বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
পাকিস্তান পরিস্থিতি

ছাড় দিতে নারাজ ইমরান, দিশা খুঁজছেন নওয়াজ

ছাড় দিতে নারাজ ইমরান, দিশা খুঁজছেন নওয়াজ

পাকিস্তানে রাজনীতিতে যে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে তার আপাতত কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। ইমরান খান এবং তাহিরুল কাদরির সমর্থকেরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে অনড় অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ করবেন না ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল দেশটির পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন শুরু হয়েছে। সংসদে বিরোধী দলের সমর্থন চেয়ে টালমাটাল রাজনৈতিক অবস্থার দিশা খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সংসদে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী খান বলেছেন, আন্দোলনের নামে ইমরান খান ও তাহিরুল কাদরি যা করছেন তা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, কয়েক হাজার মানুষের কাছে দেশ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। এর মধ্যে দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা। সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে কোনোভাবে সেনাবাহিনী ইমরান খানের আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে। এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দেশটিতে ক্ষণে ক্ষণে নানা গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে। আর এতে অনেকটা ঘি ঢেলেছেন ইমরান খানের দলের বহিষ্কৃত সভাপতি জাভেদ হাশমি। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা মতো ইমরান খান তার আন্দোলন কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। এ জল্পনার মধ্যে আইএসপিআর একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কিংবা তাহির উল কাদরির পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক (পিএটি) কাউকেই কোনো ধরনের সমর্থন দিচ্ছে না সেনাবাহিনী।  পাকিস্তানের এই টালমাটাল অবস্থায় অন্য প্রভাবশালী সুপ্রিমকোর্ট ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে। গতকাল সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোকে নোটিস দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট। তবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকলেও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকায় পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিককেও (পিএটি) নোটিস দেওয়া হয়েছে। এদিকে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এ আন্দোলন ৭২ ঘণ্টা আগে নতুন মাত্রা পায়। আন্দোলনকারীরা রাজধানী ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে রেড জোনে অবস্থান নেয়। তারা কয়েক দফায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দখলের চেষ্টা করে। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গত পরশু আন্দোলনকারীরা দেশটির জাতীয় টেলিভিশন ভবন দখল করে প্রায় ৪৫ মিনিট সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। গত চার দিনে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন ‘বিদ্রোহ’ নওয়াজের পাশে বিরোধী দল : পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকারের প্রতি বেশিরভাগ বিরোধী দল সমর্থন জানিয়েছে বলে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। পার্লামেন্ট গতকাল জরুরি অধিবেশনে দলগুলো এ সমর্থন জানায়। সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পিপিপি নেতা আইতাজ আহসান বলেছেন, ইমরান খান ও তাহিরুল কাদরি নারী এবং শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কথিত বিপ্লব করতে চাইছেন। কিন্তু তাদের এ প্রচেষ্টা সফল হবে না। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এটা কী ধরনের বিপ্লব?’ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘বিরোধী দল আপনার সঙ্গে আছে।’ পাখতুনখোয়া মিল্লি আওয়ামী পার্টির নেতা মাহমুদ খান আচাকজাই বলেন, ইমরান ও তাহিরুল কাদরি আন্দোলনের নামে যা করছেন তা নিতান্তই সন্ত্রাসবাদ। আজকের অধিবেশনে পিটিআই দলের বহিষ্কৃত সভাপতি জাভেদ হাশমিও যোগ দেন। অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেন, ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরি যে আন্দোলন শুরু করেছেন তা বিদ্রোহের শামিল। এটা পাকিস্তান ও রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান। তিনি আরও বলেন, কারও সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে দেশ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সুপ্রিমকোর্টের নোটিস : চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নোটিস দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিমকোর্ট। রাজধানী ইসলামাবাদে কনস্টিটিউশন এভিনিউতে পিটিআই ও পিএটির নেতা-কর্মীদের অবস্থানের বিরুদ্ধে দায়ের করা কয়েকটি আবেদনের শুনানি চলাকালে গতকাল এ নোটিস জারি করেন সুপ্রিমকোর্ট। পার্লামেন্ট ভবন এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্ট। আর চলমান সংকট নিরসনে সুপ্রিমকোর্টের কাছ থেকে বিক্ষোভকারী দলগুলো কী ভূমিকা আশা করে, এ বিষয়ে গতকাল জানতে চেয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে না সেনা : আইএসপিআর : পাকিস্তানের চলমান সংকটের পেছনে সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে এমন ধারণাকে নাকচ করেছে পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)। জিও টিভিতে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়, সোমবার আইএসপিআরের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কিংবা তাহির উল কাদরির পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক (পিএটি) কাউকেই কোনো ধরনের সমর্থন দিচ্ছে না সেনাবাহিনী। উল্লেখ্য, সেদিনেই সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, সেনাবাহিনী অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সেনাবাহিনী গণতন্ত্রকেই নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয়। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে সেনাবাহিনীকে এ ধরনের বিতর্কে জড়ানো হচ্ছে।
ক্ষমতাও ছাড়ছেন না, ছুটিও নিচ্ছেন না, ন্যাটো সম্মেলনে যোগও দিচ্ছেন না : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, তিনি ক্ষমতাও ছাড়বেন না, ছুটিও নেবেন না। গত পরশু ইসলামাবাদে দলের শরিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ ঘোষণা দেন। গতকাল পার্লামেন্টেও এই আভাস দেন। এদিকে গতকাল ডনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ও পরশু ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না। এর আগে তিনি তুরস্ক সফরও বাতিল করেন।
পিছু না হটার ঘোষণা ইমরানের : প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত পিছু না হটার কথা আবার বলেছেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান।

সর্বশেষ খবর