২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ১০:৩৭

আমার দেখা ওয়ান ইলেভেন (পর্ব-৪)

অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু

আমার দেখা ওয়ান ইলেভেন (পর্ব-৪)

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও ডা. জাহানারা আরজু

সেদিন মূলত কম বয়সী মেজর দুজনই কথা বলেছিলেন। 

প্রথম প্রশ্ন, “আপনার ফাইলে দেখছি শেয়ারে অনেক লাভ করলেন। শুধু আপনাদেরই লাভ হয়। আমাদের তো হয় না।’’ 
বললাম, দেখুন Stock Exchange এর statement তো বানানো যায় না। তাছাড়া বুদ্ধি খাটিয়ে invest করা হয়েছে। 

মূলধন কোথায় পেলেন? বললাম সব তো আমার ট্যাক্স ফাইলে আছে। সম্পদের বিবরনী আপনাদের কাছে জমা দেয়া আছে। তারপরও বলতে বলল। 

মূলধন খুব সামান্যই ছিল। তার মধ্যে বিয়েতে উপহার পাওয়া সঞ্চয়পত্রগুলোর ১টা থেকে প্রথম পুরস্কার ছয় লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। এটা নিয়ে কত যে প্যাঁচাল করল, বলল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে কি আপনার হ্যান্ডসেক করা ছবি আছে? যখন টাকা নিচ্ছিলেন তখন? বললাম না ভাই, তবে আমার পাসপোর্ট সাইজ ছবি আর নাম ঠিকানা জমা দিয়েছিলাম ওই অফিসে। 

পরে আমার শেয়ারের ব্যবসা নিয়ে এক বন্ধুপত্নীকে ওরা ফোন করেছিল। ডিফেন্সের মেয়ে বলে তেমন কথা পেঁচাল না তার সাথে। 

তারপর জিজ্ঞেস করল পাপ্পু কে? আমার দেবর। তিনি কি করেন? ব্যাংকার। তপন কে? বললাম এলাকার নেতা। বারবার একই প্রশ্ন। 

তখনই মাসুদ তার সামনে রাখা আমাদের নাম লেখা ফাইলটি পড়তে চাইল। তারা অনুমতি দিল। আর মাসুদ জোরে জোরে রসিয়ে রসিয়ে পড়ল, 
“আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধূরী, তাঁর স্ত্রী ডাঃ জাহানারা আরজুর নামে গুথুমা চৌধূরী বাড়িতে এত বিঘা জায়গাতে সামনে পুকুর ও রাস্তা পেছনে কয়েকটা পুকুরসহ বিশাল একতলা বাড়ি করেছেন।” 

(যেটা আমার শ্বশুর বাড়ির ভিটা আসলে)। 

তো মাসুদের পড়ার ধরনের জন্যে নাকি তাদের বানানো কাহিনীর জন্যে ওইখানে ওই গুরুগম্ভীর পরিবেশে হেঃ হেঃ করে হেসে ফেললাম। পরে মনে পড়ল এই আজগুবি খবর কোন পত্রিকায় যেন ছাপানো হয়েছিল। সেটার উপর ভিত্তি করে তদন্ত! কী আশ্চর্য!

হেসে হেসেই বললাম, ‘‘ভাই ওই ভিটে বাড়ি তো আমার নামেও না আর আমার শ্বশুরের নামেও না।’’
তারপর তারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন যে পেয়ে যাচ্ছেন এক নতুন নাম। জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কার নামে ওই জায়গা আর বাড়ি। বললাম ওটা তো আমার দাদাশ্বশুরের নামে। তখনই মাসুদ বলল, না ভাবি, দাদার বাবার নামে। কারণ আমাদের সম্পত্তি তো ভাগ হয়নি। 

আসলে এটা আমার শ্বশুরবাড়ির প্রায় ৩০০/৩৫০ বছর পুরানো ১৫/২০ পুরুষের ভিটা। এত বছরের মধ্যে এটা কখনো আর বাড়ে-কমে নাই। আর এ পরিবারে পারিবারিক ভিটামাটি ঐতিহ্যগত কারণে বেচা কেনা হয় না বলে উত্তরাধিকারদের মধ্যে ভাগাভাগির প্রবণতা নাই বলেই বিয়ের পর থেকে শুনেছি।

যাই হোক ঘণ্টাখানেক পর ওখান থেকে বের হয়ে আসলাম। আসার পর আম্মা বললেন এতক্ষণ ধরে তোমার মাসুম ভাই ফরিদ চৌধুরী (ভাসুর যিনি সচিব ছিলেন) সংসদ এলাকার চারপাশে কয়েকবার চক্কর দিয়েছেন। সেজন্য আমি ভাইয়ার কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। 

চলবে…

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক : অধ্যাপক, কার্ডিওলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর