শাহরুখ খান। কিং খান বা বলিউড বাদশাহ নামেই তাকে চেনেন সবাই। এখন দুনিয়াজুড়ে তার জনপ্রিয়তা। অর্থ-বিত্তের কোনো কমতি নেই। ক্ষমতাবান তারকাদের একজন। বর্তমানে শাহরুখ খান পৃথিবীর সফল চলচ্চিত্র তারকা। প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ভক্ত এবং তার মোট অর্থসম্পদের পরিমাণ ২৩০০ কোটি রুপিরও বেশি। কিন্তু তাকেও দরিদ্রতার পথ মাড়িয়ে আজ এখানে আসতে হয়েছে। একটা সময় শাহরুখ খান কাজের খোঁজে যখন মুম্বাই আসেন তখন তার পকেটে ছিল না কানাকড়ি। ছিল না থাকার কোনো জায়গা। রাতের পর রাত পার্কের বেঞ্চে ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন তিনি। পেট চালাতে বন্ধুর কাছ থেকে প্রতিদিন ২০ রুপি ধার নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন কাজের খোঁজে। মুম্বায়ের পথে পথে হেঁটে বেড়িয়েছিলেন চাকরির খোঁজে। কিন্তু কাজ তো সহজে মেলে না। দিন শেষে খালি হাতে হতাশ শাহরুখ ফিরতেন। পার্কের এক কোনায় বসে স্বপ্ন দেখতেন ভাগ্য ফেরার। এভাবেই অভাবে কাটত দিনগুলো। অবশেষে একদিন পেলেন কাজ। না, অভিনয় শিল্পী হিসেবে নয়। দরিয়াগঞ্জের একটি রেস্টুরেন্টে। মিডিয়াতে আসেন এক্সট্রা শিল্পী হয়ে। তার বেতন ধরা হয় মাত্র ৫০ রুপি। এ ৫০ রুপিই তখন তার কাছে অনেক। বন্ধুর কাছে ধার করে আর কতদিন চলা যায়। শাহরুখ প্রথমে তার নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পান।
১৯৮৮ সালে ফৌজি টেলিভিশন সিরিয়ালে কমান্ডো অভিমন্যু রাই চরিত্রের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে তিনি আত্দপ্রকাশ করেন। এরপর ১৯৮৯ সালে সার্কাস সিরিয়ালে তিনি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন, যেটি ছিল একজন সাধারণ সার্কাস অভিনেতার জীবন নিয়ে রচিত। ফৌজিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি হেমা মালিনীর চোখে পড়েন যিনি শাহরুখ খানকে তার অভিষেক ছবি 'দিল আশনা হ্যায়'তে অভিনয়ের সুযোগ দেন। দিওয়ানা [১৯৯২] ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রের জগতে যাত্রা শুরু করেন। এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন দিব্যা ভারতী। ছবিটি ব্যবসাসফল হয় এবং তিনি বলিউডে আসন গাড়তে সক্ষম হন। আসলে তার প্রথম ছবি হওয়ার কথা ছিল 'দিল আশনা হ্যায়' কিন্তু 'দিওয়ানা' প্রথমে মুক্তি পায়। একই বছরে তিনি আরও কিছু ছবি যেমন 'চমৎকার', বিতর্কিত আর্ট ফিল্ম 'মায়া মেমসাবে' অভিনয় করেন। ১৯৯৩ সালে 'বাজিগর' ও 'ডর' ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিপুল খ্যাতি পান। 'ডর' ছবিতে শাহরুখ একজন অপ্রকৃতস্থ প্রেমিকের ভূমিকায় অভিনয় করেন, ছবিটি খুব সাফল্য লাভ করে এবং তিনি তারকা খ্যাতি পান। 'বাজিগর' ছবির জন্য তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি 'কাভি হাঁ কাভি না' ছবিতে একজন ব্যর্থ যুবক ও প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করেন। যার কারণে তিনি সমালোচকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে তিনি 'আঞ্জাম' ছবিতে অভিনয় করেন যেটি ব্যবসা সফল হয়নি। তবে সাইকোপ্যাথ হিসেবে তার অভিনয় সমাদৃত হয় এবং তিনি ১৯৯৫ সালে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ ভিলেন পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৫ সাল ছিল তার জন্য খুব সাফল্যের বছর। 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে' বঙ্ অফিস রেকর্ড ভাঙে এবং সব কৃতিত্ব পান তিনি। ছবিটি ৫২০ সপ্তাহের বেশি প্রদর্শিত হয়। ভারতের সর্বাধিকবার প্রচারিত ছবি হিসেবে যাকে তুলনা করা যায় 'শোলে'র সঙ্গে, যা ২৬০ সপ্তাহ চলেছিল। ছবিটি বর্তমানে বারো বছর ধরে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং প্রায় ১২ বিলিয়ন রুপির চেয়েও বেশি অর্থ আয় করেছে। 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গের পর তিনি বেশকটি ছবিতে সাফল্য পান, যার অধিকাংশই ছিল প্রেম-কাহিনী। যশ চোপড়া এবং করণ জোহরের সঙ্গে মিলে তিনি বলিউডে সফলতা পেতে থাকেন। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পরদেশ, দিল তো পাগল হ্যায়, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, মোহাব্বতে, কাভি খুশি কাভি গাম, কাল হো না হো এবং বীর-জারা। এ ছাড়া অন্যান্য পরিচালক যেমন আজিজ মির্জার 'ইয়েস বস', মনসুর খানের 'জোশ' এবং সঞ্জয় লীলা বনসালির 'দেবদাস' ব্যবসা সফল হয়। এ ছাড়া আঞ্জাম, দিল সে, স্বদেশ ও পহেলি ছবির জন্য শাহরুখ খান সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ২০০৬ সালে করণ জোহরের 'কভি আলবিদা না কেহনা' ছবিটি ভারতে মোটামুটি ব্যবসা করলেও বিদেশে ব্যবসা সফল হয়। একই বছরে ডন ছবিতে অভিনয় করেন যেটিও ব্যবসা সফল হয়েছিল। ২০০৭ সালে শাহরুখের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল 'চাক দে ইন্ডিয়া'। বাণিজ্য সফল এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য শাহরুখ সপ্তমবারের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। তার অন্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'ওম শান্তি ওম' ২০০৭ সালের সবচেয়ে বাণিজ্য সফল ছবি। ২০০৮ সালে শাহরুখের 'রব নে বানা দি জোড়ি' ছবিটি হয়। বর্তমানে সারা বিশ্বে বলিউডের জনপ্রিয়তম ব্যক্তিত্বের মধ্যে শাহরুখ খান অন্যতম। তার অভিনীত হে রাম, দেবদাস এবং পহেলি ভারত থেকে অস্কারে পাঠানো হয়েছিল। শাহরুখ-কাজল জুটি বলিউডের অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে স্বীকৃত। ২৭ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয়দের কাতারে অমিতাভ বচ্চন-পরবর্তী স্থানের শক্ত দাবিদার।