ফিল্মি নাচে যেমনটি হয়, ঠিক তেমন করেই এক পুলিশকর্মী শাহরুখের সঙ্গে নাচছেন। শাহরুখও তাকে সিনেমার নায়িকার মতোই কোলে তুলে তালে তালে চক্কর কাটছেন। আর চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম! নারী সহকর্মীকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনা দুয়েক পুলিশও মঞ্চে উঠে নাচলেন!
দর্শক আসনের সামনের সারিতে বসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনারসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। মঞ্চে ‘জব তক হ্যায় জান’-এর সুরে শাহরুখ খানের সঙ্গে নাচছেন কলকাতা পুলিশের পোশাক পরা এক নারী কর্মী।
শনিবার সন্ধ্যা। কলকাতা পুলিশের আয়োজনে জমজমাট ‘জয় হে’। সেই অনুষ্ঠানেই তরুণী পুলিশকর্মীর এমন নাচ দেখে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির অনেকেই।
তারা বলছেন, ওই তরুণী শাহরুখের সঙ্গে নাচতেই পারেন। কিন্তু পুলিশের উর্দি পরে প্রকাশ্যে এমন নাচগান করা যায় কি না, প্রশ্নটা সেখানেই। যদিও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলছেন, 'এটা সামাজিক অনুষ্ঠান। বিষয়টিকে সেই প্রেক্ষিতেই দেখা উচিত।'
দেশটির পুলিশের ‘রুল বুক’ বলছে, পুলিশের পোশাকের নিজস্ব একটি সম্ভ্রম রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মী যে শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর সদস্য, তার প্রমাণই হল ওই পোশাক। কোথায় ওই পোশাক পরে যাওয়া যায়, কোথায় যায় না তা-ও নির্দিষ্ট করা রয়েছে ‘রুল বুকে’।
নিয়ম অনুযায়ী, পুলিশের পোশাক পরে পারিবারিক কাজও করা যায় না। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি অরুণপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, উর্দি পরে নাচানাচি বাঞ্ছনীয় নয়।
তার কথায়, 'কী পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশকর্তারাই বলতে পারবেন।'
পুলিশের একাংশই বলছেন, পুলিশের ইউনিফর্ম পরে এমন কাজ উচিত নয়। কিন্তু এমন অনুষ্ঠানে ওই পোশাক পড়ে যেতে হবে কেন, প্রশ্নটা সেখানেই। মুম্বাই পুলিশেরও এমন অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু সেখানে ওই পোশাক পড়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলেন, 'এখানে তো প্রতি থানা থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যার উর্দি পড়া কর্মী অনুষ্ঠানে পাঠাতে হয়।'
এ প্রসঙ্গে সাবেক মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেনের বক্তব্য, 'কী ধরনের অনুষ্ঠান হবে, সেটা নীতিনির্ধারকেরা ঠিক করেন। যেমন মেজাজ তৈরি হয়েছে, তেমনভাবেই অনুষ্ঠান এগিয়েছে। বেচারি পুলিশকর্মীকে দোষ দিয়ে কী লাভ!'