শিরোনাম
শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বঞ্চনামুক্তির জন্য কী করণীয় বলা ছিল ৭ মার্চের ভাষণে

সেমিনারে শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চের ভাষণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য কী কী করণীয় তা বলা হয়েছিল ৭ মার্চের ভাষণে। তার সেসব নির্দেশনা বাঙালি জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ : রাজনীতির কবির অমর কবিতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তৃতা করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানিদের শোষণের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সাল থেকেই সংগ্রাম শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তখন থেকেই জাতিকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত করেন। বঙ্গবন্ধুর তাঁর অভিজ্ঞতা থেকেই ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের সব দিকনির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে অনেকে অনেক রকম ব্যাখ্যা দেন। তখনকার ছাত্রনেতা এখন যারা জীবিত আছেন, আমি আজকেও একজনের ইন্টারভিউ দেখছিলাম। সেখানে কেউ নানাভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে দিচ্ছেন। এসব ব্যাখ্যা শুনলে হাসি পায়। এরা আসলে কতটা অর্বাচীনের মতো কথা বলছেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) নাকি ভাষণে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, উচ্চারণের সময় কোন কথাটা আগে বলবেন- মুক্তির সংগ্রাম নাকি স্বাধীনতার সংগ্রাম সেটাও নাকি ‘নিউক্লিয়াস’-এর সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছেন। এসব তথ্য ডাহা মিথ্যা কথা। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই যে একেকজন একেকটা ব্যাখ্যা দেন, আসলে তো, তা নয়। হ্যাঁ, ভাষণে যাওয়ার আগে অনেকেই দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, অনেকে অনেক পয়েন্ট তৈরি করেছেন, অনেকে বলেছেন এটা বলতে হবে, ওইটা বলতে হবে, এভাবে বলতে হবে, সেভাবে বলতে হবে, এটা না বললে হতাশ হয়ে ফিরে যাবে। নানা ধরনের কথার মধ্যে আমরা জর্জরিত ছিলাম। কাগজে-কাগজে অনেক কাগজ আমাদের বাসায় জমা হয়েছিল। শেষ কথা বলেছিলেন আমার মা। যে কথাটি আমি সবসময় বলি। আমার মা একটা কথাই বলেছিলেন, সারাটা জীবন তুমি সংগ্রাম করেছো, তুমি জানো বাংলাদেশের মানুষ কী চায় এবং তার জন্য কী করতে হবে। তোমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না। কাজেই তোমার মনে যে কথাটা আসবে, তুমি শুধু সেই কথাই বলবে আর কোনো কথা না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণে দেখবেন, তাঁর সামনে কোনো পয়েন্ট নেই, কোনো কাগজ নেই। কারণ তিনি তো সংগ্রাম করে গেছেন সেই ১৯৪৮ সাল থেকে। তখন থেকেই তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি জানেন, মুক্তির পথটি কোথায়, কীভাবে আসবে। তিনি যেসব ব্যবস্থা করে গেছেন, সেটাও তিনি জানেন। সেভাবেই তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যা বাঙালি জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, কিছু পেতে হলে ত্যাগ করতে হয়। আত্মত্যাগ ছাড়া কোনো কিছু অর্জন সম্ভব নয়। ১৯৪৮ সাল থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সে আন্দোলনের শেষ পরিণতি হিসেবে পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ। এর পেছনে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ । তিনি বলেন, ব্যক্তিজীবনে আমি কী পেলাম আর কী পেলাম না এ হিসাব করলে চলবে না। রাজনীতিতে এসেছেন দেশের মানুষের সেবা করতে। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম সেটাই বড় কথা। এটাই বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন।

তিনি বলেন, ’৭৫-এর পরে যুবসমাজ একসময় অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে একজন খলনায়ককে দাঁড় করানো হয়েছিল। তিনি নাকি কোন ড্রামের ওপর উঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্যসচিব শেখ হাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী মাসুদা হোসেন।

সর্বশেষ খবর