বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

হুন্ডি সিন্ডিকেটেই সর্বনাশ

২০০ জনের তালিকা নিয়ে তদন্তে সিআইডি, বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার, বিদেশে কিনছেন হোটেল মোটেল ভবন ফ্ল্যাট

মির্জা মেহেদী তমাল ও মানিক মুনতাসির

হুন্ডি সিন্ডিকেটেই সর্বনাশ

দেশের হুন্ডি চক্র এখন অপ্রতিরোধ্য। চক্রটি প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে। পাচারের টাকায় সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হোটেল, মোটেল, ব্যবসায়িক লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, আবাসিক ভবন, ফ্ল্যাট কিনছেন। কোথাও কোথাও পুরো মার্কেটও কিনে ফেলেছেন এই চক্রের সদস্যরা। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেলের মতো ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতেও অর্থ পাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন পাচারকারীর তালিকায়। হুন্ডি কারবারি হিসেবে চিহ্নিত এমন প্রায় ২০০ জনের একটি তালিকা ধরে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা অর্থে তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া বিদেশ থেকে হুন্ডি হয়ে আসছে রেমিট্যান্সের বিপুল পরিমাণ অর্থ। একইভাবে রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই অর্থ বৈধপথে রেমিট্যান্স হিসেবে এলে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেমন শক্তিশালী হতো। তেমনি এই অর্থকে বিনিয়োগে আনা সম্ভব হতো। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাব থাকায় হুন্ডির মাত্রা কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা কার্যকর করায় কয়েক মাসে রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। এটাকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে আরও রেকর্ড সৃষ্টি হতো বলে মনে করেন তারা। একই সঙ্গে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী এবং যারা বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হুন্ডি কিংবা মানি লন্ডারিং উভয়ই অপরাধ। হুন্ডি চক্র দেশে ও বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয়। তবে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় হন্ডির মাত্রা অনেকটা কমে এসেছে বলে তিনি মনে করেন। সূত্র জানায়, পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কারসাজি করে যে অর্থ পাচার হয় সেই অর্থের অঙ্কটা উদ্বেগজনক। আর পাচার করা অর্থের বেশির ভাগই কানাডা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাই চলে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পাচারকারীরা টাকা পাচারে ওইসব দেশকে বেছে নিচ্ছে। সেখানে আবাসিক ভবন, জমি কেনা, হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসায় এসব টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেলের মতো ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতেও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। পাচারের টাকা যাচ্ছে বিদেশের নামি-দামি ক্যাসিনোতেও।

কেস স্টাডি-১ : দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসিবুজ্জামান (ছদ্মনাম)। সম্প্রতি তিনি মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ সুবিধা নিয়েছেন। এ সুবিধা পেতে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা মূল্যমানের রিঙ্গিত জমা রেখেছেন। এ ছাড়া নিয়ে গেছেন সারা জীবনের অর্জিত সব অর্থসম্পদ। আর এই পুরো টাকাটাই তিনি বের করে নিয়ে গেছেন হুন্ডির মাধ্যমে। হাসিবুজ্জামানের মতো শুধু মালয়েশিয়াতেই টাকা পাচারের মাধ্যমে এভাবে প্রায় তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন। সেসব দেশে হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের টাকায় তারা বিলাসী জীবনযাপন করছেন। গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনেকেই আবার পুরো পরিবারকে মাইগ্রেন্ট করেছেন।

কেস স্টাডি-২ : আবদুস সাত্তার (ছন্দনাম)। পুলিশের অপরাধী তালিকায় তার নাম দেখানো হয়েছে রাকিব। তিনি এক সময় বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স আইটেমের ব্যবসা করতেন। এখন তিনি দুবাইয়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। দুবাই থেকে আমদানি করা পণ্যের আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ হুন্ডির ও ওভারইনভয়েসের মাধ্যমে পাচার করেছেন। ২০০৯ সালে সেনা সমর্থক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুবাইয়ে পাড়ি জমান। এখন তিনি সেখানেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। মালিক হয়েছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, একশ্রেণির ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, আমদানিকারক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার- এমন অন্তত ২০০ ব্যবসায়ী হুন্ডি কারবারে জড়িত। যাদের নামের তালিকা ধরে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সরকারি মুদ্রানীতি অনুসরণ না করে এভাবে অর্থ স্থানান্তরের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সরকারি প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকেও সরকার বঞ্চিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যে কোনো উপায়ে হোক অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। অর্থ পাচার বন্ধ করতে না পারলে বিনিয়োগ বাড়ানো দুরূহ হবে। এ জন্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও নিবিড় তদারকি প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সামগ্রিক কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

বাণিজ্য কারসাজি : বাণিজ্য কারসাজি করে টাকা পাচারের তালিকায় বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্য কারসাজিতে বাংলাদেশ থেকে টাকা বেরিয়ে গেছে দুভাবে। একটি উপায় হচ্ছে, পণ্য আমদানির সময় কাগজপত্রে বেশি দাম উল্লেখ করে টাকা পাচার; আরেকটি হচ্ছে, পণ্য রপ্তানি করার সময় কাগজপত্রে দাম কম দেখানো। রপ্তানির সময় কম দাম দেখানোর ফলে বিদেশি ক্রেতারা যে অর্থ পরিশোধ করছেন, তার একটি অংশ বিদেশেই থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আসছে শুধু সেই পরিমাণ অর্থ, যে পরিমাণ দাম কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক সময় পণ্য আমদানি-রপ্তানির ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে খালি কনটেইনার আসা-যাওয়া করেছে, এমন উদাহরণও রয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটেগ্রিটি (জিএফআই) বলছে, ২০১৫ সালে বাণিজ্যে কারসাজির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। বাংলাদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় এ কারসাজি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রধান মাধ্যম হুন্ডি : অর্থ পাচারের প্রধান মাধ্যম এখন হুন্ডি। মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরাও বিদেশে অর্থ পাচার করে বাড়ি বানাচ্ছেন, জমি কিনছেন, কারখানা গড়ছেন। ব্যবসায়ীরা দেদার অর্থ পাচার করছেন আমদানি-রপ্তানির আড়ালে; আমদানি পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে আর রপ্তানি পণ্যের দাম কম দেখিয়ে। এজেন্টের কাছে রেমিট্যান্সের অর্থ জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আত্মীয়স্বজনের ঠিকানায় হুন্ডির টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জিএফআই জানায়, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে হুন্ডি চক্র এতটাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে যে, ব্যাংকিং বা অন্য যে কোনো মাধ্যমের চেয়ে অত্যন্ত দ্রুত এবং কোনো হয়রানি ছাড়াই তারা গ্রাহকের ঠিকানায় টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। অপরাধবিজ্ঞানীদের মতে, হুন্ডি টাকা পাচারের একটি ভয়ঙ্কর মাধ্যম। কেননা আমদানি বা রপ্তানির মাধ্যমে টাকা পাচার করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হয়। এর ফলে অপরাধীর পরিচয় একসময় পাওয়া যায়। কিন্তু হুন্ডিতে মূলত এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়। এটি পুরোপুরি চলে বিশ্বাসের ওপর। এখানে কোনো কাগজপত্রের লেনদেন হয় না। এ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার করা হলে পাচারকারীদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন। এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে টাকা স্থানান্তরে খরচ কম। এ কারণেই পাচারকারীরা হুন্ডিকেই পছন্দ করে বেশি। শুধু বাংলাদেশ থেকে টাকা যায় না, টাকা আসেও হুন্ডির মাধ্যমে। বৈধপথে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা থাকায় প্রবাসী শ্রমিকরাও হুন্ডির আশ্রয় নিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক জরিপে দেখা যায়, প্রবাসীরা বিদেশ থেকে দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান তার ৪০ শতাংশ আসে ব্যাংকিং চ্যানেলে। ৩০ শতাংশ আসে সরাসরি প্রবাসী বা তাদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে নগদ আকারে এবং বাকি ৩০ শতাংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে।

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও থাইল্যান্ডে। এর বাইরে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। সরকারের একাধিক সংস্থা এ নিয়ে তদন্তও করেছে। হুন্ডি সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তারা মনে করে, হুন্ডির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা পাচারের সিন্ডিকেট বন্ধ করা গেলে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূত্র জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক চক্র হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত তদন্তে সহস্রাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার এবং দেশে অর্থ আনার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করছেন। প্রাথমিক তালিকা পেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড প্রায় ২০০ ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত শুরু করলেও বেশি দূর এগোতে পারেনি। অর্থ পাচারের ঘটনায় দুই শতাধিক মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। এর মধ্যে বেশ কিছু মামলায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, আমদানিকারক, মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু পাচারকারীরা রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে সর্বাধিক অর্থ পাচার হয় চিকিৎসা খাতে। বিদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের বেশির ভাগ অর্থ হুন্ডিসহ অনানুষ্ঠানিক পন্থায় দেশের বাইরে নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে বিদেশে যান। এ কারণে বছরে ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ। বৈধভাবে এই অর্থ দেশের বাইরে যাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। এ সংক্রান্ত নীতিমালার জটিলতায় বিদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের বেশির ভাগ অর্থ হুন্ডিসহ অনানুষ্ঠানিক উপায়ে দেশের বাইরে যাচ্ছে। হুন্ডির মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হলেও দেশে আসছে নামমাত্র। প্রবাসীদের অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠান। গত বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের উদ্যোগে ‘অ্যাকসেস টু ফিন্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এতে দেশের ৬৪টি জেলার ২ হাজার ৮৭২ জন মানুষ অংশ নেন। তাদের মধ্যে রেমিট্যান্স গ্রহণ করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা ৩১৯ জন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট রেমিট্যান্স গ্রহীতার মধ্যে গড় হিসাবে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পান ৪.৯০ শতাংশ মানুষ। এ তথ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় সরকারের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায়। ওই প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তদন্ত প্রতিবেদন ও সন্দেহজনক লেনদেনের ৬৭৭টি প্রতিবেদন বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠায় বিএফআইইউ। এর মধ্যে হুন্ডিসংক্রান্ত লেনদেনের প্রতিবেদন ছিল ৬০৯টি। এসব সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে আবারও তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বৈধপথে রেমিট্যান্স বেড়েছে : এদিকে বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রবাসীরা এখন অনেক সচেতন। তারা অবৈধ পথ এড়িয়ে বৈধপথেই রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। হুন্ডির বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে এটার তো সঠিক কোনো পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনটেলিজেন্স বিভাগ এটা নিয়ে কাজ করে। এর বাইরে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এনবিআর এটা নিয়ে কাজ করে। তবে এটা বলা যায়, যেহেতু বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেড়েছে, শুধু বাড়েনি, নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এটা বলাই যায়, অবৈধ পথের (হুন্ডি) মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোর প্রবাহ কমেছে। তিনি বলেন, দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করা অপরাধ, যা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে। এই হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার ঠেকাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সব সময়ই তৎপর থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে হুন্ডির কোনো ইস্যু থাকে না। তবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার নিয়ে যারা কাজ করে, এর মধ্যে জিএফআই অন্যতম। তাদের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী অবশ্য আমাদের দেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ কমেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর