ফরাসি রাজ্যের এক সমুদ্রপাড়ের শহর কান। এ মুহূর্তে বিশ্ববাতাসে সেই শহরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে। কিলোমিটারের হিসাবে ঢাকা থেকে শহরটির দূরত্বের অঙ্ক ৭৬৯৪। কিন্তু ঘ্রাণ আমরাও পাচ্ছি। কারণ শহরটিতে বসেছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে অভিজাত আসর। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপরই পর্দা নামবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের। আর তাই সমুদ্রপাড়ের শহরজুড়ে ফিসফাসফিস। বিষয় কোন কোন চলচ্চিত্রের জয় হবে অবশেষে।
কানের এটা ৬৮তম আসর। অন্য যে কোনো আসরের থেকে এবারের আসর বেশ রহস্যময়। কারণ ফিল্ম টু ফিল্ম লড়াই হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি। তাই আন্দাজ করেও বলা যাচ্ছে না কিছু। অতএব কেউ 'ধারণা' করে সীমালঙ্ঘন করছেন না। বরং সবাই কৌশলী 'প্রত্যাশা'র মধ্যেই থাকছেন। টেল অব টেলস, ক্যারল, আওয়ার লিটল সিস্টার্স, ইয়ুথ, ধিপান, মাই মাদার, সান অব সাউল, অ্যা টাচ অব সিন- কোন চলচ্চিত্র নির্মাতার হাতে যাচ্ছে স্বর্ণপাম পুরস্কার? একটার থেকে আরেকটি ছবি এগিয়ে। তাই অপেক্ষা করতে হবে ২৪ মে পর্যন্ত। এই দিনই মুখ খুলবেন ইথান ও জোয়েল কোয়েন। বিচারকের আসনে বসে এ দুই ভাই ঘোষণা দেবেন পুরস্কার তালিকা। 'টেল অব টেলস' নির্মিত হয়েছে আশ্চর্য এক রূপকথা নিয়ে। ইতালিয়ান নির্মাতা মাত্তেও গাররোনের ইল নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্রটি। তিনি বিচিত্র এক রূপকথার দুনিয়া তৈরি করেছেন। যে দুনিয়ায় সাগর-দানবের হৃৎপিণ্ড ভক্ষণ করে রানী [সালমা হায়েক] গর্ভবতী হন, পাহাড়ি এক দৈত্য এসে বিয়ে করে নিয়ে যায় রাজকুমারীকে। গল্পটি ভয়ঙ্কর, কিন্তু সুন্দর। আর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে আছে চলচ্চিত্রটি।
স্বর্ণপামের দৌড়ে এগিয়ে আছে টড হায়েন্স পরিচালিত 'ক্যারল' এবং ল্যাজলো নেমেসের 'সান অব সাউল'। এর মধ্যে কেট ব্ল্যানচেট ও রুনি মারা অভিনীত 'ক্যারল'র গল্প নারী সমকামিতা। সমুদ্র-তীরবর্তী শহরটিতে এরই মধ্যে আওয়াজ উঠেছে, আগামী বছরের অস্কারও মাতাবে এটি। তবে 'ক্যারল' হতাশ হতে পারে 'সান অব সাউল' ছবির জন্য। এটি হাঙ্গেরিয়ান নির্মাতা নেমেসের প্রথম ছবি। তাই ক্যামেরা দ'র পুরস্কারের দৌড়েও আছেন তিনি। জার্মানিতে নাৎসিদের অশউইৎজ গ্যাস চেম্বার হয়ে উঠেছিল ছিল বন্দিশিবির ও মৃত্যুপুরী। সেই নির্মম সময়ে নিজের পরিবারের কয়েকজনকে হারিয়েছেন নেমেস। তাই প্রথম ছবি বানানোর জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন সেই হত্যাকাণ্ড। প্রত্যাশা রয়েছে কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে কাজ করা বিচারকদের প্যানেলের সবচেয়ে বেশি ভোট আসবে এ ছবির ঘরে।
সমালোচকরা মনে করছেন, বিশ্ব উন্নত চলচ্চিত্রের জন্য বছরটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ কানের প্রতিযোগিতা বিভাগের ১৯টি ছবির বেশির ভাগই তাদের মুগ্ধ করেছে। দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ানোর ফলে ইতালিয়ান নির্মাতা ন্যানি মোরেত্তির 'মাই মাদার', হিরোকাজু কোরি-ইদার 'আওয়ার লিটল সিস্টার্স' ছবি দুটিও লড়াইয়ে আছে। প্রত্যাশা রয়েছে, অস্কারজয়ী ইতালিয়ান নির্মাতা পাওলো সরেন্তিনোর 'ইয়ুথ', শ্রীলঙ্কার শরণার্থীকে নিয়ে ফরাসি নির্মাতা জ্যাক অদিয়াদের 'ধিপান', চীনা নির্মাতা জিয়া ঝ্যাংকির 'অ্যা টাচ অব সিন' চলচ্চিত্রগুলোও পুরস্কারের দাবিদার। সবমিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক গোলকধাঁধা।