৩ মার্চ, ২০২৪ ১৬:৫৪

রমজান ঘিরে বগুড়ায় সেমাইয়ের খাঁচা তৈরির হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

রমজান ঘিরে বগুড়ায় সেমাইয়ের খাঁচা তৈরির হিড়িক

আসন্ন পবিত্র রমজানকে ঘিরে বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সেমাইয়ের খাঁচা তৈরিতে কর্মব্যস্থতা বেড়েছে কারিগরদের। সারা বছর তেমন তাদের কাজ না থাকলেও রমজানের এক মাস দম ফেলানোর সময় থাকে না। দিন-রাত চলে তাদের কর্মযষ্ণ। 

কারিগররা বলছেন, সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে কুটির শিল্পে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন। এদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বিপাকে খাঁচা তৈরির কারিগররা।  

জানা যায়, বগুড়া জেলার শাজাহানপুর, সদর উপজেলা, নন্দীগ্রাম, কাহালু ও সারিয়াকান্দিসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি খাঁচা তৈরির কারিগর রয়েছে। বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানিয়ে বিক্রি করে কোনো রকমে চলে তাদের সংসার। তবে রমজান এলেই বেড়ে যায় তাদের কাজের পরিধি। সেমাই তৈরির খাঁচা বানাতে দিন-রাত অবিরাম চলে তাদের হাত। 

জেলার অন্যান্য উপজেলার মধ্যে শিল্প পাড়া নামে পরিচিত বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার হিন্দুপাড়া। এখানে আদিকাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করেন এই গ্রামের সব বয়সের নারী পুরুষ। প্রায় ১৫০টি পরিবার তাদের বাপ দাদাদের এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের মধ্যে ঘরের ছাদ, সেমাইয়ের খাঁচা, চাটাই, ধান রাখার গোলা, ঘাসের খাঁচা, মুরগির খাঁচা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তবে সব কাজ বাদ দিয়ে এখন রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে সেমাইয়ের খাঁচা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। সেমাইয়ের খাঁচা তৈরির জন্য প্রথমে বাজার বা বিভিন্ন গ্রাম থেকে বাঁশ সংগ্রহ করা হয়। এরপর বাঁশগুলোকে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। কয়েকদিন ভিজিয়ে রাখার পর সিজনিং হওয়া বাঁশ পানি থেকে তুলে নিয়ে এসে সেগুলো দিয়ে সেমাইয়ের খাঁচা তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এ কাজে গ্রামের নারীরা খুবই পারদর্শী। তবে প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। বাঁশের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে খাঁচার দাম তুলনামূলকভাবে কম পাওয়ায় ভালো নেই এ পাড়ার কারিগররা। শুধুমাত্র নিজেদের বাপ দাদাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এ কাজ করছেন তারা।

শাজাহানপুর উপজেলার হিন্দুপাড়া গ্রামের সবিতা রানী জানান, সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেমাইয়ের খাঁচা তৈরির কাজ করেন। এ কাজে তার পরিবারের অন্যরা তাকে সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে এ কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

পাইকারি ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান জানান, প্রতিটি খাঁচা তিনি ২০ থেকে ২৫ টাকা করে কারিগরদের কাছে থেকে ক্রয় করেন। এরপর এগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় সেমাইয়ের কারখানায় সরবরাহ করেন। এভাবে প্রতিদিন তিনি আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার খাঁচা সরবরাহ করে থাকেন। 

শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভিপি সাজেদুর রহমান সাহীন জানান, নানা বিষয়ে তাদের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তবে এ শিল্প প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামের মানুষরা বাঁশের তৈরি এ শিল্পকে ধরে রেখেছেন। তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর