ভবিষ্যতে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেছেন, সরকার ও বিরোধী দল (বিএনপি) কেউ সঠিক পথে নেই। আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করতে হবে। দেশের মঙ্গল চিন্তা করে আলোচনা করতে হবে। একটা রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে হবে। সরকারকে তার রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একাত্তরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেদেশ অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে, সেটি সম্ভব নয়। বিরোধী দল (বিএনপি) গত দুই বছরে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল। বিরোধী দল কী করছে, সেটাও দেখার বিষয় বলে মনে করেন এই বিশিষ্ট নাগরিক। গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে এটিএন বাংলা ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি যৌথভাবে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে 'নির্বাচনী বিতর্ক' প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন। বিতর্কের বিষয় ছিল- বিরোধী জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতায় সরকারের আন্তরিকতা। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান বিভাগের উপদেষ্টা নওয়াজীশ আলী খান, বিএসবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন এম. কে. বাশার। উপস্থিত ছিলেন ইবাইস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. আরিফুর রহমান, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. শাজাহান প্রমুখ। সংসদীয় ধারার এই বিতর্কে অংশ নেয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (সরকারি দল) ও বিরোধী দল ছিল ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাণবন্ত এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়। অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেন, দেশে সরকারি দল ও বিরোধী দল একজন আরেকজনকে দোষারোপ করছে। এভাবে চলতে পারে না। অথচ সরকার একটা আইডল হতে পারত। দেশে সত্যিকারের সরকারি দল ও সত্যিকারের বিরোধী দল নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, তারা জনগণের সেবক। যদিও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা হয় না, যা বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যায় না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন হয়েছে। তবে অংশগ্রহণ একটু কম ছিল। যদিও একটা সরকারের পুরো ইতিহাস নির্বাচন নিয়ে থাকে। বর্তমান সরকারের ওপর বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থনৈতিক চাপ বড় কথা নয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খারাপ নয়। যেখানে আমাদের দেশে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ মাত্র দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে আমাদের রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অবস্থায় কোনো দাতা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় সরকারকে তার রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে।
খ্যাতিম্যান এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন এদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সাধারণ জনগণই এ দেশের গণতন্ত্রের মূল শক্তি। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের তাই অন্যতম দায়িত্ব দেশের জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।
যুদ্ধ করে এদেশে গণতন্ত্র আনতে হয়েছে। এত রক্তের পরে এভাবে দেশ চললে গণতন্ত্র বাঁচবে না। দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভবিষ্যতে সহিংসতা ছাড়া এমন একটি নির্বাচন করতে হবে যেখানে সব ভোটার নির্ভয়ে অংশ নিতে পারেন। তবে সেটি কীভাবে হবে, এটিই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর এ জন্য দলগুলোর মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বিরোধী দল বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সমঝোতার ক্ষেত্রে বিরোধী দলের কিছু ভুল ছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারেনি। বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে যদি কারচুপি হতো তবে পরবর্তীতে একটা বড় আন্দোলনের সুযোগ ছিল তাদের জন্য। তাদের আলোচনায় বসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ও বিরোধী দলকে দেখাতে হবে তারা আন্তরিক। গণতান্ত্রিক সরকারের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে জনগণের ম্যান্ডেট। গণতন্ত্রে প্রকৃত সরকার ও বিরোধী দলের ভাষা হবে জনগণের ভাষা।