২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৪৩

বানিয়াচং মাতল ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসবে

জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ

বানিয়াচং মাতল ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসবে

পলো, বাঁশ দিয়ে তৈরি মাছ শিকারের এক ধরণের ফাঁদ। এক সময় পলো দিয়ে মাছ শিকার করা বেশ জনপ্রিয় ছিল গ্রাম বাংলায়। বিশেষ করে পৌষ-মাঘ মাসে বিল বা হাওরে দল বেঁধে কাছ শিকার করা হতো। যাকে বলা হয় ‘পলো বাইছ’ বা ‘পলো উৎসব’। জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এবং কালের পরিক্রমায় এখন সেই ‘পলো বাইছ’ হারিয়ে গেছে। 

তবে এখনো হারানো সেই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামবাসী। এরই ধরাবাহিকতায় শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বড়আন বিলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। যা বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেছে শত শত গ্রামবাসী। ‘পলো বাওয়া’ উৎসবে শুধু আতুকুড়া গ্রামবাসীই নয় মাছ শিকার করতে শনিবার ভোর থেকেই বিলের পাড়ে জড়ো হতে থাকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শৌখিন মাছ শিকারীরা।
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বড়আন বিলে আসতে থাকেন শত শত শৌখিন মাছ শিকারি। সকাল ১০টা বাজতেই কোমড়ে ও মাথায় গামছা বেঁধে পলো নিয়ে মাছ শিকারে ঝাঁপিয়ে পড়েন নানা বয়সের মানুষ। 

পলোর পাশাপাশি হাতাজাল, উড়াল জালসহ নানা ধরণের মাছ ধরার ফাঁদ নিয়ে হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন সবাই। আশপাশের গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে পেশাদার ও শৌখিন মাছ শিকারিরা ‘পলো বাওয়া’ উৎসবে অংশ নেন। দুপুর পর্যন্ত চলা এ উৎসবে শিকারিদের হাতে ধরা পড়ে বোয়াল, আইড়, শোলসহ নানা প্রজাতির দেশীয় বড় বড় মাছ। শিকারের মধ্যে অনেকেই মাছ ধরতে না পারলেও গ্রাম বাংলার হারানো এমন উৎসবে অংশ নিতে পেরেই খুশি।

মাছ ধরতে আসা শৌখিন শিকারিরা বলেন, এক সময় জেলার বিভিন্ন বিলে প্রতিবছর পৌষ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের আয়োজন করা হতো। কিন্তু দিন দিন নদী ও বিল ভরাট এবং দখল হওয়ার কারণে হারাতে বসেছে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন এই ঐতিহ্য। মাছ ধরার উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে নদী ও বিল রক্ষার দাবি মাছ শিকারিদের।
 
শৌখিন মাছ শিকারি রবিন্দ্র চন্দ দাস বলেন, একটা সময় পলো বাইচের গল্প শুনতাম। কিন্তু এবার তা নিজ চোখে দেখলাম এবং নদীতে নেমে হৈহুল্লোর করে সকলে এক সঙ্গে মিলে মাছ ধরলাম। অনেক আনন্দ হয়েছে। তিনি বলেন, কি মাছ পাইলাম অথবা না পাইলাম সেটা বিষয় নয়, আনন্দটা উপভোগ করেছি। একই কথা বললেন অপর মাছ শিকারি ফয়েজ মিয়া। তিনি জানান, আতুকুড়া গ্রামবাসী প্রতি বছর এমন আয়োজন করে। যা খুবই ভাল লাগে। মাছ ধরা উৎসবে যোগ দিতে পেরে আমি খুশি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আয়োজক কমিটির সদস্য সুমন আখঞ্জি বলেন, আমরা প্রতি বছর বড়আন বিলে ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের আয়োজন করে থাকি। এটা গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্য। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেটা হারাতে বসেছে। বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই আমাদের এমন আয়োজন। তিনি বলেন, প্রতি বছরই এমন আয়োজন করতে পেরে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরাও খুশি।
 
এদিকে, মাছ ধরা উৎসব শেষে অনেককেই দেশীয় প্রজাতির নানা ধরণের বড় বড় মাছ নিয়ে আনন্দে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। অনেক আবার বিলের পাড়েই মাছ বিক্রি করেছেন। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর