এই নিয়ে পাঁচবার বেলভিউতে ভর্তি হলেন মহানায়িকা। শেষবার হাসপাতাল ছাড়ার আগে নিজের হাতে সাদা কাগজে হাসপাতালের একটি প্রশংসাপত্র লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। ওই হাসপাতালে তাঁর প্রাইভেসি কোনওভাবেই বিঘ্নিত হয় না বলে ঘনিষ্ঠজনদের একাধিকবার জানিয়েছেন সুচিত্রা সেন। এবারও তাই বড়দিনের রাতে অসুস্থ হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিয়ে ছুটে আসেন দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের এই নার্সিংহোমে।
হাসপাতালের একটি আইটিইউ স্যুইটে থাকা সুচিত্রা সেনের ঘরে পরিচিত ডাক্তার ছাড়া বাকিদের প্রবেশ নিষেধ। ব্যতিক্রম ঘটল কাল। এক প্রবীণ ব্যক্তি দোতলার নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা মেরে হঠাৎ করেই পৌছে যান মহানায়িকার কেবিনের কাছে। সিসিটিভি মনিটরে এই ছবি দেখে পড়িমরি করে ছুটে আসেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। নিজেকে বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্মী পরিচয় দেওয়া ওই বৃদ্ধ জানান, তিনি সঙ্কটজনক সুচিত্রাকে দেখতে ছুটে এসেছেন জয়পুর থেকে। ৬২ সালে কোনও এক শুটিং স্পটে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল মহানায়িকার। ওই সময় তাঁর সঙ্গে সুচিত্রা সেন কথা বলেছিলেন বলেও দাবি করেছেন ওই বৃদ্ধ। বুঝিয়ে কোনও রকমে মহানায়িকার ওই প্রবীণ গুণমুগ্ধকে বিরত করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। এরকম বহু টুকরো টুকরো ঘটনার স্মৃতি ঘুরে ফিরে আসছে নার্সিংহোম কর্মীদের মনে। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান এটাই প্রার্থনা সবার।
সচারচর অন্য কাউকে তাঁর কেবিনে পাঠান না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। দু'একবার সমস্যায় পড়ে অন্য লোক পাঠাতে হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই অপিরিচিত কেউ ঘরে ঢুকলেই দ্রুত চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে নেন সুচিত্রা। ঠিক এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে তাঁকে আইটিইউতে শিফট করার দিন। আইটিইউর বিশেষ স্যুইটে ঢুকে মুনমুন সেন আবিষ্কার করেন চেয়ারগুলো সামান্য অপরিষ্কার। ততক্ষনাৎ নির্দেশ দেন সব পরিষ্কার করার। নিরুপায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অন্য এক কর্মীকে চেয়ারগুলি বার করতে ঘরে পাঠান। তাঁকে ঘরে ঢুকতে দেখেই মুখ ঢেকে ফেলেন সুচিত্রা। মুখ ঢাকা অবস্থাতেই প্রশ্ন করেন তুমি কে? তোমায় তো আগে দেখিনি। যতক্ষণ ওই কর্মী চেয়ার বার করেছিলেন ততক্ষণ আগাগোড়া মুখ ঢেকে রেখেছিলেন মহানায়িকা।
সুচিত্রা সেন যাতে আর বিড়ম্বনায় না পড়েন তাই তাঁর অপরিচিত ডাক্তার , নার্স, কর্মী কাউকে কেবিনে এখন আর পাঠাচ্ছেন না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। বাড়ানো হয়েছে কেবিনের নিরাপত্তাও।
সুচিত্রা সেনের খাবার পৌছে দেন হাসপাতালের দুই কর্মী। একজন গৌর অন্যজন সন্ন্যাসী। গৌর এবং সন্ন্যাসীর সাথে গত কয়েকদিনে রীতিমত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সুচিত্রা সেন। এই দুজন ছাড়া অন্য কেউ তাঁর খাবার নিয়ে আসুক তা চান না মহানায়িকা। সুচিত্রার আবদারের মুখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে বাতিল করতে হয়েছে এ দু'জনের ছুটি। শান্তনা দেওয়া হয়েছে সবছুটি পরে পুষিয়ে দেওয়া হবে। হাসি মুখেই মহানায়িকার এই আবদার মেনে নিয়েছেন গৌর ও সন্ন্যাসী।
আট ঘণ্টার শিফটে তিনজন নার্স পর্যায়ক্রমে ডিউটি করছেন আইটিইউতে। মহানায়িকা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অন্য কেউ নয় , ওই তিনজনকেই আসতে হবে। মায়ের এই আবদার মেনে নিয়েছেন মুনমুনও। তাই ছুটি বাতিল করে তিনজন নার্স একটানা ডিউটি করে যাচ্ছেন আইটিইউতে। এদের মধ্যে একজন কেয়া। যাঁকে বরাবরই খুব ভালবাসেন সুচিত্রা সেন। বলেছেন, আমি যদি সুযোগ পেতাম, আমি তোকে সিনেমায় নামাতাম। অসুস্থ থাকাকালীন মহানায়িকার বাড়িতে একাধিকবার ডিউটি করেছেন কেয়া। এই চেনা মুখ গুলোর বাইরে অন্য কেউ তাঁর কেবিনে ঢুকুক তা মহানায়িকার মোটেই পছন্দ নয়।