কবরী, যাকে আমি বলি কালোত্তীর্ণ শিল্পী। সবার কাছে মিষ্টি মেয়ে। তিনি এমন এক অভিনেত্রী যিনি হাসলেও লাখ টাকা কাঁদলেও তাই। চিত্রশিল্পীদের কাছে ভালো রঙের কদর যেমন, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে কবরীর মূল্যায়নও ঠিক তেমনি। ভালো রং দিয়ে চিত্রশিল্পীরা স্বাচ্ছন্দ্যে এঁকে যান। চলচ্চিত্রকাররাও কবরীকে নিয়ে যে কোনো চরিত্রে সাবলীলভাবে কাজ করতে পারেন। তিতাস একটি নদীর নাম, সারেং বৌ, দেবদাস-এর মতো ভিন্ন মেজাজ ও গল্পের ছবিতে নানা চরিত্রকে যথাযথভাবে ধারণের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন কবরী। প্রখ্যাত সব নির্মাতার ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। কলকাতায় যেমন উত্তম-সুচিত্রা, আমাদের কাছে তেমনি রাজ্জাক-কবরী। এ উপমহাদেশে এ দুই জুটির কোনো তুলনা নেই। কবরী শুধু একজন অভিনেত্রী বা চলচ্চিত্রকার নন, একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবী, রাজনীতিবিদসহ অনেক অহঙ্কারের নাম। একজন নির্বাচিত এমপিও তিনি। মানুষ হিসেবেও অসাধারণ এবং সাহসী নারী। কবরীই প্রথম ও একমাত্র নারী যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আকাশ বাণী বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে স্বনামে আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আমি কবরী বলছি...'। একবারও ভীত হয়ে ভাবেননি পাকিস্তান ভাঙবে নাকি থাকবে। দেশ স্বাধীন হবে কি-না। তবে স্বাধীনতা অর্জনে তার আত্দবিশ্বাস প্রবল ছিল। সত্য কথা অবলীলায় বলে যাওয়া কবরীর বড় গুণ। তার একটি কথা অত্যন্ত মূল্যবান। তিনি বলেছেন, 'আমি যখন অভিনয় করেছি তখন রাজনীতি করিনি। আর যখন রাজনীতি করেছি তখন অভিনয় করিনি।' এ কথায় তার দূরদর্শী মনোভাব ও বিচক্ষণতার পরিচয় মেলে। কবরী জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। অথচ কোনো সরকারই তার মূল্যায়ন করেনি। স্বাধীনতা কিংবা একুশে পদক তাকে এখনো দেওয়া হয়নি। এই সম্মান কবরীর প্রাপ্য। আশা করি, রাষ্ট্রীয়ভাবে শীঘ্রই তাকে মূল্যায়ন করা হবে। সবশেষে বলব, তার জীবনে যা কিছু অর্জন সবই চলচ্চিত্রের জন্য। এ দেশের চলচ্চিত্রের গর্ব আমাদের কবরী।