‘দুর্নীতিকে না বলুন’ শিরোনামে ক্যাম্পেইনে নেমেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক, সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। দেশ বাঁচাতে দুর্নীতিকে ‘না’ বলুন। একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক প্রতিরোধে অংশ নিন।
এ নিয়ে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে আজ রাজধানীর তোপখানা রোডে শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এক সভার আয়োজন করা হয়েছে। একইভাবে ২৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা অনির্বাণ চত্বরে দিনব্যাপী এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় সাংবাদিক, বিকাল ৫টায় আইনজীবী ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এ ছাড়া বিকাল ৩টায় রাজধানীর পান্থপথে সুশীল সমাজের সঙ্গে এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওয়ারী ও এর আশপাশ এলাকায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী লিফলেট বিতরণ করবেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। নিজের এ উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তার এ ক্যাম্পেইনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বাসদ, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। এ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের কর্মসূচিতেও তারা অংশ নিয়েছেন। আগামী দিনের কর্মসূচিতেও তারা থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘লাগামহীন দুর্নীতি, লুটপাট আমাদের আর্থ-সামাজিক বিকাশে বড় বাধা। দুর্নীতির কারণেই আমাদের জাতীয় অর্জন ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্নীতি ও লুটপাটে শেয়ারবাজার বার বার ধ্বংস হচ্ছে। এই আওয়ামী লীগের শাসনামলেই ২ লাখ কোটি টাকার বেশি লুট হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন অন্তত ৩৭ জন।’ তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলে বিবেচিত ব্যাংকিং সেক্টর খোকলা হয়ে গেছে। এ খাতে গত পাঁচ বছরেই প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও পুঁজি পাচার বন্ধ হয়নি। বিগত এক দশকে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে ১ হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৬২ শতাংশ বা ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সে বছর বাংলাদেশিদের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, লুটপাটে বিপর্যস্ত জনজীবন। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির পরও লোডশেডিংয়ে অন্ধকারে থাকতে হয়। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে প্রতি বছর সরকারকে ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দুর্নীতির কারণেই রাজধানীতে দুঃসহ যানজটে বিপর্যস্ত নাগরিক জীবন। দেশব্যাপী সড়ক পরিবহনে বিশৃঙ্খলা, ঘনঘন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণও দুর্নীতি। ফ্লাইওভার নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি কলকাতায় যেখানে খরচ ৪৮ কোটি টাকা সেখানে আমাদের হানিফ ফ্লাইওভারে খরচ হয়েছে ২১৪ কোটি টাকা। মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতি-অবহেলার কারণে দুর্দশার শেষ নেই। শিক্ষা খাতেও দুর্নীতির ছড়াছড়ি বলে দাবি করে মান্না বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার হাইব্রিড ফলাফল, ভর্তিবাণিজ্য, দলীয়করণ, বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য খাতেও ঘুষ-দুর্নীতির কমতি নেই। সমাজের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম হয়নি। ক্ষমতাসীন ও রাজনীতিকদের নীতিহীনতাও দুর্নীতি বলে দাবি করেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। তার মতে, ‘দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কারণেই অর্থ ও পেশিশক্তি গ্রাস করেছে প্রচলিত রাজনীতি। বেপরোয়া দুর্নীতির সামনে খোদ অর্থমন্ত্রীও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় বলেই ক্ষমতাশালী রাজনীতিক, সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী-পেশাজীবীদের মতো প্রশাসনেও দুর্নীতি অবাধ হয়ে উঠেছে। দুর্নীতি আমাদের সব অর্জনকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। তার পরও কারও টনক নড়ছে না। অথচ ভারতের নতুন সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দুর্নীতি রুখতে কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।’