শর্তসাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমার রাজি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। গতকাল বিকালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আমরা নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত। ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়াও যারা দাদা, মা ও সন্তান এই তিনের অবস্থানের প্রমাণ দিতে পারবে, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। একইভাবে ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) অনুযায়ী যারা কাগজপত্র দেখাতে পারবে, তাদেরও নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’ মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে আরও বলেছেন, ‘দুই দিন ধরে এশাধিক বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের প্রস্তুতি সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের অবহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন দফার বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো জানা গেছে। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিন ক্ষেত্রে আলোচনা করার। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তা আবারও হবে। একই সঙ্গে আসিয়ানের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা হবে।
মার্চ মাসে দেওয়া আসিয়ানের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বিবেচনা করা হবে।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষের আলোচনার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত বৈঠক হবে ঢাকায় ফিরে।’ এর আগে দ্বিতীয় দিনের মতো মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি গতকাল সকালে কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পে যায়। টানা ২ ঘèার বেশি সময় ধওে বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের কাছে নিজেদের নানা দাবির কথা জানায় রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা বলেছে, নাগরিকত্ব, স্বাধীন চলাফেরার নিরাপত্তা প্রদান করলে তারা স্বদেশে ফেরত যাবে। মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের কথা শোনেন এবং রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার আহ্বান জানান। ফেরত গেলে তাদের দাবিগুলো বিবেচনা করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গারা। দুপুরে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গা হিন্দু ক্যাম্প পরিদর্শনে যায়। সেখানে রোহিঙ্গা হিন্দুদের সঙ্গে আলাপ করে। এ সময় হিন্দু রোহিঙ্গারা কোনো দাবি বা শর্ত ছাড়াই মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হয়েছে। তবে মুসলিম রোহিঙ্গাদের মতো খ্রিস্টান রোহিঙ্গাও নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলকে।উল্লেখ্য, মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল গত শনিবার কক্সবাজার পৌঁছায়। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং রোহিঙ্গাদের ৪০ জনের একটি দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আলাপ আলোচনা করেন তারা।
