শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই মেয়েসহ মাকে গলা কেটে হত্যা

থাপ্পড়ের প্রতিশোধ!

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

দুই মেয়েসহ মাকে গলা কেটে হত্যা

দুই শিশু সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মা ও তার দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন নাজনীন (২৮) এবং তার দুই মেয়ে নুসরাত (৬) ও খাদিজা (২)। ঘটনাস্থল থেকে নিহত নাজনীনের ভাগ্নি সুমাইয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একটা থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মা ও তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন ঘাতক আব্বাস।

গতকাল সকাল ১০টায় নাজনীনের স্বামী সুমন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাইনদী সিআইখোলার বাসায় এসে তাদের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। পরে তিনি তার শ্বশুর নিজামকে ঘটনাটি জানান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, মূলত পারিবারিক কলহের জের ধরেই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকায় আনোয়ারের ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন সুমন। সুমন সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাকে জোনাকি ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী। রাতে ডিউটি শেষে সকালে বাসায় এসে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি স্ত্রী নাজনীন (২৮) এবং দুই মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজার (২) লাশ দেখতে পান। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ, পরে ডিবি, পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ সিআইডি এবং সিআইডি ঢাকার ক্রাইমসিন বিভাগের সদস্যরা ঘঠনাস্থলে এসে নমুনা সংগ্রহ করেন। ঘটনাস্থল থেকে ধারালো ছুরি, পুতুল ও মুঠোফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আহত সুমাইয়া হাসপাতালে পুলিশকে বলেন, ‘আমার বাবা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। আমার বাবাই খালামণি নাজনীন বেগম এবং তার দুই মেয়ে নুসরাত ও খাদিজাকে হত্যা করেছেন। আমার বাবা মাদকাসক্ত। গতকালও তিনি আমাকে মারধর করেছেন। সে কারণেই গতকাল আমি ও আমার মা খালামণির বাসায় চলে আসি।’

নাজনীনের স্বামী সুমন বলেন, ‘আমি সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার জোনাকি পেট্রল পাম্পে রাতে ডিউটি শেষে গতকাল সকাল ১০টায় বাসায় ফিরি। ওই সময় বাসার দরজা খোলা ছিল। ভিতরে প্রবেশ করতেই স্ত্রী-সন্তানদের লাশ দেখতে পাই। আর দেখতে পাই আহত অবস্থায় আমার ভায়রার মেয়ে সুমাইয়া পড়ে আছে। পরে অন্য ভাড়াটিয়া, আত্মীয়স্বজন ও পুলিশকে খবর দিই।’ সুমাইয়ার বরাত দিয়ে সুমন জানান, গতকাল সকাল ৮টার দিকে আব্বাস তার ফ্ল্যাটে আসেন। ওই সময় বড় বোন ইয়াছমিনকে মারধর করা নিয়ে আব্বাসের সঙ্গে নাজনীনের বাদানুবাদ হয়। সুমন বলেন, তার বড় ভায়রা আব্বাসের সঙ্গে জেঠাস ইয়াছমিনের পারিবারিক কলহ চলছিল। মঙ্গলবার দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। ওই সময় আব্বাস তার জেঠাস ইয়াছমিনকে মারধর করেন। এ খবর পেয়ে আব্বাসের বাসায় গিয়ে আব্বাসকে মারধর করে শ্যালক হাসান। পারিবারিক কলহের কারণে বুধবার রাতে মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে ইয়াছমিন আমাদের বাসায় চলে আসে। বড় বোন ইয়াছমিনকে মারধরের কারণে একবার নাজনীন দুলাভাই আব্বাসকে থাপ্পড় দিয়েছিল। সেই থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতেই আব্বাস আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন।’ নাজনীনের ছোট ভাই হাসান বলেন, ‘প্রায়ই মাদক সেবন করে আমার বড় বোনের স্বামী আব্বাস মিয়া বাড়িতে এসে সবাইকে মারধর করতেন। এ ঘটনায় আমার ভাগ্নি সুমাইয়া বাড়ি থেকে পালিয়ে আমার বোন নাজনীনের বাসায় চলে আসে। পরে রাতের কোনো এক সময় তাকে নিতে আসেন তারা বাবা আব্বাস। আব্বাসই তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করে নিজের মেয়েকে কুপিয়ে আহত করেছেন।’ নাজনীনের বোন ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি আদমজী ইপিজেডে সুপ্রিম স্মার্ট নিটওয়্যার নামের একটি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করি। আমার স্বামী আব্বাস মিয়া মাদকাসক্ত। প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে মারধরের কারণেই আমি বুধবার রাতে ছোট বোন নাজনীনের বাসায় চলে আসি। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় আমি বোনের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাই। এরপর এই হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে।’ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক সাজ্জাদ রোমন জানান, মা ও দুই সন্তানসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার এবং আহত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে ছুরিকাঘাতে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহের পর সংবাদকর্মীদের ওই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।

জেলা পুলিশ লাইনসে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কারণ ব্যাখ্যা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, একটি থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতেই আপন শ্যালিকা ও তার দুই শিশুকন্যাকে কুপিয়ে হত্যা করেন ঘাতক আব্বাস। গতকাল বিকালে ঘটনার মূল হোতা ঘাতক আব্বাসকে আটকের পর রাত ৮টায় জেলা পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। পুলিশ সুপার জানান, শুধু একটি থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতেই নিষ্পাপ দুটি শিশু ও তাদের মাকে হত্যা করে ঘাতক। শুধু তা-ই নয়, ওই সময় ঘাতক আব্বাস নিজের প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) কুপিয়ে জখম করে। কিন্তু মেয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলে গুরুতর আহত হয়ে এখন চিকিৎসাধীন। তিনি জানান, ঘাতক আব্বাস একজন ইয়াবা আসক্ত। সকালে হত্যাকা- ঘটিয়ে ঘাতক আব্বাস সিদ্ধিরগঞ্জের একটি বিয়েবাড়িতে খানসামার কাজে যোগ দেন যেন ঘটনা আড়াল করতে পারেন। আটকের পর তিনি খুনের কথা অকপটে স্বীকার করেন। খুনের আরও তথ্য জানতে খুনির রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে পুলিশ সুপার নিশ্চিত করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর