'হামরা বোগড়ার ছোল, পুঁটি মাচ মারবার য্যাইয়া ম্যারা আনি বোল, হামরা বোগড়ার ছোল'- এ গানটি শোনেননি, এমন মানুষ পাওয়া যাবে খুবই কম। যে কোনো জেলার পরিচিতি করাতে একটি গানই যথেষ্ট। তেমনি বগুড়ার পরিচিতির জন্য এ গানটি বিখ্যাত। এ গানটি করে বগুড়ার ইয়ুথ কয়্যার দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। গানের মধ্য দিয়ে বগুড়া জেলাকে তুলে ধরেন বর্তমান ইয়ুথ কয়্যারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল আলম টিপু। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক বিশাল জায়গা সৃষ্টি করে নেন গানটি গেয়ে। যা আজও অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে চলেছে। আজও বগুড়ার মানুষ গানটি গেয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। এ গানটি যেন বগুড়ার মানুষের হৃদয়ের কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৌফিকুল আলম টিপু ১৯৭৬ সালে 'বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার' প্রতিষ্ঠা করেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গতানুগতিক ধারার বাইরে 'কোরিওগ্রাফট অ্যাক্রোবেটিক' নামে নতুন ধারার প্রবর্তন করেন বগুড়া ইয়ুথ। যা দেশে আলোচিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। 'বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার' পরিবেশিত অনুষ্ঠানগুলোর গান, গীতিনাট্য, নৃত্যের ধারা বর্ণনা, নাটক ইত্যাদি আঞ্চলিক ভাষায় রচিত বলে অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুগুলো সাধারণ ও নিরক্ষর মানুষসহ দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে সহজে বোধগম্য এবং গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে।
১৯৮০ সালে 'হামরা বোগড়ার ছোল, পুঁটি মাচ মারবার য্যাইয়া ম্যারা আনি বোল' গানটি রচনা করেন টিপু। বাংলাদেশ টেলিভিশনে এটি প্রচার হয় ১৯৮৩ সালে। গানটি প্রচার হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিপুর ডাক পড়ে। ওই সময় বিটিভিতে বেড়ে যায় তারর্ ব্যস্ততা। একের পর এক বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় অনুষ্ঠান করে দেশে আলাদা পরিচিতি তুলে ধরে বগুড়া ইয়ূথ। অসংখ্য আঞ্চলিক গানসহ লোকগীতি, দেশাত্দবোধক, আধুনিক এবং বিষয়ভিত্তিক গানের রচয়িতা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন টিপু। নারী জাগরণ, নারী অধিকার, নারী শিক্ষা, নারী কল্যাণসহ শিশু অধিকার, শিশু নির্যাতন রোধ, শিশুশ্রম বন্ধকরণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, যুব জাগরণ, যাবতীয় যুবকল্যাণ, ভিক্ষাবৃত্তিরোধ, সন্ত্রাস-ড্রাগস এবং এইডসমুক্ত সমাজ গঠন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, পরিবার পরিকল্পনা, যৌতুক প্রথা রোধ, বৃক্ষরোপণ, অধিক খাদ্য ফলাও, দেশাত্দবোধসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মেষ, মৌলবাদসহ সব ধরনের নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয় সংবলিত উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠান, মঞ্চ, টিভি ভিডিও ইত্যাদি সাংস্কৃতিক মিডিয়ার মাধ্যমে নিয়মিত অনুষ্ঠান করেছেন টিপু। ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য স্থানীয় এবং জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে বগুড়া ইয়ূথ কয়্যার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রায় ৬০টি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং ৪০-৫০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে নৃত্য পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন টিপু ও তার দল। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসংখ্যবার সম্মাননা পান তিনি। বর্তমানে 'বগুড়া ইয়ূথ কয়্যার'-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং আজীবন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টিপু। তৌফিকুল আলম টিপু ব্যক্তিজীবনে খুবই সুখী একজন মানুষ। স্ত্রী শিক্ষিকা মাহবুবুন নেছা, পুত্র আকবর মুশহর আলম গৌরব ও কন্যা জয়নব তাবাসসুম বানু সোনালীকে নিয়ে সংসার গড়েছেন বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায়।
তৌফিকুল আলম টিপু জানান, বাংলাদেশের মূলধারার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে আঞ্চলিক ভাষা ও সাংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশ ছাড়া উপায় নেই। সময় এসেছে সমৃদ্ধ আঞ্চলিক সংস্কৃতি মূলধারায় বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বসংস্কৃতির বলয়ে প্রবেশ এবং বাঙালি সংস্কৃতির সম্মানজনক আসন প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়াও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে দেশ, জাতি ও মানবকল্যাণে ছড়িয়ে দিয়ে সংস্কৃতির সমৃদ্ধি সাধন, পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে সার্বক্ষণিক সাংস্কৃতিক কর্মী তৈরি করে তাদের কর্মের সংস্থান, সমৃদ্ধ সংস্কৃতির লক্ষ্যে দেশে নৃত্য-গীত ও নাট্যকলার নিয়মিত চর্চা এবং পরিবেশনের ব্যবস্থা, দুঃস্থ শিল্পীদের পুর্ণবাসনের ব্যবস্থা, দুর্গত মানুষের পাশে নিজেদের সর্বদা নিয়োজিত রাখা, উন্নত দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময়, হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করে সমসাময়িক সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বয় সাধন, আঞ্চলিক ভাষা এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধন করা। দেশীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও লালন করার জন্য একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নগড়ার ইচ্ছে আছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তৌফিকুল আলম টিপুর। এস জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।