থিয়েটার চর্চার সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হয়েছিলেন?
স্কুলজীবন থেকেই শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসরের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। ১৯৮০ সালে বগুড়া থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হই।
সম্প্রতি আপনার সংগঠন থেকে কি কাজ করেছেন?
বগুড়া থিয়েটারের বিভিন্ন নাটক নির্দেশনা, নাটক রচনা ও থিয়েটারের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত রেখেছি। বৈশাখী মেলা, আন্তঃজেলা নাট্যোৎসব, নাট্য প্রশিক্ষণ, গ্রাম থিয়েটার আন্দোলন, শিশুদের সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আন্দোলনে বগুড়া থিয়েটার অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
স্থানীয় পর্যায়ে নাট্যচর্চায় প্রতিবন্ধকতা কি?
পৃষ্ঠপোষকতা, ভালো মঞ্চ, মহিলা নাট্যকর্মী, আর্থিক অনুদানসহ সামাজিক স্বীকৃতির অভাব রয়েছে। এছাড়া ভালো নাটক মঞ্চায়নে টেকনিক্যাল বিভাগে তেমন দক্ষ নাট্যকর্মী নেই। বর্তমানে ভালো নাট্যকর্মীর অভাব সবচেয়ে বেশি। পাণ্ডুলিপিরও অভাব আছে।
বগুড়ায় গ্রাম থিয়েটার চর্চা বেশ সক্রিয়। এটা কিভাবে হলো?
১৯৮১ সালের দিকে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ও নাসির উদ্দিন ইউসুফের উদ্যোগে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের জন্ম। প্রতিষ্ঠালগ্নেই বগুড়া থিয়েটার গ্রাম থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। শুরু থেকেই বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গ গ্রাম থিয়েটার আন্দোলন উজ্জীবিত হয়। গ্রাম থিয়েটারের আরেক কর্মী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। সবার আন্তরিক উদ্যোগে নিয়মিত মাসিক সভা, সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ, নাট্য প্রশিক্ষণ, নাট্যোৎসব, পথ নাট্যোৎসব, নতুন নাট্যকর্মী সংগ্রহ, নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন এবং সর্বোপরি স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততার কারণেই বগুড়া জেলায় গ্রাম থিয়েটারচর্চা খ্যাতি অর্জন করেছে। বর্তমানে বগুড়া জেলায় ১৮টি ইউনিট রয়েছে বিভিন্ন উপজেলায়। মাসিক বা ত্রিমাসিক প্রতিটি ইউনিটে সভা করার মধ্য দিয়ে নিয়মিত সাংগঠনিক মনিটরিং করা হয়। ফলে এ অঞ্চলে গ্রাম থিয়েটার সংগঠন বেশ শক্তিশালী।
থিয়েটারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্তা কিভাবে বাড়ানো যায়?
একটি নাটক একটি দেশ, সমাজের প্রতিচ্ছবি। নাটকের মধ্য দিয়েই একটি জাতি তার পরিচিতি লাভ করে। আর নাটক দর্শকের সামনে মঞ্চায়ন হয়। সেই দর্শকের মধ্যে সাধারণ মানুষ, কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক, চাকরিজীবী, ছাত্রসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ ও পেশাজীবী থাকে। দর্শক ছাড়া নাটক মঞ্চায়ন কল্পনাও করা যায় না। আর তাই নাটকের দর্শকের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এবং সম্পৃক্তা বাড়াতে গেলে মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি পথনাটক, বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ভিত্তিক ও সাধারণ মানুষের কথা, লড়াই সংগ্রাম নিয়ে বেশি বেশি নাটক রচনা ও মঞ্চায়ন করতে। আর এ মঞ্চায়ন শুধু শহরে নয়, ছড়িয়ে দিতে হবে গ্রামগঞ্জে।
থিয়েটার নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের মূল দর্শন 'এ জনপদের মানুষের সংস্কৃতির শিকড় সন্ধানী অভিযাত্রী হওয়া'। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে আত্দীকৃত করে বিশ্ব নাট্যমঞ্চে বাংলা নাট্য আঙ্গিক গড়ে তোলা। অনবরত সংগ্রামমুখর এই জনজীবনের বিচিত্র জীবনভাষ্য নিয়ে নাটক মঞ্চায়ন এবং আদি বাংলা নাটকের আঙ্গিক নির্মাণ করা। শ্রমজীবী মানুষের শোষণ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, মৌলিক চাহিদা, লড়াই, সংগ্রাম চিত্রিত হোক আমাদের থিয়েটারের। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠা হোক বাঙালি সংস্কৃতি। বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিজ্ঞানসম্মত মূল্যায়ন করে নাট্য আন্দোলনকে তার মূল অভিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই ডামাডোলে উজ্জীবিত করতে চাই চিরায়ত বাংলা নাট্য মঞ্চ, বাংলা নাট্য আঙ্গিক। ষ আবদুর রহমান টুলু