সব জোয়ারের শেষেই ভাটা আসে। এটাই নিয়ম। কিন্তু 'ইত্যাদি'র ক্ষেত্রে নিয়মটি উল্টে গেছে। 'ইত্যাদি'র কোনো ভাটা নেই। বিবিসির এক জরিপে দেখা যায়, উন্মুক্ত আকাশ-সংস্কৃতির যুগেও দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ 'ইত্যাদি' দেখে। দীর্ঘদিনের সফল এই অনুষ্ঠানটি আজ ২৫ পেরিয়ে ২৬ বছরে পা ফেলবে। দীর্ঘ এই পথে এই অনুষ্ঠান তুলে ধরেছে নানা অসঙ্গতি, খুঁজে এনেছে নানা সাফল্যের খবর। 'ইত্যাদি'র এই বিশেষ দিনে কথা হয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের জাদুকর হানিফ সংকেতের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথোপকথনের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো_
শুরুতেই জাতীয় পরিবেশ পদক পাওয়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
ধন্যবাদ। তবে এখনো হাতে পাইনি। পাব বলে আমিও জেনেছি।
২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানটি কেমন হবে?
আমি তো বানিয়েছি, কেমন হবে সেটা দর্শক বলবেন।
কিন্তু এখন ঢোল পেটানোর যুগ। সবাই নিজে নিজেই বলে, আমার অনুষ্ঠানটি খুব ভালো হয়েছে।
আমার কোনো ঢোল নেই, তাই পেটাই না। উল্টো আমার সব সময় ভয় থাকে_ যদি দর্শক অনুষ্ঠানটি ভালো না বলে!
আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কিংবা বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে দেখা যায় বিশিষ্ট ব্যক্তি বা তারকাদের মন্তব্য নেওয়া হয় অনুষ্ঠান বা চ্যানেল সম্পর্কে। শুনলাম আপনার এই পঁচিশ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে তেমন কোনো বক্তব্য নেই?
ঠিকই শুনেছেন। কোনো পরিকল্পনা নেই। আচ্ছা আপনিই বলুন, আজ পর্যন্ত কোনো চ্যানেল বা অনুষ্ঠানের পূর্তি উৎসবে কাউকে দেখেছেন খারাপ বলতে? বলেনি। কোনো সমালোচনাও করে না। তাই আমি মনে করি এসব মন্তব্য প্রচার করা মানে সময় নষ্ট। এই লোক ডেকে ভালো বলার আয়োজন না করে সেই শ্রমটা অনুষ্ঠানের পিছনে দেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে নাচ-গান কার থাকছে?
থাকছে আবার থাকছেও না। বিষয়টি অনুষ্ঠান দেখলেই বুঝতে পারবেন। আসলে আমরা দর্শকের রুচিকে এমন করে ফেলেছি। অনুষ্ঠানে নাচ-গান থাকতেই হবে। এ ধরনের কোনো নীতিমালা নেই। যেহেতু সারা বছর ধরেই আমরা হাজার হাজার দর্শক নিয়ে অনুষ্ঠান করছি, প্রায় সব অনুষ্ঠানেই ভিন্নভাবে নাচ-গানের পরিবেশনা থাকছে, সুতরাং পূর্তি অনুষ্ঠানেও সেগুলো রাখতে হবে কেন?
আপনি তো কখনোই কোনো 'পূর্তি অনুষ্ঠান' করেননি। হঠাৎ 'পঁচিশ বছর পূর্তি'র অনুষ্ঠান?
আমাদের পূর্তি অনুষ্ঠানটি সে রকম না। আমি তো কোনো হোটেলের হলরুম ভাড়া করে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ডেকে বিভিন্ন চ্যানেলের টিভি ক্যামেরায় খবর দিয়ে লাইভ করছি না। খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠানও করছি না। আমরা শুধু দর্শকদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য বলছি '২৫ পেরিয়ে ইত্যাদি'। আর বিশেষ করে এই প্রজন্ম অর্থাৎ যাদের বয়স ২৫ কিংবা তার চাইতে কম তারা ইত্যাদির অতীতটা সম্পর্কে জানে না। তাদের জন্যই মূলত ইত্যাদির অতীত থেকে বর্তমানের কিছু বিষয় তুলে ধরার জন্যই এই অনুষ্ঠান।
তাহলে তো অনুষ্ঠানটি বড় হবে?
