হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি ইস্কুলে তখন ফেলোশিপ করছি। হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্টে। কী করে যে চোখের পলকে একটা বছর চলে গেছে। থাকতাম হারভার্ড ল ইস্কুলের উল্টোদিকে ৫০ ল্যাংগডন স্ট্রিটে, একটা তিনতলা বাড়িতে। সকাল হেঁটে চলে যেতাম কেনেডি ইস্কুলে। পথে হারভার্ড স্কোয়ারে থেমে কিছু ম্যাগাজিন নিউজপেপার দেখে নিতাম। বেশির ভাগ সময় কাটতো অফিসে, অথবা লাইব্রিরিতে। খেতাম হারভার্ডের কেন্টিনে অথবা আশেপাশের রেক্টুরেন্টে। বাঁদিকে ছিল সীফুড রেস্তোরাঁ। গেটের সামনেই ছিল একটা ইণ্ডিয়ান রেস্তোরাঁ। প্রায় বিকেলেই চলে যেতাম সাঁতার কাটতে।
বস্টনে বেশ কয়েকদিন গেছি। তখন বিখ্যাত জ্যাজ মিউজিসিয়ান স্টিভ লেসি বস্টনে থাকতেন। ইউরোপে থাকাকালীন স্টিভ আমার কবিতাগুলোকে গান বানিয়ে ১২ জন মিউজিসিয়ান নিয়ে গাইতেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ক্রাই নামে ওই 'জ্যাম অপেরা'র কনসার্টটা করেছেন। আমেরিকাতেও করেছেন। প্যারিস থেকে বস্টনে চলে এসেছিলেন, বস্টনের এক কনজারভেটরিতে মিউজিক শেখানোর কাজ নিয়ে। তখনই হয়েছিল স্টিভের লিভার ক্যানসার। দেখতে যেতাম। কোনওদিন যন্ত্রণায় কাতরাননি। মৃত্যু নিয়েও দুশ্চিন্তা করেননি। শেষের দিনগুলোতেও সোপ্রানো বাজাতেন। ঘরেই বাজাতেন। কিন্তু সুরগুলো দিনদিন বেসুরো হয়ে যাচ্ছিল। শুনে খুব কষ্ট হতো। কেমব্রিজে থাকাকালীনই এমআইটিতে গিয়ে নোয়াম চমস্কির সঙ্গে একবার আড্ডা দিয়েছিলাম। তখন তাঁর সঙ্গে চিঠিতেও বেশ কথা হতো। আমার আত্মজীবনীর চতুর্থ খণ্ড সেইসব অন্ধকার হারভার্ডে বসেই লেখা। আর তাছাড়া নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে হিউম্যান রাইটসএর ওপর যা লিখেছিলাম, আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড মাইকেল ইগনাটিফ বলেছিলেন, ওটা তিনি তাঁর ক্লাসে পড়াবেন। আমার জীবনের গল্প পড়াবেন হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে! ছবিগুলো দেখছি আর ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে।
(লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)