মহানায়িকা কিংবদন্তি সুচিত্রা সেন অসুস্থ। এ কথা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। কারণ প্রায় চার দশক নিভৃতচারিণী হয়েও শুধু চলচ্চিত্র প্রেমীই নন, সব বয়সের মানুষের মনে রয়েছেন তিনি চির সবুজ আর জ্বলজ্বলে হয়ে। এ এক অপার বিস্ময়। পরম করুণাময়ের কাছে তার রোগমুক্তি এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
এত বড় মাপের একজন অভিনেত্রী সম্পর্কে বলার মতো ক্ষমতা আমার কতটুকু আছে জানি না। তবুও তাকে ঘিরে আমার মনের গহিনে দীর্ঘদিনের লালিত কিছু কথা বলতে চাই। আমি তখন অনেক ছোট। পরিবারের সবার সঙ্গে যশোরে থাকতাম।
আমাদের পরিবারে পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল। মায়ের কাছ থেকে সংস্কৃতিকে কীভাবে ভালোবাসতে হবে তা শিখেছি। ওই সময় যশোরে ভারতীয় বাংলা সিনেমা কিছু প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন হতো। সুচন্দা আপু তখন পরিবারের সবাইকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করতেন হলে গিয়ে ছবি দেখতে। ছবি দেখে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সুচন্দা আপু সুচিত্রা সেনের অভিনয়কে অনুকরণ করে সংলাপ বলতেন। আমি লুকিয়ে তা দেখতাম। সুচন্দা আপুর মাধ্যমে আমিও সুচিত্রাকে নিজের মনে আইডল হিসেবে দাঁড় করালাম। বড় বোন সুচন্দা চলচ্চিত্রে অভিনয় করার উৎসাহ পেয়েছেন সুচিত্রা সেন থেকে। আমার চলচ্চিত্রে আসার পেছনেও সুচিত্রা সেনের পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। আমি সবসময়ই তার মুগ্ধ ভক্ত। তার অভিনীত সব ছবিই অসংখ্যবার দেখেছি এবং এখনো সুযোগ পেলেই দেখি। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের ভুবনকে শুধু সমৃদ্ধই করেননি, বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচয়বাহী হয়ে উঠেছেন। তার অভিনীত একেকটি চলচ্চিত্র যেন একেকটি ইতিহাস। তার চিন্তা-চেতনা পরবর্তী চলচ্চিত্র অভিনেত্রীদের সৃজন প্রক্রিয়াকে শাণিত করেছে। নিজস্ব অভিনয় শৈলী আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করার ক্ষমতা বোধ হয় একমাত্র এই মহানায়িকার মধ্যেই আছে। এমন একজন বিস্ময় জাগানিয়া মহান মানুষকে আমরা হারাতে চাই না কখনো। লাখো কোটি বছর বেঁচে থাকুন তিনি আমাদের মাঝে একজন আইডল হয়ে।
শ্রুতলিখন : আলাউদ্দীন মাজিদ