২৬ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৩৪

অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে ত্রিপুরা মহারাজার কাচারি বাড়ি

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে ত্রিপুরা মহারাজার কাচারি বাড়ি

ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ত্রিপুরা মহারাজার কাচারি বাড়ি। শহরের হবিগঞ্জ সড়কে ভূমি অফিসে ভেতর এই কাচারি বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন ভগ্নদশার সৃষ্টি হয়েছে। ভবনে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। খসে পরছে ছাদের পলেস্তারা। 

এই কাচারি বাড়িটি সংরক্ষণ করে এখানে একটি ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদ। এলাকার বিশিষ্টজনেরাও মনে করেন, ত্রিপুরা মহারাজার এই কাচারি বাড়িটি সংরক্ষণ করা জরুরি। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৯৮ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজা এই কাচারি বাড়িটি নির্মাণ করেন। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে পর্যায়ক্রমে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র মাণিক্য দেববর্মন বাহাদুর এবং আধুনিক ত্রিপুরার স্থপতি মহারাজা বীর চন্দ্র্র মাণিক্য দেববর্মন বাহাদুর ও তার ছেলে মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য দেববর্মন বাহাদুর ১৯০৯ সাল পর্যন্ত এই কাচারি বাড়ীতে এতদঅঞ্চলের খাজনা আদায় করতেন। পরবর্তীতে তাদের নিয়োগকৃত স্টেট ম্যানেজাররা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই কাচারি বাড়িতেই খাজনা আদায়  ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালান। 

প্রবীন শিক্ষক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য্য বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ত্রিপুরা মহারাজার কতৃত্ব শেষ হয়ে গেলে এই অঞ্চল চলে যায় পকিস্তান সরকারের অধিনে। তখন দীর্ঘদিন এই কাচারি বাড়িটি তালাবদ্ধ থাকে। এই কাচি বাড়ীর পাশেই ছিল রাজার প্রতিনিধির বাসভবন। ১৯৬০ সালে ইউয়ুব খান তার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনের জন্য কিছু কিছু থানায় ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা (সার্কেল অফিসার) নিয়োগ করেন। তখন শ্রীমঙ্গলে এই কাচারি বাড়িকে ডেভেলপমেন্ট অফিস বানানো হয়। আর পার্শ্বের বাসভবনে করা হয় রেভিনিউ সার্কেল অফিস। দেশ স্বাধীনের পর কাচারি বাড়ি থেকে ডেভেলপমেন্ট অফিস চলে যায় উপজেলায় (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস। আর রেভিনিউ সার্কেল অফিসকে করা হয় সিও রেভিনিউ। পরবর্তীতে সিও রেভিনিউ  নাম বদলে হয় উপজেলা ভূমি অফিস।  

তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিকট এই কাচারি বাড়িটি সংরক্ষণে দাবি জানিয়ে বলেন, অরক্ষিত ভাবে পরে থাকা কাচারি বাড়িটি শ্রীমঙ্গলের একটি প্রচীন ভবন। অনেক সৃতি জীবড়িত এই ভবনের সঙ্গে ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িত। দেশ-বিদেশের অনেক দর্শনার্থীরা আগ্রহ নিয়ে এই পুরনো ভবন দেখতে আসেন। 

সরজমিনে দেখা যায়, ভূমি অফিস ভবনে প্রবেশ পথে ডান পার্শ্বে পুরনো কাচারি বাড়িটি জরাজীর্ন অবস্থায় পরে আছে। দীর্ঘকাল ধরে অযত্নে পড়ে থাকায় প্রায় দেড় বিঘা জমির চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় ভাটল দেখা দিয়েছে।  ভাটল দেয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে মেঝে।  খসে পরছে ভবনের পলেস্তারা। দেবে গেছে ফ্লোর। ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ২০ ফুট প্রস্থে ভবনটিতে রয়েছে ৩টি কক্ষ। এসব কক্ষে নেই  দরজা জানালা। ভবনের দেয়ালে ছাদে গজিয়েছে বটসহ নানান বৃক্ষ।

বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা জানান, এই কাচারি বাড়ীটি ত্রিপুরা মহারাজার স্মৃতি, ঐতিহ্য ও তার রাজত্বকালের সাক্ষী। আদিরূপ অক্ষুন্ন রেখে ভবনটি পুনঃসংস্কার করা হলে একটি সুপ্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা হবে। আমরা ২০২১ সালে এই কাচারি বাড়ীতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার বলেন, এই কাচারি বাড়িটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থপনা। আমাদের অতীত ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। আমরা উপজেলা ও ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে এই ভবনটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করবো।  আর এই ভবনটি সংরক্ষণের জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট আবেদন করবো। 


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর