মাকসুদুর রহমান, ক্যাসিনো বকুল, ল্যাংড়া জাকির। এরা ক্যাসিনো থেকে টাকা তুলতেন। তাদের পদের নাম ক্যাশিয়ার। দ্বিতীয় সারির এসব ক্যাশিয়ার এখন কোটিপতি। এদের মধ্যে মাকসুদুর রহমান ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। ক্যাসিনো কারবার, জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাকি দুজন টাকা তোলার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবেও কাজ করতেন। এদের নাম ক্যাসিনো কিং খালেদ ভূঁইয়ার জবানিতে ছাড়াও গোয়েন্দাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত যুবলীগের ২৫ নেতার মধ্যে নাম রয়েছে এদেরও। এরা প্রত্যেকেই এখন লাপাত্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত ছাড়াও মাকসুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তিনি যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ছবি কৃত্রিমভাবে নিজের পোস্টারে ‘সুপার ইম্পোজের’ মাধ্যমে যুক্ত করে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। সেই পোস্টার ভোলা থেকে ঢাকার অলিগলির সীমানাপ্রাচীর থেকে সদরঘাটের লঞ্চের গায়েও স্থান পেয়েছিল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হয়। আর এ কারণে শাস্তিস্বরূপ সংগঠন থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে এর পরও তিনি দমে থাকেননি। নিজেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে সমানে অপকর্ম করে বেড়াতেন। খালেদের সহযোগী হিসেবে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। সূত্র জানায়, যুবলীগের অন্য নেতার মতো মাকসুদও ক্যাসিনো কারবারের অন্যতম সদস্য। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অপরাধ কর্মের তথ্য দিয়েছেন খালেদ। ক্যাসিনো কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া খালেদ ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মাকসুদসহ ২৫ জনের নাম বলেছেন, যাদের সবাই ক্যাসিনোকান্ডের পাশাপাশি চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এদের মধ্যে মাকসুদ সম্পর্কে খালেদ বলেছেন, তিনি যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের এক প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে সব অপকর্ম করতেন। বলা চলে, ওই নেতার সব অপকর্মের একজন বড় সাক্ষী মাকসুদ। সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে মতিঝিলের ক্লাবপাড়া থেকে মাকসুদের হাত দিয়ে লাখ লাখ টাকা ওই নেতার হাতে যেত। প্রতি রাতে কমপক্ষে এক লাখ টাকা তিনি পৌঁছে দিতেন নেতার হাতে। আবার কোনো কোনো রাতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পৌঁছে দিতেন। এভাবে গত কয়েক বছরে শুধু মাকসুদের হাত দিয়েই ক্যাসিনো কারবারের কয়েক কোটি টাকা হাতবদল হয়েছে। মাকসুদ মূলত তার অঘোষিত ‘ক্যাশিয়ার’ ছিলেন বলে রিমান্ডে জানিয়েছেন খালেদ।
সেলিম প্রধানসহ তিনজন কারাগারে
মাদক মামলায় বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা সেলিম প্রধানসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। অপর দুজন হলেন রোমান ও আখতারুজ্জামান। গতকাল ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, চার দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুরে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আসামি পক্ষের আইনজীবীরাও জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত ৩ অক্টোবর চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র্যাব-১। পর দিন তার বাড়িতে দুটি হরিণের চামড়া রাখার অপরাধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী তাকে ৬ মাসের কারাদ দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।