কীভাবে নাট্যাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত হলেন?
১৯৫৭ সাল। তখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। কুমিল্লা মহানগরীর বাগিচাগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে মঞ্চস্থ হয় নাটক 'বিরোধ'। ওই নাটকে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করি। তারপর আর থেমে থাকিনি। নাটকের নেশায় ঘুরে বেড়িয়েছি দেশের বিভিন্ন নাট্যমঞ্চে। অভিনয় করেছি শতাধিক নাটকে নায়ক, খলনায়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন চরিত্রে।
এখন কী ধরনের কাজ করছেন?
আমি কুমিল্লার প্রাচীন নাট্য সংগঠন যাত্রিকের সভাপতি। আমরা এখন ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছি।
নারী জাগরণে অবদান রাখা নওয়াব ফয়জুন্নেছাকে নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফয়জুন্নেছার কীর্তি মঞ্চনাটকের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে জানাতে চাই। ফয়জুন্নেছার জীবনীর নাট্যরূপ দিয়েছেন যাত্রিকের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী ফাল্গুনী আহমেদ।
নাট্যচর্চায় কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?
নাটকের মহড়ার স্থান নেই কুমিল্লায়। এর বাড়ি, ওর বাসায় মহড়া দিচ্ছি। মঞ্চ বলতে কুমিল্লা টাউন হল। এখানের ভাড়া অনেক বেশি। কর্তৃপক্ষ ভাড়া কমালে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হতো।
আকাশ সংস্কৃতির কারণে মঞ্চনাটকে দর্শকের আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে আমি হতাশ নই, নতুনদের হাত ধরে আবার কুমিল্লার মঞ্চনাটকের সুদিন ফিরে আসবে। দর্শক ধরে রাখতে আমরা নাটক আকর্ষণীয় ও অল্প সময়ে দেখানোর চেষ্টা করছি। নাট্যাঙ্গনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সুধীজনদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
নাট্যাঙ্গনে জড়িয়ে আপনার প্রাপ্তি কী?
মফস্বলে মঞ্চনাটকের অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ অফিস এবং সমবায়ের হিমাগারে কর্মরত ছিলাম। ভাড়া বাড়িতে থাকি, একটা বাড়ি করা হয়নি। তবে অভিনয় করে যে সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি তা নিয়ে আমি পরিতৃপ্ত। আনন্দময় জীবন কাটানোর কারণে ৭৫ বছর বয়সেও সাবলীল চলাফেরা করি। দর্শকের হাততালি আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মাননা।
নাট্যাঙ্গন নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
প্রথম নাটকে আমি নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করি। কারণ তখন মহিলা শিল্পীর অভাব ছিল। এখনো সেই অভাব কাটেনি। আমি চাই মেয়েরা আরও বেশি মঞ্চনাটকে আসুক। মঞ্চনাটক যেন গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, যেন আনন্দমুখর থাকে গ্রামের প্রতিটি পাড়া। এক সময় হয়তো মঞ্চনাটককে শিল্পীরা পেশা হিসেবে নিতে পারবে।
কুমিল্লা প্রতিনিধি