জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছেন। কিন্তু কেন তার এই আত্মহত্যার চেষ্টা? এর নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে? এ নিয়ে তার কাছের স্বজনরা কিছু বলতে না রাজি হলেও মিডিয়াতে রয়েছে এ নিয়ে নানা কথা।
২০১২ সালে প্রথম স্বামী ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সৌরভের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর গত বছর ৪ মার্চ ময়মনসিংহ পৌরসভার কর্মচারী নাজিমুজ্জামান জায়েদের সঙ্গে বিয়ে হয় ন্যান্সির। নিকটাত্মীয় সূত্রে জানা গেছে, গেল এক বছর ধরেই ন্যান্সি চরম দুঃসময় পার করছিলেন নানা কারণে। এর অন্যতম কারণ মায়ের মৃত্যু। এরপর বিয়ে করে নতুন সংসার গোছালেও নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কিত পরিস্থিতিতে পড়েন ফেসবুকে বিনএপির সমর্থন করে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে। যে স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে গেল এক বছর ন্যান্সি পেশাগতভাবে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন গণমাধ্যমে। মায়ের মৃত্যুর পর ন্যান্সির বাবা নাঈমুল হক ফের বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। এটিও ছিল ন্যান্সির হতাশায় ডুব দেওয়ার আরেকটি বড় কারণ। এদিকে কিছুদিন ধরে স্বামীর সঙ্গেও তার বনিবনা হচ্ছিল না। এরই মধ্যে তাদের একটি কন্যাসন্তানও হয়। ফ্ল্যাট ভাড়া করে ঢাকায় স্থায়ী হন ছয় মাস আগে। প্রায় ১০ দিন আগে ঢাকা থেকে ন্যান্সি চলে যান নেত্রকোনায়। গেল প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই ন্যান্সির মুঠোফোন বন্ধ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গেল পাঁচ দিন ধরেই ন্যান্সি নিয়মিত ঘুমের বড়ি খেয়ে আসছেন হতাশা নিবারণ কিংবা আত্মহননের জন্য। সূত্র আরও জানায়, গত বেশ কিছু মাস ধরে নিরুপায় সময় পার করছেন ন্যান্সি। প্রত্যাশা অনুযায়ী স্টেজশো এবং রেকর্ডিং করতে পারছিলেন না। প্রায় বেকার সময় পার করছেন তিনি। এ নিয়ে বেশ কিছু দিন আগে কথা হয় ন্যান্সির সঙ্গে। তিনি জানান, মূলত গেল বছরের অক্টোবর থেকেই কমে গেছে তার স্টেজশোর ব্যস্ততা। প্রতিনিয়ত স্টেজশোর অফার পাচ্ছেন। একই সঙ্গে সেসব বাতিল হয়ে যাচ্ছে অস্পষ্ট কারণে। ন্যান্সি বলেন, গেল অক্টোবর থেকে শতাধিক স্টেজশো চূড়ান্ত করেছি। কিছু শোর জন্য এডভান্স নিয়েছি। মিউজিশিয়ানদের নিয়ে আমরা প্র্যাকটিস করেছি। অতঃপর শোর আগের রাতে আয়োজকরা জানাচ্ছেন, আপু সরি।
সাত-আট মাস ধরে আমি শুধু শো ধরছি আর বাতিলের খবর শুনছি। একজন শিল্পীর জন্য এটা যে কী পরিমাণ সম্মানহানিকর সেটা বলে বোঝাতে পারব না। গ্রামের সব ফেলে ঢাকায় এসেছি এ গানের জন্যই তো। এখন গানই যদি না গাইতে পারি, তাহলে আমি খাব কী? আমি জানি না, এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই ঘটছে, নাকি সবার বেলায়ই এমনটা হচ্ছে। ন্যান্সি আরও বলেন, তবে এভাবে শতাধিক শো বাতিল হলেও দু-একজন আয়োজক অব দ্য রেকর্ডে আমাকে বলেছেন যে কথা, নিরুপায় হয়ে বহু কেঁদেছি। মনে হচ্ছে আমি এমন এক দেশের মানুষ, যে দেশে মনের কথা মুখে বলাও পাপ। আর সেই পাপের প্রায়শ্চিত্তটাই এখন আমি করছি। গেল বছর ২২ অক্টোবর থেকে টানা প্রায় এক মাস মিডিয়ায় ছোটখাটো একটা ঝড় বয়ে যায়। যে ঝড়ের কারণ ন্যান্সির ফেসবুক স্ট্যাটাস। ফেসবুকে চাঁচাছোলা সেই রাজনৈতিক স্ট্যাটাসের কারণে ন্যান্সি প্রায় মাসদুয়েক ভুগেছেন পুলিশি হয়রানিতে। বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া নিজ দফতরে ডেকে নিয়েছেন ন্যান্সিকে। জানিয়েছেন সাধুবাদ। দিয়েছেন আশীর্বাদ। ন্যান্সির ভাষ্যমতে, এ ঘটনাটি তখন তার জীবনের জন্য অনেক সুখের অভিজ্ঞতা ছিল। তবে সেই ক্ষণিক সুখের বিনিময়ে এখন অনেক চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, একজন প্রফেশনাল আইটি বিশেষজ্ঞ ডেকে 'এনএম ন্যান্সি' নামে নতুন একটি ফ্যান পেইজ খুলেছেন। কারণ, আগেরটি হ্যাক হয়েছে। গেল আট মাসে তিনি পাঁচবার তার নতুন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। কারণ, প্রতিটি অ্যাকাউন্টই এক-দেড় মাসের মধ্যে বিপরীতে ডি-অ্যাক্টিভ হয়ে যাচ্ছিল। অথবা হ্যাক হচ্ছিল। ন্যান্সি বলেন, শুধু স্টেজশো দিয়ে নয়, সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও আমি প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছি। যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, একটি অ্যাকাউন্ট/ফ্যান পেইজ সাজাতে কতটা সময় এবং শ্রম লাগে। কত কিছু জমানো থাকে একেকটি অ্যাকাউন্টে। অথচ আমি প্রায় প্রতি মাসে একটি করে অ্যাকাউন্ট খুলছি।
সব মিলিয়ে বেশ কিছু মাস ধরে সামাজিক ও মানসিকভাবে বির্পযস্ত ছিলেন ন্যান্সি। সবাই ধারণা করছেন এসব কারণ ন্যান্সিকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।