প্রেক্ষাগৃহ সংকটের কারণে ঈদের ছবির ব্যবসা নিয়ে শঙ্কিত নির্মাতারা। বেশি পরিমাণে ছবি মুক্তি দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। প্রদর্শক সমিতির তথ্যমতে, দেশে এখন প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা মাত্র ৩১৪টি। ৯ জেলা শহরে কোনো প্রেক্ষাগৃহ নেই। মফস্বলের সব প্রেক্ষাগৃহে নতুন ছবি মুক্তি পায় না। ফলে ঈদে মুক্তি প্রতীক্ষিত ৪টি ছবি বড়জোর ২৫০টির মতো প্রেক্ষাগৃহ পেতে পারে। প্রযোজক সমিতির বক্তব্য মতে, বর্তমানে একটি ছবি নির্মাণে ব্যয় হয় সর্বনিম্ন এক থেকে দেড় কোটি টাকা। অল্প প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির কারণে প্রতিটি ছবিই ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চলচ্চিত্রের প্রধান মৌসুম ঈদে বেশি ছবি মুক্তি দেওয়া যায় না।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, যে হারে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হচ্ছে তাতে চলচ্চিত্র ব্যবসা ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। গত সপ্তাহে বন্ধ হয়েছে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিউটি সিনেমা। সেখানে ৪টির স্থলে এখন আছে মাত্র একটি প্রেক্ষাগৃহ অভিরুচি। একমাত্র ঢাকায় রয়েছে সর্বাধিক ৩৩টি প্রেক্ষাগৃহ। তবে ২ হাজার সালের প্রথম পর্যন্ত এখানে প্রেক্ষাগৃহ ছিল ৪৪টি। বন্ধের ধারাবাহিকতায় ১১টি বিলুপ্তি হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঢাকায় ১২টি সিনেপ্লেক্স চালু হলেও সেখানে একদিকে নিয়মিত দেশি ছবি প্রদর্শন হয় না অন্যদিকে টিকিটের উচ্চমূল্যের কারণে সব শ্রেণির দর্শকের যাওয়া সম্ভব হয় না। মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ২০০০ সালের প্রথম পর্যন্ত দেশে সিনেমা হল ছিল প্রায় ১৩০০। নব্বই থেকে ২০০০ সালের প্রথম পর্যন্ত ঈদে সর্বোচ্চ ১৯টি পর্যন্ত ছবি মুক্তির রেকর্ড রয়েছে। তিনি বলেন, বছরের দুই ঈদ হচ্ছে ছবি ব্যবসার প্রধান সময়। তাই নির্মাতারা ঈদকে লক্ষ্য করে তারকাবহুল বিগ বাজেটের ছবি নির্মাণ করেন। ঈদে ছবি দেখা আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম রেওয়াজ হওয়ায় নির্মাতারা বেশি পরিমাণে লাভের মুখ দেখতেন। কিন্ত এখন স্বল্প বাজেটের ছবি নির্মাণ করেও প্রেক্ষাগৃহ সংকট ও এর পরিবেশ মন্দ হওয়ায় লোকসান গুনতে হয় নির্মাতাকে। মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ২০১২ সাল থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ছবি নির্মাণ শুরু হয়। এই প্রযুক্তিতে নেগেটিভের প্রয়োজন হয় না। ফলে নির্মাণ খরচ কমে আসায় কোনোভাবে লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত আনা যায়। আর মফস্বলের প্রেক্ষাগৃহগুলোতেও ডিজিটাল প্রজেক্টর স্থাপনের কারণে সেসব প্রেক্ষাগৃহের মালিক ঈদে নতুন ছবি প্রদর্শনে আগ্রহ দেখান। তবে ৩১৪টির মধ্যে মাত্র দেড়শ প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রজেক্টর রয়েছে। দেশীয় ছবির মন্দাবস্থার কারণে ঈদে আগের মতো বেশি ছবি মুক্তি পায় না এবং যেগুলো মুক্তি পায় সেগুলো তেমনভাবে লাভের মুখ দেখে না। তিনি বলেন, এ অবস্থা উত্তরণে নির্মাতাদের মানসম্মত ছবি নির্মাণের বিকল্প নেই। ভালো ছবি পেলে বছরজুড়ে আগের মতো সব শ্রেণির দর্শক আবার প্রেক্ষাগৃহে আসবে এবং প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার সম্ভব হবে।
চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, অশ্লীলতা, পাইরেসি, নকল প্রবণতা এবং প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ না থাকায় দর্শক দেশীয় চলচ্চিত্রবিমুখ হয়েছে। অশ্লীলতা অনেকাংশে রোধ করা গেলেও এ কারণে যেসব দর্শক প্রেক্ষাগৃহবিমুখ হয়েছে তাদের আর ফেরত আনা যাচ্ছে না। বর্তমানে পাইরেসি, নকল প্রবণতা এবং প্রেক্ষাগৃহের খারাপ পরিবেশ ছবির ব্যবসায়িক মন্দার অন্যতম কারণ। সরকারি কঠোর আইন ও এর যথাযথ প্রয়োগই পারে পাইরেসি বন্ধ করতে। অন্যদিকে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রোধ, সংস্কার, ও নতুন প্রেক্ষগৃহ নির্মাণে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে নকল পরিহার করতে হবে। তা হলে শুধু ঈদ নয়, সারা বছরই ছবির ব্যবসা রমরমা থাকবে। তিনি বলেন, প্রেক্ষাগৃহ সংকটের কারণে ঈদে ৪টির বেশি ছবি মুক্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ঈদে যে ৪টি ছবি মুক্তি পাচ্ছে সেগুলো হলো- তন্ময় তানসেনের 'পদ্ম পাতার জল', শাহীন সুমনের 'লাভ ম্যারেজ', এস এ হক অলিকের 'আরও ভালোবাসবো তোমায়' এবং ইফতেখার চৌধুরীর 'অগ্নি টু'।