২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২২:২২

এই মানুষটার সাথে আমাকে নিয়ে একটা কথা টুকটাক শোনা যায়

মেহের আফরোজ শাওন

এই মানুষটার সাথে আমাকে নিয়ে একটা কথা টুকটাক শোনা যায়

প্রথম কেমোথেরাপি দেয়ার সময় নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং হাসপাতালে

এই মানুষটার সাথে আমাকে নিয়ে একটা কথা টুকটাক শোনা যায়। কথাটা বেশ অস্বস্তিকর। তার স্ত্রী আর আমি বিষয়টা নিয়ে চরম খুনসুটি আর হাসাহাসি করলেও আমাদের সাথে নতুন বন্ধুত্ব হওয়া কেউ কেউ একটু ইতং বিতং করে প্রসঙ্গটা তোলেন আর অপ্রস্তুত হয়ে বলেন ‘আহা! বাইরে থেকে কি ভুল ধারণা নিয়েই না ছিলাম!’

বলছিলাম আমার সবচাইতে কাছের প্রতিবেশী, হুমায়ূন আহমেদের পুত্রসম বন্ধু প্রকাশক Mazharul Islam ভাইয়ের কথা।

মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী Tanzina Rahman স্বর্না ভাবি আমার সবচেয়ে কাছের সহচর। দিনের মধ্যে ৩/৪ বার দেখা করে সারা দিনের প্যাঁচাল নিয়ে বকর-বকর না করলে আমাদের পেটের ভাত হজম হয় না।

‘ছুটা বুয়াটা ইদানিং খুব ফাঁকিবাজি করছে’
‘ছাদের গাছ থেকে টমেটোগুলো কে চুরি করে নিল!’
‘বাচ্চাগুলো জ্বালিয়ে মারছে’
‘ইশশশ কতদিন বেড়াতে যাই না!’
এসব আলাপ আমাদের রোজকার ডালভাত।
এই করোনাবন্দী সময়ে আমাদের আরেকটি অভ্যাস হলো ছাদে একসাথে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা তারপর বিছানায় আধশোয়া হয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলা-
“ভাল্লাগে না...”

এই অসাধারণ মানুষটির স্বামীর সাথে নাকি আমার প্রেম!!
হ্যাঁ...তার সাথে আমার প্রেম।

আমার কিশোরী বেলায় প্রণয়ের সময় আমি যখন হুমায়ূন আহমেদের সাথে ছেলে মানুষী রাগ করতাম। তখন তিনি বড় ভাইয়ের মতো আমার ভুল ভাবনাগুলো ধরিয়ে দিয়ে আমাকে শান্ত করতেন। উনি আমার আরেক মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া বড় ভাই- তার সাথে আমার ভাইয়ের মতো প্রেম।

কর্কট রোগের চিকিৎসা চলাকালে হুমায়ূন আহমেদের আপন ভাইদের যে দায়িত্ব ছিল সেই দায়িত্ব তিনিই পালন করেছেন। কখনও বাজার করে আনা তো কখনও তার হুমায়ূন ভাইয়ের পছন্দের খাবারটা রান্না করে ফেলা যেন কেমোথেরাপির পর তিনি একটু খেতে পারেন।

প্রায়ই রাতের বেলা এক বছরের নিনিতকে কোলে নিয়ে হেটে ঘুম পাড়াতেন যাতে করে আমি একটু বিশ্রাম পাই। হাসপাতালে হুমায়ূনের বিছানার পাশে একরাত আমি জাগি তো আরেক রাত তিনি জাগেন, আমার মতো করেই হুমায়ূন আহমেদের পা টিপে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেন। রক্তের সম্পর্ক না থেকেও তিনি হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই। আমি উনাকে দেবরের মতো ভালোবাসি।

নিনিত, নিষাদ আর আমার ছোট্ট পরিবারটি ছাড়া তাদের পরিবারের কোনো উৎসবই পূর্ণ হয় না! তাদের সব আনন্দের ভাগ যেন আমাদের না দিলেই নয়! তাদের ছেলেদু’টিও বড় ভাইয়ের মতই আগলে রেখেছে আমার নিনিত-নিষাদকে। নিনিত, নিষাদ আর আমি- আমরা তিনজনই তাদের পরিবারের সব্বাইকে অনেক অনেক ভালোবাসি...

প্রিয় মাজহার ভাই আপনার জন্মদিনে অনেক শুভ কামনা। যে স্নেহ আর সম্মানে আপনি আমাদের জড়িয়ে রেখেছেন তা শতগুণ হয়ে আপনার পরিবারকে ঘিরে রাখুক...

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর