বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে কিংবদন্তি চিলাভার্ট

ইউরোপের গতিতে ল্যাটিন ধরাশায়ী

ক্রীড়া প্রতিবেদক, মস্কো থেকে

ইউরোপের গতিতে ল্যাটিন ধরাশায়ী

গোলরক্ষক ও পেনাল্টি মাস্টার হিসেবে গত শতকের শেষদিকে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন প্যারাগুয়ের হোসে লুইস চিলাভার্ট। ফ্রান্স-বেলজিয়াম ম্যাচে হঠাৎ করেই তিনি চলে এলেন সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে। বাংলাদেশে তার অসংখ্য ভক্ত আছে শুনে, ছোট্ট একটা সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হলেন। চিলাভার্ট প্যারাগুয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। তিনটি কোপা আমেরিকাতেও ছিলেন। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে। জাতীয় দলের হয়ে গোলরক্ষক হিসেবে ৭৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ৮টি গোল। সবমিলিয়ে ৬৭টি গোল করেছেন তিনি ক্যারিয়ারে। গোলরক্ষক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার উপরে কেবল ব্রাজিলের রোজারিও সেনি। কথা হলো আধো আধো ইংরেজি জানা চিলাভার্টের সঙ্গে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনার কী মনে হয়, প্যারাগুয়ের মতো দল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারল না কেন?

চিলাভার্ট : ফুটবলের নতুন ধারাটা আগে বুঝতে হবে। ইউরোপীয়রা এখন এমন গতিশীল ফুটবল খেলছে, ল্যাটিন সৌন্দর্যটা আর লড়াইয়ে পারছে না। প্যারাগুয়ের বেশিরভাগ ফুটবলারই এখন ল্যাটিন ঘরানায় খেলে। অন্যদিকে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, কলম্বিয়ার ফুটবলাররা খেলছে ইউরোপীয় ঘরানার ফুটবল। এই কারণেই প্যারাগুয়ে বাছাইপর্ব পাড়ি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : চিলিও তো বিশ্বকাপ খেলতে পারল না। ওদের তো অনেকেই ইউরোপে খেলে। এর কারণ কী বলবেন?

চিলাভার্ট : চিলির বিষয়টা দুর্ভাগ্যজনক। ওরা কিন্তু খুব কাছাকাছি ছিল। বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা তাদের নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু শেষদিকের ব্যর্থতাগুলোই আর তাদেরকে বিশ্বকাপ খেলতে দিল না। কিন্তু চিলির বিশ্বকাপ খেলার উপর ইউরোপিয়ান ফুটবলের সফলতা-ব্যর্থতা ঠিক করা যাবে না। এবারের বিশ্বকাপেই দেখুন না, সেমিফাইনালের আগেই সব ল্যাটিন দল বিদায় নিল। এমনটা খুব কমই হয়েছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্যারাগুয়ের বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে কিছু বলবেন? ইউরোপের সঙ্গে লড়াইয়ে ওরা কবে ভালো করবে?

চিলাভার্ট : আমি মনে করি, প্যারাগুয়ে আবারও বিশ্বকাপ খেলবে। এর কারণ, গত অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপটা দেখুন। ওখানে কিন্তু ভালোই করেছে প্যারাগুয়ে। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে। তরুণ দলটা খুব ভালো করবে বলে আশাবাদী আমি। এই দলটাই আগামী বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলবে। তখন দেখবেন, অনেক কিছুই বদলে যাবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সান্তা ক্রুজদের পর কিন্তু প্যারাগুয়েতে তেমন কোনো তারকা ফুটবলারও দেখা যায়নি। এর কারণ কী?

চিলাভার্ট : (হেসে) সান্তা ক্রুজদের মতো ফুটবলার তো আর বছর বছর জন্ম হয় না। এমন ফুটবলার পেতে হলে ধৈর্য ধরতে হয়। ফুটবলটাকে লালন করতে হয় গভীরভাবে। আমরাও ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় আছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এবার বিশ্বকাপ নিয়ে বলুন। কেমন দেখছেন? ল্যাটিনরা যে সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিল, কেন?

চিলাভার্ট : বিশ্বকাপটা এবার দারুণ হলো। নতুন কিছু দল পুরনোদের বিদায় করে দিল। এটা কিন্তু ফুটবলের জন্যই ভালো। ফুটবল নিয়ে যে সবাই গভীর পরিকল্পনা করছে, নতুনদের উত্থান তারই প্রমাণ। আর ল্যাটিনরা তো ইউরোপের গতির কাছেই হেরে যাচ্ছে। ফুটবলের ল্যাটিন শিল্পের কোনো মূল্য নেই এখন আর। বলতে পারেন ইউরোপের ছন্দময় গতির কাছে ল্যাটিন শিল্প এখন অচল হয়ে পড়েছে। শিল্পের সঙ্গে গতিরও প্রয়োজন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিশ্বকাপ একেবারেই শেষ প্রান্তে। কাকে ফেবারিট মনে করছেন?

চিলাভার্ট : আমার বাজি ফ্রান্সকে নিয়েই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

চিলাভার্ট : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর