এ আর রহমান। মহান এক সংগীতজ্ঞর নাম। মানবহিতৈষী হিসেবে তিনি কম শ্রদ্ধাভাজন নন। কিন্তু এ মানুষটির জীবন চলার পথ শুরুতে খুব মসৃণ ছিল না। ১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইয়ে [মাদ্রাজ] ঐতিহ্যবাহী মুদালিয়ার তামিলসংগীত অন্তঃপ্রাণ এক পরিবারে এ আর রহমানের জন্ম। তার নাম রাখা হয় এ এস দিলীপ কুমার। বাবা আর কে শেখর ছিলেন তামিল ও মালায়লাম চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক। ছোট্ট রহমান বাবার অ্যাসিস্টেন্ট ছিলেন। সেই থেকে বলতে গেলে বাবার হাতেই সংগীতযন্ত্রে তার হাতেখড়ি। সিনেমার গান রেকর্ড করার সময় বাবার কিবোর্ড নাড়াচাড়া করতেন। কিন্তু এ সুযোগ তিনি বেশি দিন পাননি। মাত্র নয় বছর বয়সে বাবা মারা যান। এরপরই তার পরিবার অর্থকষ্টে পড়ে। বাবার সংগীত যন্ত্রগুলো ভাড়া দিয়ে চলত তাদের সংসার। এ এস দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান হয়ে যাওয়ার গল্পটা হয়তো অনেকের অজানা।
১৯৮৪ সালের কথা। ছোট বোন হঠাৎ প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোনো ডাক্তারের ওষুধ কাজে আসছিল না। মা আজমির শরিফের শরণাপন্ন হন। এতে বোন অলৌকিকভাবে সেরে ওঠেন। এ ঘটনার পর থেকেই মা ইসলামের সুফি ধারায় অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালে ২৩ বছর বয়সী এ এস দিলীপ কুমার সপরিবারে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হন। তার নাম রাখা হয় আল্লারাখা রহমান। সংক্ষেপে এ আর রহমান। মা কন্তুরি হয়ে যান করিমা।
এ আর রহমান প্রথম দিকে কিবোর্ড প্লেয়ার হিসেবে কাজ করতেন। এ সময় শৈশবের বন্ধু মিউজিশিয়ান শিবামানির সঙ্গে জন অ্যান্থনি, সুরেশ পিটার, জোজো এবং রাজাকে নিয়ে 'রুট' নামে একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন। চেন্নাইয়ের রক ব্যান্ড 'নেমেসিস অ্যাভেনিউ'রও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৮৭ সালে তখনো তিনি এ আর রহমান নন- দিলীপ কুমার। আলৌইন শীর্ষক একটি জিঙ্গেল কম্পোজের সুযোগ পান, যা অনেক বেশি মানুষের কাছে পরিচিতি পেতে তাকে সহায়তা করে। তখন তিনি পরিচালক মনি রত্নমের নজরে আসেন। রত্নমের তামিল 'রোজা' চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 'রোজা' চলচ্চিত্রে ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার 'রজত কমল' পান তিনি। এরপর আরও তিনবার এ পুরস্কার পেয়েছেন। তামিল 'মিনসারা কানাভু', হিন্দি 'লগন' এবং তামিল 'কান্নাথিল'। কোনো কম্পোজার এই রেকর্ড করতে পারেননি। শুধু কম্পোজার বা সাউন্ডট্র্যাক নয়- আবহসংগীতেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী এখনো কেউ নেই। তিনি 'জয় হো' এবং 'ও সাইয়া' গান দুটি গাওয়া ও কম্পোজিশনের জন্য 'স্লামডগ মিলিয়নেয়ার' চলচ্চিত্রে সেরা আবহসংগীতে অস্কার জিতেন। ব্যক্তিগত জীবনে রহমান তিন সন্তানের জনক। স্ত্রী সায়রা বানু, তিন সন্তান খাদিজা, রহিমা ও আমিনকে নিয়ে তার সুখের সংসার। তার ছেলেমেয়েও সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছে। মানবহিতৈষী কাজেও রয়েছে তার যথেষ্ট অংশগ্রহণ। ২০০৪ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্টপ টিবি পার্টনারশিপ প্রকল্পের গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর হন তিনি। সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করছেন। এ ছাড়া ইউসুফ ইসলামের 'ইন্ডিয়ান ওশান'এ-ও কাজ করেছেন।