাধারণ ধারণার বাইরে এসে এখানে দেখানো হয়, নায়কও মদ খেয়ে মাতাল হতে পারেন। রাজ্জাক যখন জনপ্রিয়তার চরম তুঙ্গে তখনো ইন্ডাস্ট্রিতে আরও কয়েকজন নায়ক অভিনয় করতেন। সত্তরের শেষ এবং আশির দশকের শুরুর মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে আলমগীর, বুলবুল আহমেদ, জাফর ইকবাল, ওয়াসিম, ফারুক, সোহেল রানা নায়ক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। জনপ্রিয়ও হন। কিন্তু রাজ্জাকের মতো দীর্ঘস ময় নয়। মধুমিতা (১৯৭৮), রাঙা ভাবী (১৯৮৯), কসাই (১৯৮০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১) প্রভৃতি সিনেমায় আলমগীর প্রশংসিত হন। বুলবুল আহমেদও সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), দেবদাস (১৯৮২) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একটা সময় নায়ক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। আশির দশকে এসে এই ইন্ডাস্ট্রিতে অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র বেড়ে যায়। চরিত্রের প্রয়োজনেই এ সময় জনপ্রিয় হন জসিম। আশির দশক শেষে পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল নির্মাণ করেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা, (১৯৮৯) ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে। বলা যায়, এখন পর্যন্ত অন্য কোনো চলচ্চিত্রই ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র জনপ্রিয়তা ছুঁতে পারেনি। এ সিনেমার মাধ্যমেই নায়ক হিসেবে সফল পথচলা শুরু করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। একটি নির্দিষ্ট ভক্তমহলও তৈরি হয় তার। কারণ তিনি রোমান্টিক, অ্যাকশন দুই ধরনের চলচ্চিত্রেই দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু চলচ্চিত্রে তাঁর জনপ্রিয়তাকে তিনি নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ডে নিয়ে যেতে পারেননি। নব্বইয়ের দশকে নায়ক চরিত্রে মান্না, নাঈম, সালমান শাহ, শাকিল খান, রিয়াজসহ বেশ কয়েকজন নতুন মুখের সন্ধান মেলে। এদের মধ্যে নাঈম-শাবনাজ জুটি দু-চারটি ছবি করে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। তবে তা খুব বেশি দূর এগোয়নি। এ সময়ে দেশীয় চলচ্চিত্রের সাফল্যের বরপুত্র হয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন সালমান শাহ। রোমান্টিক ধাঁচের সিনেমা করে সালমান অভাবনীয় জনপ্রিয়তা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক হিসেবে তুঙ্গে পৌঁছে যান। সালমানের জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে ছিল যে, ১৯৯৬ সালে তার মৃত্যু সইতে না পেরে তার বেশ কজন ভক্ত আত্মহত্যা করেন। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়ই তিনি এককভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। মাত্র ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করা সালমান এখন পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছেন। তার অকালে মৃত্যুতে তার জায়গায় কেউ এসে আর দাঁড়াতে পারেননি। মান্না, রিয়াজ, শাকিল খান, আমিন খান, নাঈম, ওমর সানী, রুবেলসহ অনেকে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ সালমান শাহর রোমান্টিক ইমেজকে তারা কেউই ধারণ করতে পারেননি। তাই ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে নির্মাণ শুরু হয় অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র। এ ধারার নায়ক হিসেবে মান্না জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর ২০০৮ সালে হঠাৎ করেই সালমানের মতো বিদায় নেন মান্না। তারপর এককভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শাকিব খান। যিনি একসময় মান্নার সহযোগী হিসেবে অভিনয় করতেন। মান্নার মৃত্যুর পর ইন্ডাস্ট্রিতে অন্য নায়করা তেমনভাবে অভিনয় দক্ষতা দেখাতে না পারায় শাকিব খান হয়ে ওঠেন একাই এক শ। আসলে কোনো একজন নায়ক ইন্ডাস্ট্রিতে ‘এক নায়ক’ হয়ে ওঠার পেছনে যে বিষয়টি মুখ্য তা হলো অভিনয়ের প্রতি আন্তরিকতা ও নায়ক তৈরিতে নির্মাতার দক্ষতা। এর দুটির অভাব বেশির ভাগ শিল্পী ও নির্মাতার মধ্যে আজও বিদ্যমান বলে যুগে যুগে ঢাকাই চলচ্চিত্রে কোনো না কোনো নায়ক ‘এক নায়কে’ পরিণত হন। এটি সংশ্লিষ্টদেরই সু-অর্জন বলা যায়।
শিরোনাম
- ‘১৮৫ পোশাক কারখানা বন্ধ, হাজারো শ্রমিক বেকার’
- সোনারগাঁয়ে গণধর্ষণসহ ১০ মামলার আসামি গ্রেপ্তার
- বর্ণাঢ্য আয়োজনে বেরোবির ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
- বগুড়ায় চোরাই মোটরসাইকেলসহ চোর গ্রেপ্তার
- বরিশাল মেডিকেলে দুটি ল্যাব ও অটোমেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন
- ১১ দিনেই রেমিট্যান্স এলো ১২ হাজার ২৪ কোটি টাকা
- বগুড়ায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন
- বগুড়ায় প্রতারণার মাধ্যমে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাত, যুবক গ্রেপ্তার
- এ বছর ফিল্মফেয়ার জিতলেন যারা
- রাতের অন্ধকারে নয়, আমরা স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই: সিইসি
- চার শীর্ষ ধনীর হাতে এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী চার মাধ্যম
- নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বিজিবি সদস্য আহত
- শেরপুরে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার
- নরসিংদীতে সিসা তৈরির কারখানায় আগুনে দগ্ধ ৭ শ্রমিক
- পরিবহন ধর্মঘটে অচল নেত্রকোনা, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা
- ইশরাকের সাথে বিয়ে কবে? ফেসবুক পোস্টে জানালেন নুসরাত নিজেই
- ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না : আহমদ তৈয়্যব
- পাকিস্তানের ২৫ সীমান্তপোস্ট দখলের দাবি তালেবানের
- লক্ষ্মীপুরে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন উদ্বোধন
- জামায়াত আমিরের সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
এক নায়কের কবলে কেন ঢাকাই চলচ্চিত্র
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর