বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
রাজাকের সঙ্গে বৈঠক আজ

বঙ্গবন্ধু থাকলে দেশ আগেই উন্নত হতো : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু থাকলে দেশ আগেই উন্নত হতো : প্রধানমন্ত্রী

গ্রান্ড হায়াত কুয়ালালামপুর হোটেলে গতকাল মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

মালয়েশিয়া সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে মালয়েশিয়ার আগেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র হতো। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে আয়োজিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সভায় এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকতেন এবং তার গৃহীত পদক্ষেপ যদি বাস্তবায়ন করা যেত, তাহলে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যেত। এটা হলে মালয়েশিয়ার বহু আগেই বাংলাদেশ একটা উন্নত দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে মর্যাদা পেত। তিনি আরও বলেন, যে দেশে যে দল ত্যাগ স্বীকার করে, সংগ্রাম করে স্বাধীনতা আনে সেই দল ক্ষমতায় থাকলেই কেবল দেশের উন্নতি হয়। এ ছাড়া উন্নতি হয় না, এটাই বাস্তবতা। আজকে মালয়েশিয়া এত এগিয়ে যেতে পেরেছে তার একটাই কারণ, যে দল বছরের পর বছর স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিল, তারাই ক্ষমতায় আছে। তাই মালয়েশিয়া এত উন্নত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতার মূল চেতনাকেই ধ্বংস করা হয়। গণতন্ত্রের পরিবর্তে আনা হয় মার্শাল ল। মার্শাল ল কখনো কোনো দেশে উন্নতি করতে পারে না। তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য মুষ্টিমেয় লোককে নানারকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে, অর্থ দিয়ে, ঋণখেলাপির কালচার চালু করে কিছু লোককে শক্তিশালী করে। মুষ্টিমেয় লোক ধনী হতে পারে, কিন্তু বৃহৎ জনগোষ্ঠী সেই সেবা পায় না।’
বাংলাদেশে হবে প্রোটন গাড়ির কারখানা : মালয়েশিয়ার গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রোটন বাংলাদেশে শিগগিরই তাদের গাড়ি তৈরির কারখানা স্থাপন করবে। এতে অনেক বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।  প্রোটনের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ আজ কুয়ালালামপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের এক সরকারি সফরে গতকাল মালয়েশিয়া পৌঁছলে মাহাথির মোহাম্মদ তার সঙ্গে সৌজন্যসাক্ষাৎ করেন। গ্র্যান্ড হায়াতের প্রধানমন্ত্রীর হোটেল স্যুটে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবর বাসসের।
বৈঠক আজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে রওনা দিয়ে বিকালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি আজ সকালে মালয়েশিয়ার শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন। দুপুরে বৈঠকে বসবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ নাজিব বিন তুন হাজি আবদুল রাজাকের সঙ্গে। দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে চার চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। তিন দিনের সফরের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে সকাল সাড়ে ১০টায় শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। বিমানটি স্থানীয় সময় বিকালে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (কেএলআইএ) অবতরণের পর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদবিষয়ক উপমন্ত্রী হাজি ইসমাইল আবদুল মুত্তালিব ও মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার এ কে এম আতিকুর রহমান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। দেওয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার। পরে মোটর শোভাযাত্রা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের একচি প্রতিনিধি দল।
বিনিয়োগ হবে ১১০০ কোটি রিঙ্গিত : মালয়েশিয়ার বার্তা সংস্থা বারনামার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি রিঙ্গিত বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে মালয়েশিয়া। ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় অবকাঠামো সম্পর্কিত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এস সামি ভেলু বলেছেন, বাংলাদেশে যেসব প্রকল্পে মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করবে, তার মধ্যে রয়েছে ৬০০ কোটি রিঙ্গিত ব্যয়ে কক্সবাজারে নির্মিতব্য ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ২৩০ কোটি রিঙ্গিত ব্যয়ে ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ প্রকল্প, ৭০ কোটি রিঙ্গিত ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৪০০ যাত্রীবাহী গাড়ি, ১৫০ কোটি রিঙ্গিত ব্যয়ে ক্রুড হ্যান্ডলিং ফ্যাসিলিটিজ প্রকল্প।
আবাসনসহ তিন প্রকল্পে বিশেষ আগ্রহ : সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হোটেল গ্রান্ড হায়াতের মিটিং রুমে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সামি ভেলু। প্রায় আধা ঘণ্টার এ বৈঠকে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে মালয়েশিয়ার বিশেষ আগ্রহের কথা জানান তিনি। বৈঠকে উপস্থিত থাকা পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, তিনটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রথমত, রাজধানীর অদূরে কামরাঙ্গীরচরে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন, চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি ক্রুড অয়েল হ্যান্ডলিং প্রকল্প ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে নতুন কোচ সংযোজন। কামরাঙ্গীরচরে বহুতল ভবন নির্মাণ করে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অঞ্চলে অন্তত ৪৩টি প্লটে এ ধরনের বহুতলবিশিষ্ট হাউজিং নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। এ হাউজিং প্রকল্পে যেন সহজ ও স্বল্প দামে সাধারণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের আবাসন পেতে পারে সে বিষয়েও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়েতে নতুন ৪০০টি কোচ সংযোজনের জন্য মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেন সামি ভেলু।
 

সর্বশেষ খবর