মান্না দে কী কফি হাউসে রেগুলার ছিলেন? এই প্রশ্ন সাম্প্রতিক প্রজন্মের অনেকেই করে থাকেন। এর উত্তর দিতে গিয়ে থমকান ভেটেরান কফি হাউসিরা। হেদুয়া থেকে কফি হাউসের ভৌগোলিক দূরত্ব এমন কিছু নয়। কিন্তু, স্কটিশের ছাত্র মান্না দে কী নিয়মিত আসতেন কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে? আসলে মান্না দে-র ‘কফি হাউসের আড্ডা’ গানটিকে নিয়েই যত বিপত্তি।
বস্তুত বাংলার গ্রাম ও মফস্সলে এই গান কলেজ স্ট্রিটের এই কফিখানাকে এমন একটা ভাবমূর্তিতে ঠেলে দেয়, যার দায় কিছুতেই এড়াতে পারেন না কিংবদন্তি গায়ক। ফলে প্রশ্ন ওঠে, মান্না দে কতটা নিয়েমিত ছিলেন কফি হাউসে?
কফি হাউসের আড্ডা নিয়ে লেখা বই-পত্তরে যে সব স্টলওয়ার্টদের প্রসঙ্গ জানা যায়, তার মধ্যে মান্না দে-র নাম নেই।
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় আর সুপর্ণকান্তি ঘোষের সুরে ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’ কি বাঙালির এক বিশেষ পর্বের সামূহিক স্মৃতির অভিজ্ঞান নয়? আর মান্না দে নামক কিংবদন্তিটি সেই অভিজ্ঞানের অনুঘটক? এমন ব্যালাড পাশ্চিমে তৈরি হলে রাস্তার পাথরে নাম খোদিত হয়। ‘ওয়াক অফ ফেম’ বলে কিছু তো বাঙালির জীবনে হল না! হবেও না বোধ হয়। মান্না দে-ই তো পাথরে নাম লিখতে বারণ করে গিয়েছেন। থাকগে। কফি হাউসিদের সাইকিতে লেখা হয়ে রয়েছে সেই সব গানের কলি। আজও মফস্সল থেকে কলকাতায় পড়তে এসে শ্যামলিমা মাখানো মুখচ্ছবি থমকে দাঁড়ায় বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রিটের মোড়ে। ‘ইন্ডিয়ান কফি হাউস’ বোর্ডটা দেখে মাথার ভিতরে রণন তোলেন মান্না-গৌরীপ্রসন্ন-সুপর্ণকান্তি। ইতস্তত করে সে ঢুকেও পড়ে, সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় আর তার পরে নাগরিকতা তাকে লুফে নেয়। তার গ্রাম-মফস্সলের বাঁধনগুলো ছিঁড়ে যেতে থাকে। সে তখন নাগরিক। তাকে ঘিরে ধরে শহরের অমৃত-গরল। স্মৃতিকোষে তখন ঢেউয়ের পরে ঢেউ। সুনীল গাঙ্গুলি-শক্তি চাটুজ্যে-ভাস্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে পথ হাঁটেন মান্না দে-ও। কলকাতা আদর করে তাকে। অমৃত আর বিষের আদর। নাগরিক ক্যানভাসে যুক্ত হয় আরও একটা নতুন মুখ। সূত্র: এবেলা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার