আজ বিশ্ব সংগীত দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হবে। ছোট-বড় মিলিয়ে বিশ্বে অন্তত হাজারখানেক কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে দিনটিকে ঘিরে। আর বহু বছর ধরেই এই দিনে ঐতিহ্যবাহী মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করছে ফ্রান্স। এভাবে, ১৯৮২ সালে এসে এ ফেস্টিভ্যাল 'ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে'-তে রূপ নেয়। 'গান হতে হবে মুক্ত; সংশয়হীন'- এই স্লোগানকে সামনে রেখেই বিশ্বের ১১০টি দেশ যোগ দেয় এই আন্দোলনে। ১৯ বছরের পথপরিক্রমায় আন্তর্জাতিক মাত্রা পায় এটি। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, স্থানীয়ভাবে অথবা ফরাসি দূতাবাসের সহায়তায় জুনের ২১ তারিখে পালন করা হয় 'ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে'।
১৯৮২ সালে ফরাসি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং সর্বপ্রথম বিশ্ব সংগীত দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। ১৯৮৫ সালের ২১ জুন প্রথম গোটা ইউরোপ এবং পরে সারা বিশ্ব এই সংগীত দিবস পালন করে। এরপর থেকে দিনটি বিশ্ব সংগীত দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর প্রথম থেকেই আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দিবসটি পালন করে আসছে। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও টিভি চ্যানেল ছাড়া দিনটিকে নিয়ে তেমন কোনো মাতামাতি নেই আমাদের দেশে। কিন্তু দিবসটি হতে পারত আমাদের দেশে সংগীতপ্রিয় মানুষ ও শিল্পীদের মিলনমেলা। কী ভাবছেন শিল্পীরা। তাদের কথা জানাচ্ছেন- আলী আফতাব
শবনম মুশতারী
সংগীতের জন্য একটি দিবস আছে- এ বিষয়টা অনেকেই জানেন না। কিন্তু আমি সংগীতশিল্পী গর্বিত দিবসটি নিয়ে। তবে আমাদের দেশের জন্য এটি নতুন ধারণা। দিবসটির মাহাত্ম্য অন্যান্য দেশে তাই অনেক। বিদেশে এই দিনটিতে নানা ধরনের সংগীত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও টিভি চ্যানেল ছাড়া কেউ মাথা ঘামায় না। কিন্তু এই দিনটিতে আমাদের দেশে একটি সংগীতের মিলনমেলা হতে পারত। আমরা সবাই নানা ধরনের গান পরিবেশনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করতে পারতাম। নিজেদের অবস্থান পর্যালোচনা করতে পারতাম। কিন্তু করতে পারছি না। ব্যর্থতা।
ফাহমিদা নবী
এই দিনটিকে ঘিরে বিদেশে যে পরিমাণ অনুষ্ঠান হয় তার তুলনায় আমাদের দেশে কিছুই হয় না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমরা সবাই আমিত্ব নিয়ে বেশি চিন্তিত। শিল্পী, গীতিকার, সুরকার তারা কেউই কিন্তু নিজের জন্য গান করে না। তবে আমরা কেন আমিত্ব নিয়ে থাকব। এই দিনটিতে আমরা অন্তত সব শিল্পী ও কলাকৌশলীরা এক হতে পারতাম। আমরা সবাই এখন এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, নিজেদের দিবসটিও ভুলে গেছি। যে কোনো বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা হয় না। তাই আমি মনে করি, এমন একটি অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রতি বছর সবার অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
কুদ্দুস বয়াতি
আমি জানি এই দিনটি প্রতি বছর সারা বিশ্বে পালন করা হয়।
এটিকে 'ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে' বলে। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে এটি নিয়ে আমাদের দেশে বড় কোনো আয়োজন হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধরনের গান। এই দিনটা বড় করে পালন করলে আমরা সবাই একসঙ্গে গান পরিবেশন করতে পারতাম। সবধরনের শিল্পী একই প্লাটফর্মে দাঁড়াতে পারতাম। আমাদের সংগীতের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণা করতে পারতাম। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। একতা নাই কোন।
কুমার বিশ্বজিৎ
আমাদের সংগীতটা বর্তমানে হয়ে গেছে 'ওয়ান ম্যান শো'। আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু নাটক কিংবা সিনেমায় এটি হয় না। এখানে একটি বড় ইউনিট কাজ করে। আগে আমরা একটি গান করতাম গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও কলাকৌশুলীদের নিয়ে। কিন্তু এখন দেখা যায় গীতিকার গান লিখে দিয়ে চলে গেছে, সুরকার সুর করে গেছে, আর আমরা শিল্পীরা তার উপরে কণ্ঠ দিয়ে আসি। কেউ কারও সঙ্গে দেখা নেই। তাই আমাদের মধ্যে একতাও নেই। এই একটি দিনে আমরা কিন্তু এক হতে পারতাম। নতুন আর পুরনোর একটি মিলনমেলা হতে পাড়ত এখানে। কোনো উদ্যোগ নেই।
সামিনা চৌধুরী
সারা দেশের মতো আমাদের দেশেও এই দিনটি ভালো করে পালন করা প্রয়োজন। কিন্তু আমার খুব ভালো লাগছে এই দিনের একটি গানে আমি কণ্ঠ দিয়েছি। গানটি লিখেছেন এবং সুর করেছেন মাহমুদ সেলিম। সংগীতায়োজন করেছেন বিবেক। এখানে আমার সঙ্গে আরও কণ্ঠ দিয়েছেন এলিটা, পারভেজ, তাপস, মুন, বিবেক এবং মাহমুদ সেলিম। আমি মনে করি, আমাদের দেশেও এই দিনটিকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই।