চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা এফডিসিতে চলচ্চিত্র সমিতির অফিস থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন মহল। এফডিসি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কেপিআইভুক্ত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সমিতি এখানে মিটিং-মিছিল, আন্দোলন করে আসছে। যা বেআইনি। নানা মহলের অভিযোগ, এফডিসির ভিতরে সমিতির আন্দোলন কার্যক্রমের ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। রাহুর কবলে পড়েছে এফডিসি।
এফডিসির সাবেক এমডি ও সাবেক সচিব মো. মুসা বলেন, বার্গেনিং অর্গানাইজেশন হিসেবে এফডিসিতে সমিতির অফিস করতে দেওয়া হয়েছিল। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন এবং তারকা তৈরিই সমিতির একমাত্র কাজ। এই শর্তে সমিতিগুলোকে এখানে অফিস করতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সমিতিগুলো এফডিসির অভ্যন্তরে মিছিল-মিটিং, সভা ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এসব করে এফডিসির অ্যাক্ট ভায়োলেট করা হচ্ছে। আমি এমডি থাকাকালে কখনো এসব করার অনুমতি দিইনি। এমনকি তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের রেজুলেশন সংবাদপত্র প্রকাশে নিষিদ্ধ করেছি। কিন্তু এখন কীভাবে এসব হচ্ছে তাই প্রশ্ন। এফডিসিতে সমিতির আন্দোলন কার্যকলাপের ফলে সমিতিগুলো টেপ্ট ইন অ্যাবায়েন্স করেছে। এতে তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা যেতে পারে।
এডিটরস গিল্ডের সভাপতি আবু মুসা দেবুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আসলে এগুলো সমিতি নয়, ডাইরেক্টর স্টাডি রুম। আমরা এখানে বসে চলচ্চিত্রের কার্যক্রম নিয়ে আলাপ-আলোচনা করি, বিশ্রাম নিই। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়। সম্প্রতি উপ-মহাদেশীয় চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শনের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে আন্দোলন করতে হয়েছে। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন বাঁচতে আর্তনাদ করে। আমরা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে সেই আর্তনাদই করেছি। তিনি আরও বলেন, যখন ৩৫ মিলিমিটারে ছবি নির্মাণ হয়েছে তখন মানসম্মত ছবি উপহার দিয়েছি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্মাণ শুরু হওয়ায় এখন মানের অবনতি হয়েছে। কারণ ডিজিটাল পদ্ধতির ছবি নির্মাণে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা দিতে পারছে না এফডিসি।
এফডিসিতে সমিতির অফিস থাকা প্রসঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন অর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা এখানে সমিতির অফিস স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন তাদের এই প্রশ্ন করলে ভালো হয়। তা ছাড়া এফডিসি গ্রেড ওয়ান কেপিআইভুক্ত এলাকা নয়। আর সমিতির কার্যকলাপ তো পাহারা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তারপরও যখনই নজরে আসে তখনই তা বন্ধ করে দিই।
এদিকে বিভিন্ন মহল এফডিসিতে অবস্থিত সমিতিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছে, চলচ্চিত্রের উন্নয়ন কাজ নয়, অন্য কর্মকাণ্ডই বেশি করে সমিতিগুলো। যখন অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় তখন সমিতিগুলো তাতে বাধা দেয়নি বরং সমিতির সদস্যরাই এর সঙ্গে জড়িত ছিল। এফডিসিতেই চলচ্চিত্রের অশ্লীল দৃশ্য ধারণ ও অবৈধ-অসামাজিক কার্যকলাপের ছড়াছড়ি ছিল। সমিতিগুলো এখন এফডিসির ভিতরে সরকারি সিদ্ধান্ত ও আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং, সভা ও জ্বালাও- পোড়াও করে। এফডিসির নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে। এসব কার্যকলাপের ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণ বাধাগ্রস্ত ও এফডিসির উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হয়। সমিতিগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে। ফলে এর নিরাপত্তা বিঘি্নত হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে।
এখানে প্রতিনিয়ত মদ-জুয়ার আসর বসা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে সদস্যপদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সমিতিগুলোর বিরুদ্ধে। আরেকটি অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিকল্পধারার নির্মাতা নাম দিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল ও মৌলিক চলচ্চিত্রকারদের পরিচালক সমিতিতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনেক সময় সমিতির কার্যালয়ে তাদের প্রবেশেও বাধা দেওয়া হয়। বিভিন্ন মহলের দাবি, এফডিসির ভিতরে সমিতিগুলোর অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলে এফডিসি এখন রাহুর কবলে পড়েছে। সাধারণ মানুষের চোখে এফডিসি ও চলচ্চিত্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অবিলম্বে এফডিসির ভিতরে অবস্থিত সমিতিগুলোর অফিস বন্ধ করে দেওয়া দরকার।