চাহিদা অনুযায়ী বড় হবে না। এক ঘণ্টার জায়গায় দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠান হবে। তবে ২৫ বছরের এই শত শত ঘণ্টার অনুষ্ঠানের বিভিন্ন মুহূর্ত এই স্বল্প সময়ে তুলে ধরা সম্ভব নয়।
কয়েক পর্বে প্রচার করলেই পারতেন।
মনে রাখতে হবে, এটা বিটিভি, প্রাইভেট চ্যানেল নয়। যা ইচ্ছা করা সম্ভব নয়। এই ৯০ মিনিট সময় বরাদ্দ করতেও আমাকে ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। তবে ইত্যাদির প্রতি বিটিভি কর্তৃপক্ষের ভালোবাসা আছে। কারণ অনুষ্ঠানটি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিটিভিতেই প্রচার হচ্ছে।
স্যাটেলাইটের এই যুগে এখনো ইত্যাদির মতো একটি জনকল্যাণমূলক অনুষ্ঠান নিয়ে আপনি বিটিভিতে আছেন কেন?
কারণ আমি ২/৩ মাস কষ্ট করে একটি অনুষ্ঠান বানাই। আমি চাই বেশি সংখ্যক দর্শক যাতে আমার অনুষ্ঠান দেখতে পায়। কারণ দর্শকের জন্যই অনুষ্ঠান। এখনো বিটিভির দর্শক অনেকগুণ বেশি।
'ইত্যাদি' ২৫ বছর ধরে করলেন। আর কতদিন করবেন?
যতদিন দর্শক চাইবে এবং অনুষ্ঠান করার মতো শারীরিক ক্ষমতা থাকবে। আগেও বলেছি দর্শকের প্রতি আমার অঢেল শ্রদ্ধাবোধ। তারা না চাইলে জোর করে অনুষ্ঠান করব না। কারণ সারা জীবন দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি_ সেটা হারাতে চাই না।
জীবনে এত সাফল্যের পরও কোনো অপ্রাপ্তির হিসাব আছে কি?
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে ভাবি না। তবে আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনে কাজের মাধ্যমে যদি কিছুটা হলেও মানুষের উপকারে আসতে পারি সেটাই আনন্দের, কারও মুখে যদি একটুখানি হাসি ফুটে ওঠে সেটাই আমার বড় প্রাপ্তি।
দর্শক আপনাকে আরও বেশি পর্দায় দেখতে চায়।
সে জনেই বলি দর্শকের ভালোবাসায় আমি ধন্য। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একটি সিডিউল মেনে ইত্যাদি প্রচারিত হয়ে আসছে এবং আমাকে সেই সিডিউল অনুযায়ী অনুষ্ঠান দিতে হচ্ছে। যে কারণে পুরোটা সময় আমাকে ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। অন্যকিছু করার সুযোগ কম।
মিডিয়াতে আপনার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, শুরুর দিকের অনেকগুলো চ্যানেলের উদ্বোধন থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, স্লোগান দেওয়া অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িতও ছিলেন। আপনার নিজেরই তো একটি চ্যানেল দেওয়া উচিত। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
আপনি-আমি উচিত বললে তো হবে না। বাস্তবতা ভিন্ন। এ ধরনের পরিকল্পনা কল্পনায় ছিল। তবে এই কল্পনার বাস্তবায়ন করতে গেলে অর্থনৈতিক কারণে অন্যের দ্বারস্থ হতে হবে। তখন আর ওই চ্যানেল ইচ্ছা থাকলেও আমার চিন্তা-চেতনায় চালাতে পারব না। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম করা সম্ভব নয়।
পঁচিশ বছরের এই সময়ে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠানের জন্য নুতন কি ভাবছেন?
কিছুই না। কারণ কোনো বিশেষ উপলক্ষ এলেই অনুষ্ঠানের জন্য নুতন সংযোজন-বিয়োজন নিয়ে ভাবতে হবে_ এটাতে আমি বিশ্বাসী নয়। ইত্যাদি সব সময়েই নুতন আঙ্গিকেই হয়। আমরা প্রতিটি অনুষ্ঠান নিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছি। সেই স্থানের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি নিয়ে অনুষ্ঠান সাজাচ্ছি। এভাবে স্থান পরিবর্তনের কারণে প্রতিটি ইত্যাদিই নুতন হয়ে ওঠে।শোবিজ প্রতিবেদক