শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মন্ত্রী কিয়াওর সাক্ষাৎ

রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও নিরাপদে ফেরাতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সুই তিনদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। গতকাল দুপুর ১২টা ৪৮মিনিটে তাকে বহন করা থাই এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তিনি সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেন।

এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের  স্বদেশ ভূমি রাখাইনে মর্যাদার সঙ্গে ও নিরাপদে ফেরার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা সংকট অবসানে রাষ্ট্রপতি হামিদ কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি প্রত্যাবাসনের পরপরই রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনর্নিমাণ এবং তাদের জমি ও সম্পদ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্যও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ আস্থা অর্জনে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি সুস্পষ্টভাবে বলেন, বাংলাদেশ সব সময় সব দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কামনা করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সব সময় মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিশ্বাসী। রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পারস্পরিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নে কাজ করতে পারে। সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, এ জন্য রিসিপশন ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও কাজ করছে। মিয়ানমারের মন্ত্রী বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

আজ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক করবেন মিয়ানমারের এই মন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ দেওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান বন্ধ এবং সীমান্ত চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। মিয়ানমারকে সীমান্তে মাদকদ্রব্য উৎপাদন, চোরাচালান ও মাদকপাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলবে বাংলাদেশ। তিন দিনের সফরে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও সরকারের একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, বলিভিয়াসহ ১২টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা বর্বরতা অব্যাহত থাকায় মিয়ানমারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত এ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

সর্বশেষ খবর