ঢাকাই ছবির এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা অঞ্জু ঘোষের রমরমা অবস্থা এখন আর নেই। দিন কাটছে কলকাতার যাত্রাপালায় কাজ করে। বয়সের কারণে আগের মতো মুখ্য চরিত্রে আর অভিনয় করতে পারছেন না। মা, খালা জাতীয় ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। যে কারণে রুজি-রোজগার কমে গেছে। থাকেন সল্ট লেক রোডে। জানান অঞ্জুর ঘনিষ্ঠ এক সূত্র।
১৯৯৬ সাল, ঢাকার ছবিতে অঞ্জু ঘোষের ক্যারিয়ার প্রায় অস্তমিত। কলকাতায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানকার মঞ্চ ও ছবিতে নিয়মিত হন। ভারতেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কলকাতায় প্রায় অর্ধশত ছবিতে কাজ করেন তিনি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেখানকার যাত্রাপালায় অঞ্জুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। বয়সের কারণে চাহিদা ধীরে ধীরে কমতে থাকে বলে জানায় সূত্রটি। এরপর থেকে চরিত্রাভিনেত্রীর ক্যারেক্টার প্লে করতে থাকেন। ২০০৪ সালের পর থেকে কলকাতার ছবিতেও চাহিদা কমে অঞ্জুর। তখন থেকে যাত্রামঞ্চেই নিয়মিত হন তিনি। কলকাতার নামিদামি যাত্রাপালায় নিয়মিত অভিনয় করেন তিনি। এর মধ্যে বিশ্বভারতী অপেরা উল্লেখযোগ্য। এই সংগঠনে জয়ন্ত কুমার, তরুণ রক্ষিত, সমর গঙ্গোপাধ্যায়, মিস কোয়েল, প্রশান্ত সরকারের মতো খ্যাতিমান যাত্রাশিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করেন অঞ্জু। বিশ্বভারতীর 'পদ্মাপাড়ের পদ্মিনী' যাত্রার মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে সুনাম কুড়ান তিনি।
১৯৯৬ সালে কলকাতায় যাওয়ার পর প্রথমে প্রায় এক ডজন ছবিতে কাজ করেন। পরে যাত্রাপালায় নিয়মিত হন। ২০০২ সালে বিয়ে করেন যাত্রাশিল্পী সঞ্জীবকে। ২০০৬ সালে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে প্রায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন শুরু করেন। মঞ্চেই মনোযোগ দেন। নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। দেশে খুব একটা আসা হয় না তার।
সূত্রটি জানায়, ১৯৮৫ সালে তার 'র' অদ্যাক্ষরের প্রেমিক এক চিত্রনায়ক অন্যত্র বিয়ে করলে ভেঙে পড়েন অঞ্জু। ওই বছরেই জেদের বশে বিয়ে করেন চিত্র পরিচালক এফ কবির চৌধুরীকে। সে বিয়ে টিকেছিল মাত্র চার মাস। এরপর অঞ্জুর জীবনে ছিল শুধুই হতাশা। তার ছবিও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হতে থাকে। ১৯৮৯ সালে 'বেদের মেয়ে জোছনা' মুক্তি পেয়ে ব্যবসা সফল হলে আবার আশার আলো দেখতে থাকেন তিনি। কয়েকটি মাত্র ছবি ব্যবসা করলেও আগের মতো ক্রেজ ছিল না তার। চলচ্চিত্র জগৎ থেকে প্রায় নির্বাসিত হয়ে পড়েন তিনি। একই সঙ্গে প্রেমঘটিত নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে তার ফিল্মি ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫ সালে সাইদুর রহমান সাইদ অঞ্জুকে নিয়ে 'নেশা' শিরোনামে একটি ছবি নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু কাজ অসমাপ্ত রেখেই ১৯৯৬ সালে কলকাতা চলে যান অঞ্জু। সূত্র জানায় এরপর হাতেগোনা মাত্র কয়েকবার দেশে আসেন তিনি। নানা কারণে মনোক্ষুণ্ন হওয়ায় দেশে আর ফিরতে চান না তিনি।
অঞ্জুর প্রকৃত নাম অঞ্জলি ঘোষ। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার জন্ম। স্বাধীনতার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার হয়ে যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন ও গাইতেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে জনপ্রিয়তার সঙ্গে অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে ফোক-ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী চলচ্চিত্রে আনেন তাকে। নির্মাণ করেন 'সওদাগর' শিরোনামের একটি ছবি। বেশ খোলামেলা হয়ে ওই ছবিতে অভিনয়ের কারণে একশ্রেণির দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অঞ্জু ঘোষ। এরপর এই নির্মাতার আরও কয়েকটি ছবিতে এ ধরনের অভিনয় করে সমালোচিত হন। ঢালিউডে প্রায় অর্ধ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন এই অভিনেত্রী।