বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আন্দোলনটা না হলে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব বিলীন করে দিত

ইমদাদুল হক মিলন

আন্দোলনটা না হলে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব বিলীন করে দিত

ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের একটি ঘটনা। বাংলা একমাত্র ভাষা, যার জন্য বুকের রক্ত দিতে হয়েছে এবং সেটা বাংলাদেশের বাংলা ভাষা। ভারতেরও একটি অঞ্চলের ভাষা বাংলা। কিন্তু তাদেরকে রক্ত দিয়ে সেই ভাষা প্রতিষ্ঠা করতে হয়নি। ভাষা আন্দোলন-পরবর্তী আমাদের জীবনের আরেকটি বড় গৌরবের ঘটনা স্বাধীনতাযুদ্ধ। কিন্তু বাহান্নর ভাষা আন্দোলনটা না হলে যে ২৪ বছর পাকিস্তানিরা আমাদেরকে শাসন করেছে, ওই সময়টাতে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব ওরা বিলীন করে দিত। সে কারণে আমাদের ছেলেরা রাস্তায় নেমেছিল। বুকের রক্ত দিয়ে ভাষাটিকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। আর বাহান্নর ভাষা আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার বীজটিও বুনে দিয়েছিল সেই সময়ে। তার ফলে একাত্তরে এসে বাঙালি জেগে উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে বাংলা ভাষাটিকে দুর্বল করে দিতে। বাংলা ভাষায় লেখাপড়ার জায়গাটিকে দুর্বল করে দেওয়া। বাংলা ভাষার সাহিত্যকে দুর্বল করে দেওয়া। এ কাজগুলো হলে আমাদের সাহিত্যের ভিত্তিটা তৈরি হতো না। এতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত। বাংলা ভাষায় আমরা অনেক কালজয়ী সাহিত্য পেয়েছি। অনেক বড় বড় লেখক পেয়েছি। এ ভাষায় রবীন্দ্রনাথ জন্মেছেন। নজরুল জন্মেছেন। জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমান জন্মেছেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হকের মতো বড় মাপের লেখক পেয়েছি। তবে একজন লেখক হিসেবে বাংলা সাহিত্য নিয়ে আমার সন্তুষ্টি ও হতাশা দুটোই আছে। আরও অনেক বড় মাপের লেখক আমরা পেতে পারতাম। সেই জায়গায় একটু ঘাটতি আছে। তবে আমি আশাবাদী। অনেকেই ভালো লিখছেন। সাহিত্য এমন একটি ব্যাপার যা কেউ রাতারাতি বুঝতে পারবে না। সাহিত্য একটা চর্চার জায়গা। সাহিত্যকে বুঝতে সময় লাগে। এখন যারা লিখছেন, আগামী পাঁচ-সাত-দশ বছরের মধ্যে হয়তো দেখব একঝাঁক বড় লেখক দাঁড়িয়ে গেছেন। তবে সাহিত্যের জায়গাটিতে আমরা যেভাবে এসেছিলাম এখন অনেকেই সেভাবে আসছেন না। আমরা শুরুতে সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাহিত্য পাতায় বহুদিন ধরে লিখেছি। সম্পাদকরা আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। সাহিত্য সম্পাদকরা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এ শিক্ষাটি পরবর্তীতে আমাদের কাজে লেগেছে। আমার প্রথম লেখা বের হয় ১৯৭৩ সালে। বই বের হয় ’৭৭ সালে। এই কয়টি বছর আমি ক্রমাগত লিখে গেছি বিভিন্ন পত্রিকায়। এতে চর্চার পাশাপাশি আমি সাহিত্যটা বুঝতেও পারলাম। এখন দেখা যাচ্ছে, কেউ একটা লেখা লিখলেন, একজন প্রকাশককে ২০-২৫ হাজার টাকা দিয়ে বইটা প্রকাশ করে ফেললেন। হয়তো বইটি বইমেলায় দু-এক শ কপি বিক্রি হলো। তাতেই তিনি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন এবং ক্রমাগত বই বের করতে লাগলেন পকেটের টাকা খরচ করে। আদৌ সেই লেখা ভালো হচ্ছে কিনা তার কোনো বিচার হচ্ছে না। তিনি নিজেও ধরতে পারছেন না। এটা সাহিত্যের ক্ষতি করছে। এজন্য যারা লিখবেন তাদেরকে আগে সাহিত্য পাতাগুলোয় লেখা দরকার। সাহিত্য পত্রিকাগুলোয় লেখা দরকার। সাহিত্যের যারা ভালো সম্পাদক আছেন তাদের পরামর্শ নেওয়া দরকার। তাহলে সাহিত্যটা এগোবে। বইমেলা চলছে। আমি ফেব্রুয়ারি বইমেলার সময় একটি কথা সব সময় বলি- বই পড়তে হবে। বইয়ের আলোয় জীবনটাকে আলোকিত করতে হবে। জীবন আলোকিত না হলে দেশ আলোকিত হবে না। তাই আমরা যেন প্রত্যেকে সন্তানের হাতে, প্রিয়জনের হাতে বই তুলে দিই। অপ্রিয়জনের হাতেও যেন বই তুলে দিই যাতে সেই মানুষটিও বইয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন, জীবন ও দেশ সম্পর্কে সচেতন হন এবং মানুষ নিয়ে যেন ভাবেন। লেখক : কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক। অনুলেখক : শামীম আহমেদ।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর