আসলে মানুষের জীবনের সময়কাল বিশ্লেষণ করা খুবই মুশকিল। আমার চলচ্চিত্রের ৫০ বছর কেমন করে কেটেছিল বা কাটল আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। জীবনের শুরু এবং শেষ কেমন এবং কবে শেষ হবে বা শুরু হয়েছিল বলা মুশকিল।
যাই হোক, যতদূর সম্ভব সুতরাং দিয়ে শুরু এমপি দিয়ে কমা (,) এখন ছবি পরিচালনার কাজ শুরু করেছি। ৫০ বছর এ প্রাপ্তির ঝুলিতে অনেক ঘটনা, অনেক গল্প, অনেক স্মৃতি জমা হয়েছে। কখনো আনন্দ, কখনো বিষাদ, কখনো দুঃখ- এগুলো স্মৃতি হয়ে কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়। 'জীবন যখন যেমন'। একটা সময় ছিল বুঝতে পারতাম কম, তখন বিড়ম্বনাও ছিল কম।
আমাদের চলচ্চিত্রগুলো বেশির ভাগ তখনকার সামাজিক গল্পনির্ভর ছিল। মোটকথা যে ঘটনাগুলো সাধারণভাবে মানুষ বিশ্বাস করত তাই নিয়ে গল্প, তাই নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হতো। তবে আমাদের পরিচালক, শিল্পী, কুশলী তেমন কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল না। আমার মনে হয় ভারত এবং হলিউড এই দুই জায়গা থেকে আমাদের চলচ্চিত্র তৈরির বাসনা জাগে। তারপর তো ছবি তৈরি একটু একটু করে শুরু হয়ে গেল। ছবিও তৈরি হয়ে গেল। আমাদের একটা জায়গা তৈরি হলো। তারই সুবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের একজন অভিনেত্রী হয়ে ফেস্টিভ্যালে ধঃঃবহফ করি। স্পেনে গিয়ে জুরি বোর্ডের মেম্বার হতে পেরেছি। দেশে-বিদেশের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে সুনাম পেয়েছি। এগুলো তো ৫০ বছরের বিশাল প্রাপ্তি। মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, অংশগ্রহণ করেছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের জন্য কাজ করতে পেরেছি। অনেক সুধী মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। পাঁচটি সন্তানের জননী হতে পেরেছি। মহাভারতের দ্রোপদী অর্থাৎ পঞ্চপাণ্ডবের মা হতে পেরেছি। রাজনীতিতে ইতিবাচক কাজ করে মেম্বার অব পার্লামেন্ট হতে পেরেছি। এগুলো হিসাব করলে মনে হয় ৫০ বছরে মোটামুটি মোটা দাগের বেশ কিছু কাজ করতে পেরেছি। কিন্তু আমি তো আরও কাজ চাই। যাই হোক, আমার কাজ নিয়ে সবার মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। এই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি ধন্য হয়েছি। এ দেশের মানুষের কাছে আমি ঋণী। সেই বিখ্যাত গানটি গেয়ে শেষ করি। 'আমি যা পেয়েছি সেটুকুতে খুশি আমার মন।'