রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোগান্তিতেও বাড়ি ফেরায় আনন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোগান্তিতেও বাড়ি ফেরায় আনন্দ

মানুষের চাপে ট্রেনে নাকাল অবস্থা। তারপরও বাড়ি ফেরার আনন্দ। গতকাল তোলা ছবি -রোহেত রাজীব

ছুটছে মানুষ ছুটছে। ট্রেন, বাস, লঞ্চে এমনকি নিজের মোটরসাইকেল নিয়েই বাড়ির পথে ছুটছে মানুষ ঊর্ধ্বশ্বাসে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপনের আশায় শত কষ্ট, দুর্ভোগ-যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে তবু মানুষ ঘরমুখো হচ্ছে। ট্রেন-বাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়া, পথে পথে যানজট, অন্তহীন দুর্ভোগ- কোনো কিছুই তাকিয়ে দেখার ফুরসত নেই কারও। যে কোনো মূল্যে, সব বাধা তুচ্ছ করে ঈদে বাড়ি যেতেই হবে। এত ভোগান্তিতেও বাড়ি ফেরাটাই আনন্দের হয়ে দাঁড়ায়।

ঈদের আগে শেষ মুহূর্তের বাড়ি ফেরায় মানুষজনের দুর্ভোগের শেষ নেই। এবার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি ট্রেন পাঁচ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে ছাড়ার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। স্টেশনে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। সড়কপথে পদে পদে ভোগান্তি, দুঃসহ যানজট, থেমে থেমে অতি ধীরে গাড়ি চলাসহ নানা অনিশ্চয়তায় ঘরমুখো মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। অন্যদিকে লঞ্চ রুটে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াতেও মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। গতকালও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকে কয়েক হাজার গাড়ি, দুর্ভোগ পোহান অসংখ্য যাত্রী। পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটেও পারাপারের ধীরগতিতে শত শত গাড়িকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। এবার ঈদযাত্রায় বিপর্যয়ে পর্যুদস্ত রেলওয়ে। প্রতিটি ট্রেনই কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে ৫ থেকে ১৩ ঘণ্টা দেরি করে। ফলে বাড়িমুখো যাত্রীদের খুশির ঈদযাত্রা রূপ নিয়েছে দুঃস্বপ্নে। স্টেশনে এসে বিপাকে আটকে পড়েন পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা যাত্রীরা। উত্তরবঙ্গগামী সব ট্রেনই ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে অনেকের ঈদে বাড়ি ফেরা। নির্ধারিত সময়ের ১০/১২ ঘণ্টা পর পর একেকটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো মাত্র হুড়মুড়িয়ে উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের। দীর্ঘ অপেক্ষায় ক্লান্ত যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে গিয়েও পড়েন বিপাকে। ভিড় ঠেলে কোনো মতে উঠতে পারলেই ফুটেছে মুখে হাসির রেখা। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকাল থেকেই হাজার হাজার যাত্রীর ভিড় জমে সারাদিন সেখানে অভিন্ন পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কয়েক শ যাত্রী নিয়ে একটি লঞ্চ সদরঘাট ছেড়েছে তো আরও কয়েক হাজার যাত্রী টার্মিনালে এসে অপেক্ষায় থেকেছে। প্রতিটি লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগে থেকেই টার্মিনালে এসেছেন যাত্রীরা। ভিড় ঠেলে স্ত্রী-সন্তান, ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে লঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছানোটাই বড় ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

বঙ্গবন্ধু সেতুর সর্বোচ্চ রেকর্ড : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে পাকুল্লা পর্যন্ত ১০টি পয়েন্টে অন্তত ৫০ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ এ সড়কে ধীরগতিতে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। যানজটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দূরপাল্লার যাত্রীদের। মহাসড়কের হাঁটুভাঙ্গা, মির্জাপুর, পাকুল্লা, নাটিয়াপাড়া, কদিমধল্লা, করটিয়া বাইপাস, নগরজালফৈই, রাবনা বাইপাস ও এলেঙ্গায় যানজট ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হচ্ছে। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে এযাবৎ কালের সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির জানান, শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে গতকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ হাজার ৩৩৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এটি এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড বলেও জানান তিনি।

৬ ঘণ্টার পথ ২০ ঘণ্টায় : বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঢাকা থেকে বগুড়ায় ৬ ঘণ্টার পথে ঈদযাত্রায় ২০ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। যাত্রীবাহী একাধিক বাসের চালকরা জানান, বগুড়া সড়কে তেমন কোনো যানজট নেই। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টোল দিতে হচ্ছে। সেখানেই ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লাগছে টোল দিতে। ঢাকা থেকে বগুড়া ফিরতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। সেখানে সময় লাগছে এখন ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা।

থেমে থেমে যানজট : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ছোট ছোট দুর্ঘটনা ও সরু-ঝুঁকিপুর্ণ সেতুতে ধীরগতির কারণে মহাসড়কে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীরা। সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় মহাসড়কে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের চাপ প্রচ । এ ছাড়াও যানবাহনের চাপ বাড়ায় গাড়ির বাম্পার টু বাম্পার লেগে কচ্ছপ গতিতে চলছে যানবাহন। মহাসড়কে শুক্রবার রাত ১১টা থেকে যানজট থাকলেও শনিবার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট কম দেখা যায়।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ভিড় : মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লোকজনের প্রচ  চাপ। সকাল থেকেই ঘাট এলাকায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো এসে জড়ো হন। ঘাট এলাকায় যানজট এড়াতে এক-দেড় কিলোমিটার দূরেই লোকাল বাসগুলো থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রচ  রোদে যাত্রীরা পায়ে হেঁটে ঘাট এলাকায় আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী স্বাভাবিক : মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী নৌরুটে শুক্রবার সকাল থেকে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও গতকাল সকাল থেকে গাড়ি পারাপারের অবস্থা ছিল সন্তোষজনক। ফলে এ ঘাট হয়ে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

ময়মনসিংহে ভোগান্তি : ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। পরিবহন সংকট ও দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করাসহ  যানজটের ভয়াবহ ধকল সহ্য করা যাত্রীদের নিয়তির বিধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর, হালুয়াঘাট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার গন্তব্যে ঘরমুখো মানুষ চরম ভোগান্তিতে।

সর্বশেষ খবর