দেশে ফিরেছেন কবে?
চার দিন হলো দেশে এসেছি। এসেই নতুন অ্যালবামের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
এটি আমার ১৭তম একক অ্যালবাম।
কেমন চলছে নতুন অ্যালবামের কাজ?
এরই মধ্যে গান বাছাইয়ের কাজ শেষ। কিছু দিনের মধ্যে রেকর্ডিংয়ে যাব। অ্যালবামটির নাম 'হাছন রাজার তরী'। ইচ্ছে আছে কলকাতার একটি স্টুডিওতে গানের রেকর্ডিং করব। এবারের অ্যালবামটিতে 'মরণ কথা স্মরণ হইল', 'ঘুড্ডি উড়ালো মোরে'সহ হাছন রাজার বেশ কিছু অপ্রচলিত গান দিয়ে সাজাচ্ছি।
আগের অ্যালবামগুলো থেকে এই অ্যালবামটির ভিন্নতা কি আছে বলে মনে করছেন?
এবারের অ্যালবামটির সংগীতায়োজনে অনেকটা ভিন্নতা আনার পরিকল্পনা রয়েছে। একোস্টিক মিউজিকের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। সে কারণেই গানগুলো কলকাতায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অ্যালবামের সংগীত পরিচালকের নামটি এখনই বলতে চাচ্ছি না। এমনো হতে পারে, বাংলাদেশ ও কলকাতার দুজন সংগীত পরিচালক গানগুলো তৈরি করবেন। আমি হাছন রাজার একজন অন্ধ ভক্ত। এর আগে বেশ কয়েকটি অ্যালবামে বিচ্ছিন্নভাবে হাছন রাজার গান করেছি। তবে ১২ বছর আগে শুধু হাছন রাজার গান নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম করেছিলাম। অ্যালবামটি বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছিল। নতুন অ্যালবামটি নিয়েও আমি অনেক আশাবাদী।
চলচ্চিত্রে গানের কি অবস্থা?
নতুন কোনো চলচ্চিত্রে এরই মধ্যে গান গাওয়া হয়নি। এছাড়া বর্তমানে আমাদের দেশে যে ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়, তাতে আমার ধাঁচের গান ব্যবহার করার জায়গা অনেক কম। আর এই কারণে হয়তো চলচ্চিত্রে কাজ কম করা হচ্ছে।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আপনার পরিচয়ের গল্পটা একটু বলেন?
আমার সঙ্গে স্যারের পরিচয়টা হয়েছিল অনেকটাই স্বপ্নের মতো। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। স্যার তখন রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এটি ১৯৮৫ সালের দিকের কথা। তবে স্যারের সঙ্গে ১৯৯৬ সালের দিকে আমার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুনামগঞ্জে হাছন রাজাকে নিয়ে একটি উৎসব হতো। উৎসবটি আমরাই করি। যদিও তখন তা নিয়মিত হতো না। সেবার আমরা স্যারকে ওই উৎসবে নিয়ে গিয়েছিলাম। উৎসবে আমি হাছন রাজা, শাহ আবদুল করিমসহ বেশ কয়েকজন বাউল-সাধকের গান করেছিলাম। এর মধ্যে একটি গান ছিল গিয়াস উদ্দিনের 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়'। গানটি শুনে স্যার খুব পছন্দ করলেন। এটাই ছিল স্যারকে শোনানো আমার প্রথম গান। এরপর প্রায়ই স্যার আমার মুখে গানটি শুনতে চাইতেন। স্যারকে খুব মনে পড়লে এখনো গানটি একা একা গাই।
'একদিন তোর হইব রে মরণ' শিরোনামের একটি অ্যালবাম আপনাকে হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশ করে দিয়েছিলেন?
হ্যা, স্যার তার নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে হাছন রাজার ১৩টি গান নিয়ে একটি অ্যালবাম বের করেছিলেন। যদিও অ্যালবাম প্রকাশের আগে স্যার গানগুলো তার জনপ্রিয় নাটক 'আজ রবিবারে' ব্যবহার করেন। অ্যালবাম প্রকাশের পর যথারীতি গানগুলো সবার মাঝেই আলোড়ন তোলে। স্যার একদিন আমায় বললেন, 'গানগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।' আমি স্যারের কথা শুনে অনেকক্ষণ তার মুখের পানে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিলাম। এরপর তিনি একটু মৃদু হাসি দিলেন। বলা যায়, তার হাসি আমাকে সংগীতচর্চায় আরও উৎসাহ জুগিয়েছিল।
আলী আফতাব