এক তসলিমা গবেষকের সঙ্গে দেখা হলো। নাম এম.কে.বহরা। থাকেন রাজস্থানের উদয়পুরে। আজ কুড়ি বছর যা্বৎ তিনি আমার বই পড়ছেন। এক বই একবার নয়, একাধিকবার পড়েন। যখনই আমার নতুন কোনও বই বেরোয়, তাঁর প্রধান কাজ সেই বই যোগাড় করা,পড়ে ফেলা এবং বই সম্পর্কে তাঁর মতামত লিখে ফেলা। তাঁর লেখা রিভিউ বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানো হয়। এসবের খবর রাখা খুব স্বাভাবিক কারণেই আমার হয়ে ওঠে না। উদয়পুর থেকে আমার সঙ্গে দেখা করার একটা সুযোগ মিললেও মিলতে পারে এরকম একটা আশ্বাস পেয়ে তিনি চলে এসেছেন। এর আগে আমি যখন জয়পুরে গিয়েছিলাম, খবর পেয়ে চলে এসেছিলেন দেখা করতে। এক দেড় মিনিট কথা হয়েছিলো হয়তো। এরপর ভোপালের 'ভারত ভবন' যখন আমাকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলো কয়েক বছর আগে, ছুটে গিয়েছিলেন সেখানেও। আদৌ কথা হয়েছিলো কি না মনে নেই। আমার সঙ্গে যোগাযোগের এ যাবৎ অনেক চেষ্টা করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন বারবার।
এম.কে.বহরার বয়স এখন ৭৬। এক চোখের জ্যোতি পুরো গেছে, আরেকটারও গেছে, বইয়ের ওপর রোদ পড়লেই শুধু কিছুটা পড়তে পারেন, নয়তো নয়। একটা লোক রেখেছেন, বই পড়ে শোনানোর জন্য। আমার শেষ দুটো বই হায়ার করা লোকই পড়ে শুনিয়েছে। কিন্তু নিজের লেখাটা এখনও অন্যকে দিয়ে করাতে অসুবিধে হচ্ছে। লেখায় খুব কাটাছেড়া করার অভ্যেস আছে কিনা। বললেন, তিনি ভেবে লেখেন না, বরং লিখতে লিখতে ভাবেন। এবার আমার ওপর তাঁর লেখা ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বই বেরোচ্ছে। সবচেয়ে মজার বিষয় যা দেখলাম, মুখস্ত বলে যাচ্ছেন আমার বই থেকে। লাইনের পর লাইন। প্যারার পর প্যারা। মুখস্ত বলে যাচ্ছেন কবিতা। আমার কোন বইয়ের কোন পাতায় কী আছে বলে যাচ্ছেন। আমার ভাবনা এবং বক্তব্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা শুনে মুগ্ধ হই। এরকমটা আগে তো আমার মনে আসেনি! তাঁর বাকি যেটুকু আয়ু আছে, সেটুকু ব্যয় করতে চান আমার বই পড়ে, একবার পড়ে নয়, বার বার পড়ে। আজ মনে হয়েছে আমার একটা পেনটিংএর সামনে দাঁড়িয়ে এক বোদ্ধা আর্ট-ক্রিটিক ঘন্টার পর ঘণ্টা বলে যাচ্ছেন পেনটিংটা নিয়ে। আমি তো পাখির চোখে পৃথিবীটা দেখি। আজ মনে হয়েছে কেউ পাখির চোখে আমাকে দেখছে।
(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ এপ্রিল, ২০১৫/ রশিদা