বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় দুটি আসর কান চলচ্চিত্র উৎসব এবং অস্কার। সব চলচ্চিত্র শিল্পীরই স্বপ্ন থাকে এ দুটি আসরে পা রাখার। বাংলাদেশি চলচ্চিত্র শিল্পীদেরও তাই। কিন্তু সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে পার্থক্য অনেক। তবুও এ দুটি আসরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশিদের সুখকর স্মৃতি রয়েছে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদ আনন্দে ভাসিয়েছিলেন। আর অস্কার আসরে অংশ নিয়ে এখনো বাংলাদেশিদের গর্ব করার উপলক্ষ তৈরি করে যাচ্ছেন নাফিস বিন জাফর। ২০০৮ সালে নাফিস প্রথম উপলক্ষ উপহার দিয়েছিলেন। 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : অ্যাট ওয়ার্ল্ডস অ্যান্ড' ছবিটি অস্কার আসরে নমিনেশন পেয়েছিল। নমিনেশনে ভিজুয়াল ইফেক্টস বিভাগ ছিল। নাফিস এ ছবির ভিজুয়াল ইফেক্টস বিভাগে টেকনিক্যাল ডেভেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নাফিস 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : অ্যাট ওয়ার্ল্ডস অ্যান্ড' ছবিতে সফটওয়্যার হিসেবে ফ্লুইড ডায়নামিক সিমুলেশন সিস্টেমে আরও উৎকর্ষ ঘটিয়ে ব্যবহার করেন। এই সিস্টেমে ছোট্ট পুকুরকে উত্তাল সমুদ্রে পরিণত করা যায়, জলের ওপর ভাসতে থাকা কুয়াশার চাদর হয়ে ওঠে আরও স্পষ্ট, আরও জীবন্ত। আর তাই সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাওয়ার্ডস বিভাগে ২০০৮ সালে তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
শুধু 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ানে'ই নয়, নাফিসের তৈরি এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে 'দ্য লর্ডস অব দ্য রিংস', 'দ্য ফেলোশিপ অব দ্য রিংস', 'দ্য ডে আফটার টুমরো', 'শ্রেক, 'কুংফু পান্ডা টু', 'পুশ ইন বুটস', 'মাদাগাস্কার থ্রি'সহ অনেক ছবিতে।
নাফিস অস্কারের ৮৭তম আসরেও জায়গা করে নিয়েছেন। এবারের অস্কারে 'হাউ টু ট্রেইন ইয়োর ড্রাগন-টু' ছবিটি মনোনয়ন পেয়েছে। সেরা এনিমেশন ছবি এবং ভিজুয়্যাল ইফেক্ট ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছে ছবিটি। আর এ ছবিতে নাফিস ভিজুয়্যাল ইফেক্টস সুপারভাইজর হিসেবে ছিলেন।
নাফিস মূলত ভিজুয়্যাল ইফেক্টস উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে ওরিয়েন্টাল ড্রিমওয়ার্কস-এ গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে নাফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি খুবই সুখী একজন মানুষ। কারণ আমি আমার প্রিয় বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সবাই আমার কাজ পছন্দ করছে- এর থেকে আনন্দ আর কী হতে পারে!' বাংলাদেশি হিসেবে তিনি বলেন, 'একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত। আমি স্বপ্ন দেখি, বিশ্ব চলচ্চিত্র আসরে একদিন বাংলাদেশের ছবি দাপিয়ে বেড়াবে। সুযোগ তৈরি হলে, আমিও কাজ করব আমার দেশের ছবিতে'।
নাফিস বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলার সন্তান। বাবা জাফর বিন বাশার আর মা নাফিসা জাফর স্বনামে পরিচিত না হলেও তার নানা চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার স্বনামে খ্যাত। আর মামা জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি একুশে পদক জয়ী সৈয়দ মাইনুল হোসেন।