পরীমণি, তার সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। হালের অন্যতম আলোচিত উঠতি নায়িকা। ছবি মুক্তির আগেই যে কজন অভিনেত্রী আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ইতিমধ্যে দেড় ডজন ছবিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন পরীমণি। এসব ছবিতে সায়মন, বাপ্পি, শাহরিয়াজ, জায়েদ খান থেকে শুরু করে ঢালিউড কিং শাকিব খান পর্যন্ত রয়েছেন তার বিপরীতে। এখানেই শেষ নয়, হিটার নামে আরও একটি ছবিতে সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। রাকিবুল রাকিব পরিচালিত এ ছবির শুটিং শুরু হবে ১৫ আগস্ট থেকে।
একদিকে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন, অন্যদিকে শুটিং চালিয়ে যাচ্ছেন পরী। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মায়াজালে আটকা পড়েছেন লাস্যময়ী এ অভিনেত্রী। এরই মাঝে এক নারী পরিচালকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি ও শাকিব খানের সঙ্গে একটি চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেন পরীমণি। কিন্তু কেউ কেউ প্রশ্ন ছুড়ছেন— পরী কি সত্যিই ডানা মেলতে পারবে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে একটু পিছনে যেতে হবে। কাঁদলে কেমন বিমর্ষ দেখায়, হাসলে রূপটা কেমন ঝলমল করে তা নিয়ে ভেবে অবসর সময় কাটানোর অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই পরীমণির। ভালো লাগা থেকে গুনগুন করে গান গাওয়ার রেওয়াজও করতেন নিয়মিত। এ বিষয়টিই চোখে পড়ে তার নানার। ভর্তি করিয়ে দেন গানের স্কুলে। তখন থেকে গানের পাশাপাশি নাচও আয়ত্ত করেন বেশ ভালোভাবেই। স্কুল ও পরিচিত মহলে তার নাচ ও গানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে অল্পদিনের মধ্যেই। এর পরের গল্প সবারই জানা। গত বছরের মাঝামাঝি এশিয়ান টেলিভিশনের দ্বিতীয় ইনিংস নাটকে অভিনয়ের পরপরই দ্রুত সময় পাল্টায় পরীর। ওই নাটকে ইলিয়াস কাঞ্চন ও চম্পার মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তাদের সঙ্গে কাজ করা পরীকে এগিয়ে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। উত্সাহ জোগায় মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়তে। বলে রাখা ভালো, এর আগে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ফটো শুট মডেলের কাজ করেন পরিমণি।
এর পর চুক্তিবদ্ধ হন শাহ আলম মণ্ডলের ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবিতে। এতে তার বিপরীতে রয়েছেন জায়েদ খান ও মিলন। এরই মাঝে নজরুল ইসলাম খানের ‘রানা প্লাজা’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আলোচনায় আসেন পরীমণি। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেশমা ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে। সাভারের সেই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিকে ঘিরে নির্মিত হওয়ায় মিডিয়াপাড়ার আগ্রহে পরিণত হয় এ ছবিটি। ব্যাপকভাবে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায়ও কভারেজ পায় এটি। অন্যদিকে চলতে থাকে একের পর এক ছবির প্রস্তাব ও চুক্তিবদ্ধ হওয়া। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ভালোবাসা সীমাহীন, রানা প্লাজা, মনজুড়ে তুই ও পুড়ে যায় মন। এছাড়া শুটিং চলছে মন জানে না মনের ঠিকানা, লাভার নাম্বার ওয়ান ও ধূমকেতুসহ আরও কয়েকটি ছবির। এছাড়া হাতে রয়েছে এফআই মানিকের সারপ্রাইজ, শাহিন সুমনের প্রবাসী ডন, ফারুক ওমরের ভালোবাসা অনেক জ্বালাসহ আরও কয়েকটি ছবি। সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মহুয়া সুন্দরী নামে আরও একটি ছবিতে।
মাত্র দেড় বছরের ক্যারিয়ারে এতগুলো ছবির সঙ্গে কিভাবে সিডিউল ধরে রাখছেন তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়। তবে ছবি মুক্তির মিছিলে সবার আগে 'রানা প্লাজা' মুক্তি পাক এটাই প্রত্যাশা রাখছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে এ ধরনের একটি ছবি আপামর জনতা থেকে শুরু করে সর্বোচ পর্যায়ের ব্যক্তিরা দেখার আগ্রহ দেখাতে পারেন। কারণ সেই ট্র্যাজেডি এখনো অনেককে কাঁদায়। কিন্তু বাদ সেধেছে সেন্সর বোর্ড। এখন পর্যন্ত ক্লিয়ারেন্স পায়নি ছবিটি। জানা গেছে, ছবিটির নাম নিয়ে আপত্তি তুলেছে বোর্ড।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, এটা সত্য যে সেন্সর ক্লিয়ারেন্স পেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। কিছু বিষয়ে তারা আপত্তি জানিয়েছে। আশা করি এ মাসের মধ্যেই ছাড়পত্র পেয়ে যাব। অন্যদিকে বাকি পরিচালকরাও চাচ্ছেন রানা প্লাজার মাধ্যমেই বড় পর্দায় পরীমণির আবির্ভাব ঘটুক। কারণ এ ছবিটির সফলতার ওপর নির্ভর করছে আরও প্রায় দেড় ডজন ছবির।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পরীমণি বলেন, আমারও ইচ্ছা রানা প্লাজা আগে মুক্তি পাক। যদিও আমার প্রথম ছবি ভালোবাসা সীমাহীন। রানা প্লাজাতে অভিনয়ের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। শুধু তাই নয়, কিছু বিপজ্জনক দৃশ্যে কোনো ডামি বা স্ট্যান্টম্যান ব্যবহার করিনি। সরাসরি আমিই ছিলাম। এমনকি একটা শটে হাত-পা কেটে ও কোমড়ে আঘাত পেয়ে অনেকটা আহত হই। এফডিসিতে দৃশ্যায়ন করা ওই অংশটুকু এখনো আমার চোখে ভাসে।
এদিকে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বলছেন, রানা প্লাজা মুক্তি পেতে যদি দেরি হয় তাহলে পরীর উচিত হবে শাকিব খানের বিপরীতে ধূমকেতু ছবির মাধ্যমে রুপালি পর্দায় আবির্ভাব হওয়ার। ইতিমধ্যে ছবিটির কাজ অনেকাংশে শেষ হয়ে গেছে। কয়েকটি গানের চিত্রায়নের জন্য শীঘ্রই দেশের বাইরে যাচ্ছে ধূমকেতুর ইউনিট। সবকিছু ঠিক থাকলে এ ছবিটি ঈদুল আজহার সময় মুক্তি দিতে পারবেন পরিচালক শফিক হাসান।
অন্যদিকে সমালোচকরাও মাঝে মাঝে খই ফোটাচ্ছেন পরীকে নিয়ে। প্রশ্ন ছুড়ছেন তার চুক্তিবদ্ধ হওয়া নিয়ে। তাদের মতে পরীর উচিত আপাতত আর কোনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ না হওয়া। নির্মাণাধীন ছবিগুলো নিয়েই তিনি যেন ব্যস্ত থাকেন। এতে করে অভিনয়ে আরও মন দিতে পারবেন পরী। এখন দেখার পালা, পরী কি সত্যিই ডানা মেলতে পারে কিনা?